গোয়ালন্দে ৭ গ্রামের মানুষের ভরসা বাঁশের সাঁকো
গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীর শাখা কাটাখালি-দৌলতদিয়া নদীর ক্যানেলের ওপর নির্মিত ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে গেছে।

প্রথম নিউজ, রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীর শাখা কাটাখালি-দৌলতদিয়া নদীর ক্যানেলের ওপর নির্মিত ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। আর এই নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ৭ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
জানা গেছে, ১০ বছর আগে সাত গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য পদ্মা নদীর শাখা ক্যানেল ঘাট এলাকায় বাঁশের সাঁকোটি নির্মিত হয়। এরপর থেকে স্থানীয়রা জোড়াতালি দিয়ে সাঁকো সংস্কার করে ব্যবহার করে আসছে। প্রতিদিন এই সাঁকো দিয়ে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১ নং বেপারী পাড়া, সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়া, লালু মন্ডলের পাড়া, নতুন পাড়া, ইদ্রিস পাড়া, নাসির সরদারের পাড়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সী বাজার এলাকার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গেলে সেটি কাঁপতে থাকে। সাঁকোর অনেক স্থানে বাঁশের খুঁটি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ভগ্নপ্রায় সাঁকো দিয়ে কষ্ট করে সাবধানতা অবলম্বন করে পারাপার হচ্ছে মানুষ। তবে স্থানীয় কৃষকরা কৃষি পণ্য নিয়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না। এতে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সাঁকো পার হওয়া বড় সিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুবর্ণা আক্তার বলেন, সাঁকোটি নড়বড়ে হওয়ার কারণে পার হতে ভয় লাগে। গত বছর বন্যার সময় সাঁকোর ওপর থেকে পানিতে পড়ে একটি শিশু মারা গিয়েছিল। এখানে একটা সেতু নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন।
ইদ্রিস পাড়ার বাসিন্দা আইজুদ্দিন প্রামাণিক বলেন, এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেওয়া ছাড়া কোনো উদ্যোগ নেয়নি। নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনে জেতার পর কারও আর মনে থাকে না। ভারী কোনো মালামাল নিয়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করা যায় না।
স্থানীয় ইকলাস শেখ বলেন, একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। সব এলাকার উন্নয়ন হলেও আমাদের এখানে হয় না। শুধু একটি সেতুর অভাবে পিছিয়ে যাচ্ছি। দৌলতদিয়া ইউনিয়নের মুন্সী বাজার এলাকার বাসিন্দা কফিল উদ্দিন বলেন, আমাদের মতো বয়স্কদের এই সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়। নড়বড়ে এই সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে গেলেই তা কাঁপতে থাকে। ভারী কোনো কিছু নিয়ে এই সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করা যায় না। আমাদের দাবি, দ্রুত এখানে একটি ব্রিজ করা হোক।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য আয়ুব আলী খান বলেন, এখানে সেতু না থাকায় দীর্ঘ দিন ধরে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দ্রুত সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানাচ্ছি। দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, এলাকাবাসী এখানে একটি ব্রিজ তৈরির দাবি করছে দীর্ঘ দিন ধরে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোস্তফা মুন্সী বলেন, জনগণের দুর্ভোগ দূর করতে এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী বাঁশের সাঁকোর জায়গায় ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী মো. বজলুর রহমান জানান, আমরা প্রায় ৬ মাস আগে সয়েল টেস্ট করে সেখানে ৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বরাবর পাঠিয়েছি। এতে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। নদীভাঙন নিয়ে একটা শঙ্কা ছিল। কিন্তু মূল পদ্মাপাড় সংরক্ষণ প্রকল্প পাশ হয়ে যাওয়ায় ভাঙনের শঙ্কা নেই। আশা করছি ব্রিজের প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়ে যাবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews