চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিল জালিয়াতি: মূলহোতাকে বাদ দিয়ে দুদকের মামলা

 চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিল জালিয়াতি: মূলহোতাকে বাদ দিয়ে দুদকের মামলা

প্রথম নিউজ, চট্টগ্রাম : আড়াইশ শয্যার চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিল জালিয়াতির আলোচনাটি পুরোনো। তবে এ ঘটনা নতুন করে আলোচনায় এসেছে দুদকের করা মামলা নিয়ে। বিল জালিয়াতির ওই ঘটনায় হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে বলে জানান দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। পরে ওই ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তিনজন, হাসপাতালের হিসাবরক্ষক এবং তত্ত্বাবধায়কসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন এ ঘটনার যে মামলার অনুমোদন দিয়েছে তাতে মূলহোতা, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ১১ আগস্ট মামলাটি রেকর্ড হয় দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ।

এ নিয়ে মামলার বাদী ও অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এনামুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমি ঘটনায় জড়িত থাকায় ৫ জনকে আসামি করে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। কমিশন ৪ জনের নামে মামলার অনুমোদন দিয়েছেন। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে মামলাটি হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।

আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল এবং দুদকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) আটটি শয্যা, ভেন্টিলেটর ও কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটরসহ প্রায় ১৫ কোটি টাকার চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল। ঠিকাদার যন্ত্রপাতি সরবরাহের পর সেগুলো মানসম্মত না হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে সমালোচনা তৈরি হলে কিছু যন্ত্রপাতি সংযোজন ছাড়াই দীর্ঘদিন হাসপাতালের গোডাউনে ফেলে রাখা হয়। এরমধ্যে ৮টি আইসিইউ বেড, ৮টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর এবং একটি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর। এসব যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে ঢাকার পল্লবীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ।

পরবর্তী সময়ে এসব যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়ম অনুসন্ধানে দুর্নীতির সত্যতা পায় দুদক। যন্ত্রপাতি ক্রয়ে প্রায় ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সে সময়ের সিভিল সার্জন (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী, হাসপাতালের তিন ডাক্তার এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চারজনসহ আটজনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন।

এরপর ২০২০ সালের শুরুতে দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে ১০০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড ঘোষণা করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এসময় সারাদেশে আইসিইউ সংকটের মধ্যে ওই হাসপাতালের গোডাউনে পড়ে থাকা যন্ত্রপাতিগুলো জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। পাশাপাশি ওই সময়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী (বিগত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী) এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সভাপতি করে গঠিত একটি কমিটি ২০২০ সালের ১৯ মে আলোচনার মাধ্যমে এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দেন। যথারীতি এসব যন্ত্রপাতি জেনারেল হাসপাতালে সংযোজন করা হয়।

এ সুযোগে এসব যন্ত্রপাতির বকেয়া থাকা ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল দাবি করে ঠিকাদার। ঠিকাদারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিলের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ‘ব্যয় মঞ্জুরি’ প্রদান করা হয়নি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ দেন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। এর আগে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের দায়িত্বে।

এদিকে ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল পরিশোধের জন্য ব্যয় মঞ্জুরিপত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তারপরও মন্ত্রণালয় ব্যয় মঞ্জু্রিপত্র না দিলেও ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যেই ঠিকাদারকে বিল পরিশোধে উদ্যোগী হন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। ২০২২ সালের ২৮ জুন বিলটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ অফিসে উপস্থাপন করা হয়। বিলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয় একটি ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র। ওই বিলটিতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে একক সাক্ষর করেন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। অনুসন্ধান বলছে, ইব্রাহিম নামের এক কর্মচারীকে দিয়ে বিল তৈরি করে বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠান তত্ত্বাবধায়ক।

মূলত বিলের সঙ্গে থাকা ব্যয় মঞ্জুরিপত্রটি বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ অফিস ভুয়া দাবি করায় বিপত্তির সৃষ্টি হয়। বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। তবে সরকারি বিলে ডকুমেন্ট জালিয়াতির বিষয়টি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ হওয়ায় ২০২২ সালের ৩০ জুন দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ লিখিত অভিযোগ দেন হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক।

ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিলের সঙ্গে যুক্ত ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্রটি যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী ঠিকাদার মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মুন্সি ফারুক হোসেন, তাদের অফিস স্টাফ সাজ্জাদ হোসেন ও মুকিত মণ্ডল এবং হাসপাতালের হিসাবরক্ষক ফোরকান পরস্পর যোগসাজশে তৈরি করেছেন।

এরপর দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে অভিযোগটি অনুসন্ধান করে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১। ওই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে অভিযোগে উল্লেখ থাকা চারজনের সঙ্গে দুদকে অভিযোগকারী, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বিকেও আসামি করার সুপারিশ করা হয়।

প্রতিবেদনে মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মুন্সী ফররুখ হোসাইন ওরফে মুন্সি ফারুক, তার ভাই মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন, তাদের অফিস স্টাফ মুকিত মণ্ডল, জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ ফোরকান এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বির বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র সৃজনপূর্বক তা খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে দণ্ডবিধির ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯, ৫১১ এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সুপারিশ করা হয়।

দুদকের সহকারী পরিচালক এনামুল হকের প্রতিবেদনটি গত বছরের ২৯ আগস্ট দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠান ওই কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাৎ।

এরপর চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে, ‘যেহেতু আলোচিত বিলটি পাস হয়নি এবং সরকারি টাকা তহবিলে রক্ষিত রয়েছে, সেহেতু মামলা রুজুর পরিবর্তে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এবং হিসাবরক্ষক মো. ফোরকানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে’ এবং ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তিনজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে’ উল্লেখ করে সুপারিশ দিয়ে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনটি দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠান দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো. সফিকুর রহমান ভুঁইয়া। সফিকুর রহমান ভুঁইয়া বর্তমানে অবসরকালীন ছুটিতে রয়েছেন।

পরবর্তী সময়ে গত ৩১ জুলাই দুদক প্রধান কার্যালয়ের চট্টগ্রাম ডেস্কের উপপরিচালক (অনুঃ ও তদন্ত-৫) খান মো. মীজানুল ইসলাম ডা. সেখ ফজলে রাব্বিকে বাদ দিয়ে অন্য চারজনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেন। ১১ আগস্ট মামলাটি রেকর্ড করে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মুন্সি ফারুকের সহোদর মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন তার হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল নম্বর থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার, সেগুনবাগিচা বরাবর প্রেরিত একটি ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র (স্মারক নং-৪৫.০০.০০০০.১৩৯.১২৯.২০২১/৪৫৯ তারিখ ২৬/০৬/২০২২ খ্রি.) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ ফোরকানের মোবাইল নম্বরে প্রেরণ করেন। মোহাম্মদ ফোরকান ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্রটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বির মোবাইলে ফরোয়ার্ড করেন। এছাড়া ২৮ জুন আহমেদ এন্টারপ্রাইজের অফিস সহকারী মুকিত মন্ডল জেনারেল হাসপাতালে আসেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মুন্সি ফারুক, তার সহোদর সাজ্জাদ মুন্সি, অফিস সহকারী মুকিত মণ্ডল, জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফোরকান ও ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পরস্পর যোগসাজশে ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরি সৃজন করে ডা. সেখ ফজলে রাব্বির একক স্বাক্ষরে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার একটি বিল প্রস্তুত করেন।

বিলটি পাস করার জন্য একই দিনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিস বরাবরে প্রেরণ করেন। বিলটি অনুস্বাক্ষরবিহীন ছিল। চট্টগ্রাম বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ অফিস কর্তৃক বিলটি যাচাই-বাছাইকালে অর্থ বরাদ্দপত্রে পৃষ্ঠাঙ্কন না থাকা, বরাদ্দপত্রটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় না আসা অর্থাৎ পত্রটি চট্টগ্রামের হিসাবরক্ষণ অফিস বরাবর না হয়ে, হিসাবরক্ষণ অফিস সেগুনবাগিচা বরাবর হওয়াসহ সার্বিক পর্যালোচনায় জিওটি ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বিলটি বাতিলপূর্বক ফেরত প্রদান করেন। ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্রে যে স্মারকটি (স্মারক নং-৪৫.০০.০০০০.১৩৯.১২৯.২০২১/৪৫৯ তারিখ ২৬/০৬/২০২২ খ্রি.) ব্যবহার করা হয়েছে সেটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটসোর্সিং খাতে নিয়োজিত জনবলের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য বরাদ্দ আদেশের স্মারকটি ব্যবহার করে সুশীল কুমার পালের স্বাক্ষর জাল কিংবা স্ক্যানিং করে চিকিৎসা যন্ত্র ব্যয় মঞ্জুরির ভুয়া ও অবৈধ আদেশ দাখিল হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা হলে জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ফোরকান জাগো নিউজকে বলেন, ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্রের ঘটনাটি ২০২২ সালের ২৮ জুনের। ওই দিনটি ছিল অর্থবছরে সরকারি বিল ছাড় করার শেষ দিন। হাসপাতালের অনেক বিল ছাড়ের বিষয় থাকায় আমি বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ অফিসে ছিলাম। ওইদিন দুপুর ২টা ১৩ মিনিটে বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমি হাসপাতাল ত্যাগ করি। দুপুর আড়াইটার দিকে ঠিকাদারের লোক সাজ্জাদ মুন্সি আমার হোয়াটস অ্যাপে আলোচিত সেই ব্যয় মঞ্জুরিপত্রের কপিটি পাঠান। তখন সেটি আসল না নকল, তা আমার পক্ষে যাচাই করা সম্ভব ছিল না। এ কারণে আমি তাৎক্ষণিক এটি তত্ত্বাবধায়ক স্যারের হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিই। কারণ ওই বিলটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক স্যারের কাছে। তত্ত্বাবধায়ক ওই বিলটি নিজেই তৈরি করেছিলেন। হিসাবরক্ষণ অফিসে উপস্থাপিত বিলটিতে আমার কোনো সই ছিল না। বিলটিও আমার হাতে লেখা নয়। বিলটিতে তত্ত্বাবধায়ক স্যার একাই সই করেন। পরে যখন পত্রটি ভুয়া প্রমাণিত হলো, তখন তত্ত্বাবধায়ক স্যার আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে দুদকে অভিযোগ দিয়েছেন।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন এবং মামলার সুপারিশ নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, মাঠপর্যায়ের হাত-পা বাঁধা। কমিশন যেভাবে বলে সেভাবে কাজ করতে হয় কর্মকর্তাদের। আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের ওই বিলটিতে একক স্বাক্ষর ছিল তত্ত্বাবধায়কের। অথচ কমিশন থেকে তাকেই বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন আদালতে মূল ঘটনাও প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে যাবে। কারণ মূল আসামিকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেবেন অন্যরা।

মামলার বিষয়ে চট্টগ্রামের মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান জাগো নিউজকে বলেন, কমিশনকে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যাকে ইচ্ছা মামলা দিচ্ছে, যাকে ইচ্ছা ছেড়ে দিচ্ছে দুদক। দুদককে আদালতের উপরে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আইনে।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য মামলার অনুমোদন দেওয়া দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।