একদফা আন্দোলনে এবি পার্টির সংহতি: শুক্রবার মিছিল-সমাবেশ

একদফা আন্দোলনে এবি পার্টির সংহতি: শুক্রবার মিছিল-সমাবেশ

প্রথম নিউজ, ঢাকা : সরকার পতনে বিএনপি ঘোষিত একদফা আন্দোলনের প্রতি সংহতি ও রাষ্ট্র মেরামতের অঙ্গীকারসহ ঘোষিত দুইদফার ভিত্তিতে সব দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। একইসঙ্গে আগামী শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাজধানীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

বুধবার (১২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিজয় নগরে দলীয় কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেওয়া হয়। 


সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী। এসময় দলের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। 

স্বাগত বক্তব্যে এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবির এবি পার্টি সংহতি প্রকাশ করছে। সেইসঙ্গে এবি পার্টি রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নে সব দলের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। আগেও কেবল সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি, ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি রাষ্ট্র মেরামতে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

একদফা আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আগামী শুক্রবার রাজধানীতে বিক্ষোভসহ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, গতবছরের ডিসেম্বরে এবি পার্টির পক্ষ থেকে দুইদফা দাবিতে আমরা আন্দোলন শুরু করেছিলাম। আমাদের সেই দুই দফা ছিল অবৈধ সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ-নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, রাষ্ট্র মেরামত ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা।

তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সাল থেকে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলার কারণে রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে আজ জবাবদিহিতাবিহীন ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের মাথা আজ এতটাই নত হয়ে গেছে যে, আমাদের গণতন্ত্র, ভোট ব্যবস্থাপনা ও মানবাধিকার ইত্যাদির কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের স্যাংশন ঝুলে। প্রশাসনিক যন্ত্র এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে নিবর্তনমূলক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এবি পার্টি  সবসময় প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে এসেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের মানুষের মতামত ও দাবিকে উপেক্ষা করে দমন-নিপীড়ন চালানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগকেও উপর্যুপরি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে। আজ দুঃখ ও হতাশার পুঞ্জীভূত ক্ষোভে জন-মানুষের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে আমরা আমাদের দুইদফা দাবির পাশাপাশি 'অবিলম্বে বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ ও একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন'র ‘একদফা’ দাবির প্রতি সংহতি ঘোষণা করছি।

আগামী শনিবারে (১৫ জুলাই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সফররত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এবি পার্টির বৈঠকে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শামিল না হয়েও চলমান আন্দোলনে স্বতন্ত্র অবস্থান প্রসঙ্গে মজিবুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সংগ্রামরত সব রাজনৈতিক শক্তিকে একযোগে রাজপথে নামতে হবে। আমরা অধিকার সচেতন একটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের স্বতন্ত্র ধারা গড়ে তুলতে চাই। তাই অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ও গণতন্ত্রের চলমান সংগ্রামের এই পর্বে কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে স্বাধীনভাবে সবার অংশগ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি। ফলে আমাদের দল নিজস্ব নীতি ও পরিকল্পনার আলোকে আগেও মতো স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে একদফার প্রতি সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি দুইদফা দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।

আগামী শুক্রবার বিকেল ৩টায় বিজয়-৭১ চত্বরে এবি পার্টির বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নতুন ধারার আন্দোলনের সূচনার আশা জানিয়ে দলের এই নেতা বলেন, এই ফ্যাসিবাদী সরকারের জুলুম এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকার রক্ষায় এবি পার্টি জীবন বাজি রেখে লড়াই চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও গায়েবি মামলায় আটক সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানান তিনি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএম নাজমুল হক, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব আনোয়ার সাদাত টুটুল, আব্দুল বাসেত মারজান, প্রকৌশলী মোহাম্মদ লোকমান, যুবনেতা শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, মেহেদী হাসান চৌধুরী পলাশ, ফিরোজ কবির, মোহাম্মদ প্রিন্স, কেফায়েত হোসেন তানভীর, আলী নাসের খান, আব্দুল হালিম নান্নু, সুমাইয়া শারমিন ফারহানা, আমেনা বেগম, ফেরদৌসী আক্তার অপি, সুলতানা রাজিয়া, শিলা আক্তার, প্রকৌশলী নুর মোহাম্মদ, জামিল আব্দুর রব, আব্দুল মান্নানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।