কাশ্মীরে হামলা: সৌদি, ইরান, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র যে বার্তা দিল

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ভারত-শাসিত কাশ্মীরে মঙ্গলবারে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হওয়ার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, সৌদি আরব ইরান, ইসরাইল – সকলেই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে ভারতের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন। ঘটনার সময়ে সৌদি আরব সফরে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সফর কাটছাঁট করে বুধবার ভোরে তিনি ভারতে ফিরে এসেছেন।
দেশে ফেরার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির ফোনে কথা হয় বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়াও এখন ভারত সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স তিনি মঙ্গলবারই নিজের এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘উষা এবং আমি ভারতের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানাই। গত কয়েকদিনে আমরা এই দেশ এবং দেশের মানুষের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে গিয়েছি। এই ভয়াবহ হামলার পরে তারা যখন শোক পালন করছেন, তাদের সঙ্গে আমরাও প্রার্থনা করছি।’
মোদি-ট্রাম্পের কী কথা হল?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে কী কথা হয়েছে, তা জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। জয়সওয়াল তার এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং এই জঘন্য হামলার অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গেই লড়াই করছে। এর আগে সামাজিক মাধ্যম 'ট্রুথ'-এ ট্রাম্প লিখেছিলেন, কাশ্মীর থেকে অত্যন্ত দুঃখজনক খবর আসছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশেই রয়েছে। আমরা নিহতদের আত্মার শান্তি ও আহতদের আরোগ্য কামনা করছি। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং ভারতের জনগণের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন এবং গভীর সহানুভূতি রয়েছে।
সৌদি আরব এবং ইরানের প্রতিক্রিয়া
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই ‘ভয়াবহ হামলার’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং হতাহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতও এই হামলাকে অপরাধমূলক কাজ বলে অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি দিয়ে ‘ভারত সরকার এবং এই জঘন্য হামলায় নিহত, আহত ও তাদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি’ প্রকাশ করেছে। ভারতে অবস্থিত ইরানি দূতাবাসও একটি বিবৃতি জারি করে এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দিল্লিতে অবস্থিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের দূতাবাস জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার তীব্র নিন্দা করছে, যাতে বহু নিরীহ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। নিহত ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে দূতাবাসের পক্ষ থেকে। মঙ্গলবার যখন এই হামলার খবর আসে, তখন প্রধানমন্ত্রী মোদি জেদ্দায় ছিলেন। সেখানে মোদির সঙ্গে দেখা করেন মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ইসা।
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানাচ্ছে, তিনি এই ‘ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলায়’ নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল-ইসা লিখেছেন, আজ আমি জেদ্দায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমরা পারস্পরিক স্বার্থ, সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে কথা বলেছি। ভারতের বৈচিত্র্য এবং সেখানে শান্তি সম্মেলন করার চিন্তাভাবনা নিয়েও আলোচনা করেছি।
নেতানিয়াহু ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলাকে বর্বরোচিত হামলা আখ্যা দিয়ে ভারতের পাশে থাকার কথা বলেছেন। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, আমার বন্ধু নরেন্দ্র মোদি, জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে বর্বরোচিত সন্ত্রাসবাদী হামলায় আমি গভীরভাবে শোকাহত, যে হামলায় কয়েক ডজন নিরীহ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। হতাহত ও তাদের পরিবারের জন্য আমাদের সমবেদনা এবং প্রার্থনা রইল। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে রয়েছে ইসরাইল। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এই হামলাকে ‘ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়েছেন।
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে ‘বর্বরোচিত’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া এক পোস্ট জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, এই কঠিন সময়ে জার্মানি ভারতের পাশে রয়েছে এবং হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এক্স-এ লিখেছেন, কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা খুবই ভয়াবহ। হতাহত এবং তাদের পরিবার এবং ভারতের মানুষের প্রতি আমার সমবেদনা।