সরকারের পতন ঘটাতে মানুষ জেগে উঠেছে: মির্জা ফখরুল
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদল আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। '

প্রথম নিউজ, ঢাকা: মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দূর্বার গণআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে হবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটাই হবে প্রকৃত জবাব। জবাব একটা, এদের নির্যাতন ও অত্যাচারের জবাব একটা, এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তাদেরকে সরাতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদল আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দের ওপর সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার প্রদিবাদে' এ প্রতিবাদী ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, জনগণের উত্তাল তরঙ্গ শুরু হয়েছে। ছাত্রদলের ভাইদেরকে আমি বলবো, এই যে যত কিছু পরিবর্তন হয়েছে- সেটা ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমি বিশ্বাস করি- এবারও যে পরিবর্তন হবে, আমার ছাত্রদলের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে এবং দূর্বার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। আজকে দায়িত্ব একটা, দেশের সকল তরুণ সমাজ, ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ এবং সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে- ঐক্যবদ্ধ করে একটা দূর্বার গণআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে হবে। এটাই হবে প্রকৃত জবাব। জবাব একটা, এদের নির্যাতন ও অত্যাচারের জবাব একটা, এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তাদেরকে সরাতে হবে। ইনশাআল্লাহ জনগণের বিজয় হবে।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাই বলছি, এখনো সময় আছে। দেয়ালের লিখন পড়ুন। ওই সমস্ত উল্টা-পাল্টা কথা না বলে আপনারা শান্তিতে পদত্যাগ করুন, একটা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন, সংসদ বিলুপ্ত করে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্যে দিয়ে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার ও সংসদ গঠন করবো।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে সমানে মিথ্যাচার করছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে সব নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়, মানুষ ভোট দিতে পারে এবং নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছেন। বাংলাদেশের মানুষ এই কথায় হাসছে। এদেশে গণতন্ত্র নাই মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এদেশে মানুষের কোন নিরাপত্তা এবং ভোটাধিকার নাই। ব্যর্থ হয়ে গেছে এই রাষ্ট্র।
আওয়ামী লীগ বরাবরই একটা সন্ত্রাসী দল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে। সেজন্য এদিকে তারা বলেন, আমার সোনার ছেলেদের হাতে কলম তুলে দিয়েছি। অন্যদিকে ওই সোনার ছেলেদের হাতেই তারা বন্দুক, পিস্তল, লাঠি-সোটাসহসহ সবকিছু তুলে দিয়েছে।
সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে শুধু নয়, ঢাবিতে ইতিমধ্যে তারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। ইডেন কলেজে নিজেরা মারামারি ও চুলাচুরি করে একটা ভয়ঙ্কর ন্যাক্কারজনক কাণ্ড ঘটিয়েছে।
'চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা নিজেরাই তাদের কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোন বিশ্ববিদ্যালয় বাকি? সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটা নৈরাজ্য পরিণত করেছে। বিএনপির আন্দোলনকে দমন করার জন্য সরকার সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির হাঁটু ভাঙা- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের হাঁটু ভাঙা যে নয় তা আপনারা টের পাচ্ছেন। আমরা লাঠিও নেই নাই। কিন্তু আপনাদের ইতিমধ্যেই কোমর ভেঙে গেছে। আপনারা শুধু লাঠি নয়। আপনারা ইতিমধ্যে রামদা, তলোয়ার এবং পুলিশের বন্দুকের ওপর আপনারা এখন হাঁটছেন। আপনারা জনগণের সঙ্গে নাই। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। 'সেজন্য আজকে সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে'
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যেই পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ এখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মিছিলে এবং ছাত্রদের একেবারেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা আজকে লাঠি, বন্দুক এবং টিয়ার গ্যাস দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ছাত্ররা ফুল এবং মিষ্টি নিয়ে ভিসির সঙ্গে দেখা করতে করছি। সেখানে অতিথি আপ্যায়ন হয়েছে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি। উনি বলেছেন, আমি এগুলোর সাথে নেই। কিন্তু উনি শান্তনা দিতে পারতেন।
লাঠি নিয়ে মিছিল করা যাবে না- ওবায়দুল কাদের ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, লাঠি নিয়ে মিছিল করা যাবে না। অন্যদিনে লাঠি দিয়ে পেটাবিন। এটা তো ভালো কথা হলো না। আমরা লাঠি মিছিল করি না। এটা আপনারা (আওয়ামী লীগ) করে। ১/১১ সময় সেটা আপনারা দেখিয়েছেন। আর আমরা শান্তিপ্রিয়, শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল ও মিটিং করতে চাই। আমরা লাঠি মিছিল করবো না, শান্তিপূর্ণ মিছিল করবো। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করবো। তবে বাধা যদি প্রবলভাবে আসে, সেটা কিভাবে মোকাবেলা করতে হয় তা বিএনপি এবং দেশের জনগণ ভালো করেই জানে।
সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর ১টা থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাগম হতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার ও ফেস্টুনসহ খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন।
এদিকে সমাবেশকে ঘিরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ এর আশ-পাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তার বলায় গড়ে তুলেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, সদস্য ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান, রাকিবুল ইসলাম ও আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া প্রমুখ ।
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews