জাবিতে মধ্যরাতে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে সাংবাদিক নির্যাতন
একপর্যায়ে সিলিং ধরে পাঁচ মিনিট ঝুলতে বলে। নির্ধারিত সময়ের আগে নেমে গেলে তারা টেবিলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে কান ধরে থাকতে বলে।

প্রথম নিউজ, জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে মধ্যরাতে আবাসিক হলের গেস্ট রুমে এক সংবাদকর্মী শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতিত ওই সংবাদকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি একটি অনলাইন পোর্টালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘রুম থেকে আমাকে হলের গেস্ট রুমে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে ২৫/৩০ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাকে আমার পরিচয় দিতে বলে। প্রথমবার পরিচয় দিলেও তারা বারবার একই পরিচয় দিতে বলে। হলের গেস্টরুমে দেরিতে আসার কারণ জানতে চায় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। একপর্যায়ে সিলিং ধরে পাঁচ মিনিট ঝুলতে বলে। নির্ধারিত সময়ের আগে নেমে গেলে তারা টেবিলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে কান ধরে থাকতে বলে। কোমরে ফোঁড়া থাকায় আমি অপারগতা প্রকাশ করি।
তখন তারা আমাকে লাফাতে বলে। আমি মোবাইলে তাদের কার্যক্রম রেকর্ড করছি কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা আমার ফোন তল্লাশি করতে চায়। লক খুলে দিতে বললে আমি অস্বীকৃতি জানাই। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার শার্টের কলার ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করে এবং এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করতে থাকেন। এদিকে ভুক্তভোগী ওই সংবাদকর্মী শিক্ষার্থীর করা মোবাইল রেকর্ডে সিলিংয়ে ঝুলিয়ে, টেবিলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে নির্যাতন করার ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন ৮ কর্মীকে চিহ্নিত করে দল থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। অভিযুক্তরা হলেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আসাদ হক ও একই বিভাগের আরিফ জামান সেজান, ৪৭তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের রায়হান বিন হাবিব, আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ্, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের মীর হাসিবুল হাসান রেশাদ এবং ৪৮তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসান।
শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত আসাদ হক, আরিফ জামান সেজান এবং জাহিদ হাসান ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতির ঘটনা বর্ণনা করেন এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে সিলিংয়ে ঝুলানো এবং মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আজ থেকে এই কর্মীরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকুক তা আমরা চাই না। সাংগঠনিক কাজকর্ম থেকে তারা অবাঞ্ছিত বলে গণ্য হবেন। ছাত্রলীগ পরিচয়ে কেউ এরকম ন্যক্কারজনক কাজ করলে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিবো।’ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘ছাত্রলীগের কোনো কর্মী সামনেও এরকম ন্যক্কারজনক কাজ করলে, সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ তবে ঘটনার রাতে হলের দায়িত্বে থাকা প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেনকে ফোন দেয়া হলেও কেউই ফোন রিসিভ করেননি। পরে গতকাল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী বলেন, ‘আমি গতকাল খুব ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পড়ি ফলে ফোন রিসিভ করতে পারিনি। সকালে ঘটনা জেনেছি। ঘটনা বিশ্লেষণ করে দ্রুত দোষীদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।’
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews