ফুলের নাম পঙ্গপাল, পাহাড়ে মুগ্ধতা

ফুলের নাম পঙ্গপাল, পাহাড়ে মুগ্ধতা

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  গ্রীষ্মের পাহাড়ে বাহারি ফুল-কৃষ্ণচূড়া, লাল সোনাইল, জারুল, সোনালু, কুরচি-এসব চেনা প্রজাতির ফুলের ভিড়ে সৌন্দর্যের পেখম মেলেছে অচেনা এক ফুল। পথের ধারে ফুটে থাকলেও অনিন্দ্য সুন্দর ফুলটি অবহেলিত। অনেকের কাছে অচেনা। তবে প্রকৃতিতে স্বমহিমায় উজ্জ্বল ‘কালো পঙ্গপাল’। নিজের সৌন্দর্যে মুগ্ধ করেছে ফুলপ্রেমীদের। ফুলের কাছে যেতেই থমকে দাঁড়ান নিসর্গপ্রেমীরা।

বিবর্ণ পাহাড়ে বৃষ্টির মায়ায় জেগে ওঠে প্রকৃতি। ন্যাড়া পাহাড়ে অল্প অল্প করে সবুজ উঁকি দেয়। বৃষ্টির পর কালো পঙ্গপালের রূপও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ফুলের গায়ে লেগে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা ফুলটিকে আরও অনন্য করে তোলে।

কিন্তু ফুলের নাম কেন পঙ্গপাল? মূলত এর ইংরেজি নাম ‘ব্ল্যাক লোকাস্ট’ বাংলা তর্জমায় কালো পঙ্গপাল হয়ে গেছে। ফুলটি প্রথম নজরে আনেন খাগড়াছড়ির শৌখিন আলোকচিত্রী সাথোয়াই মারমা। তার দেওয়া তথ্য মতে, খাগড়াছড়ি আলুটিলা সড়কের বাঁকে বিশাল এক কালো পঙ্গপাল গাছ দেখা যায়। গাছের শাখা-প্রশাখা ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। শেষ বিকালের হলুদ আলোয় সফেদ পঙ্গপাল সোনালী আভা ছড়ায়। ফুলের ভাজে ভাজে সবুজ পাতা সেই দৃশ্যকে আরও মোহনীয় করে তোলে। আলুটিলা ছাড়াও মাইসছড়ি, ব্যাঙমারাসহ বেশকিছু জায়গায় কালো পঙ্গপাল ফুটেছে। বৃষ্টির পর কালো পঙ্গপাল আরও বেশি স্নিগ্ধ হয়ে উঠে। ফুলের সৌরভমাখা বাতাস আশপাশে ছড়িয়ে যায়। গাছটি উচ্চতায় বেশ বড় হয়। আলুটিলা সড়কের পাশে যে গাছটি রয়েছে সেটি উচ্চতায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট।

জানা যায়, দেশে কালো পঙ্গপাল গাছ অনেক জম্মালেও এর আদিনিবাস উত্তর আমেরিকায়। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে কালো পঙ্গপালের বিস্তৃতি বেশি। এর গড় উচ্চতা ৪০ থেকে ১০০ ফুট। প্রশস্ততা ৫ ফুট পর্যন্ত। পাতাঝরা উদ্ভিদ। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে গাছের পাতা ঝরে যায়। গাছের ছাল অনেকটা গামারির মতো। সাধারণত মে থেকে জুনে ফুল ফোটার কথা থাকলেও এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে ফুটতে শুরু করে। ফুলের ব্যাপ্তিকাল এক থেকে দুই সপ্তাহ।

হিল অর্কিড সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা আলোকচিত্রী সাথোয়াই মারমা বলেন, কালো পঙ্গপাল আমাদের নেটিভ ট্রি। গ্রীষ্মের এই সময়ে ফুল ফোটে। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন জায়গায় এটি ছড়িয়ে আছে। এর সুবাস অসাধারণ। ফুলটি দেখতেও খুব সুন্দর।

বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটির সংগঠক সবুজ চাকমা বলেন, পাহাড়ে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের জন্য প্রায়ই গাছ কাটা হয়। অনেক সময় ফুলের গাছও কেটে ফেলা হয়। এ কারণে পাহাড় থেকে অনেক বৃক্ষ হারিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য এলাকায় প্রাকৃতিক বন পুনরুজ্জীবিত করতে পারলে আমাদের দেশীয় বৃক্ষ ফিরে আসবে।