সরকারের পদত্যাগ ছাড়া কোন আলোচনা নয়: মির্জা ফখরুল

আজ বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রামে বিভাগীয় গণসমাবেশে এমন কথা বলে তিনি।

সরকারের পদত্যাগ ছাড়া কোন আলোচনা নয়:  মির্জা ফখরুল
বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম নিউজ, চট্রগ্রাম:  এ সরকারকে আর একদিনও সময় দেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, তাদের পদত্যাগ ছাড়া কোন আলোচনা নয়।

আজ বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রামে বিভাগীয় গণসমাবেশে এমন কথা বলে তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলের ভয় পান না, বাংলাদেশের মানুষও জেলকে ভয় পায় না বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে জেলে বন্দি করে রেখেছে সরকার। বেশি কথা বললে আবার তাকে জেলে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়। বেগম খালেদা জিয়া ৬ বছর ধরে জেলে আছেন। যে মামলায় তাকে সাজা দিয়েছেন, কোনো আইনেই তা নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার যোগ্য হলেও তাকে জামিন দেয়া হয়নি। এসময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে, র‍্যাব, পুলিশকে দলীয়করণ করেছে। এমনকি মিডিয়ার মালিকরাও সেই দলীয়করণের মধ্যে পড়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এসময় বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের কথা ডিসি-এসপিরাও শোনেন না। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে সরকারকে পদতাগে বাধ্য করা হবে। ফয়সালা হবে রাজপথে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে কথা বলে কোনো দিন, কখনো তা তারা রাখে না। এটা হচ্ছে তাদের চরিত্র। জনগণের সঙ্গে তারা শুরু থেকেই প্রতারণা করছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তারা প্রতারণা করছে। তারা ভদ্রলোকের মতো কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, একটা মিলাদ করতেও দেয় না, ঈদ পুনর্মিলনীতে আক্রমণ করে, এদের কাছ থেকে কী আশা করতে পারেন!’
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ছাড়া বিএনপির নির্বাচনের যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি মনে করি, কোনো কথাই হবে না যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে। পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে, নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। নির্বাচনে তো আমরা যাবই না শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকেন।

তিনি বলেন,  শেখ হাসিনা বলেন যে, দুর্ভিক্ষ আসছে, কম খান, বাতি কম জ্বালান, পানি কম ব্যবহার করুন। এসব কথা বলছেন এখন। আপনারা আছেন কেন? বিদায় হন। আমি আগেই বলেছি সেফ এক্সিট করুন। নিরাপদে চলে যান। তা না হলে পালাবার পথটাও খুঁজে পাবেন না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা আপনি পদত্যাগ করুন। আজ থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেই আন্দোলন আমরা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেব। সেই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই সরকারের অবশ্যই পতন ঘটাব এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার বাংলাদেশের সমস্ত অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। সেজন্য আমরা বলেছি অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। আমরা বলেছি বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধায়কের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই নির্বাচন কমিশন গঠন হলে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে এক করে নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন হবে। সেই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্ট গঠন হবে। সেই সরকার হবে জনগণের সরকার।

তিনি বলেন,  আন্দোলন শুরু হয়েছে দেশকে মুক্ত করার জন্য, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য। এই দেশকে আরেকবার পরাজয় থেকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে।  দ্বিতীয় ধাপে শুরু করেছি গণতন্ত্রকে মুক্ত করার আন্দোলন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন৷ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। আর এই আন্দোলনের সূচনা হলো চট্টগ্রাম থেকে।

তিনি বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একটাই কাজ। তা হলো জনগণের পকেট কেটে অর্থ কামিয়ে বিদেশে পাচার করা। আমরা সেই বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা ১৯৭১ সালে দেখেছিলাম, যে স্বপ্ন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া দেখেছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শুনেছি বিদ্যুতের দাম বাড়বে। সবকিছুর দাম এই সরকার বাড়িয়েছে।  সবকিছুর দাম বাড়াতে হয় কেন? কারণ একটিই। তারা লুট করে, চুরি করে ডাকাতি করে। জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে টাকা বিদেশে পাচার করে। কানাডা, লন্ডন ও মালয়েশিয়ায় বাড়ি করে। আর আমার দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যায়। খুব বড় বড় কথা বলে। কিন্তু দেশের শতকরা ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে।

তিনি বলেন, জনগণের সরকার গঠন করা হলে আমরা সব সমস্যা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে সমাধানের চেষ্টা করব। চাল, ডাল, তেল ও বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করব।

dhakapost

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ দেশে  কারো নিরাপত্তা নেই। দিনে দুপুরে ডাকাতি হয়। মা-মেয়েদের কোনো সম্ভ্রম রক্ষা হয় না। মানুষকে হত্যা করা হয়। খুন-গুম করা হয়। এমন এক অবস্থা এসেছে, র‍্যাবকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমি বলি র‍্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হবে না। নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে শেখ হাসিনার সরকারকে। কারণ হাসিনা সরকারের নির্দেশেই  গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে,  কাস্টডিতে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে এই সরকারের আমলে। তারা নাকি কিছু জানে না। বলে অনেকে লুকিয়ে আছেন।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের লোকজন কিছুদিন আগে এসে বলেছেন, এখানে গুম হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪ পৃষ্ঠার রিপোর্টেও তারা বলেছেন বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। দেশে গুম হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। এখানে বিচারবিভাগ স্বাধীন নয়।

ডিসি-এসপিরা এই নির্বাচন কমিশনকে মানেন না 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার আবার নির্বাচন করতে চায়। নির্বাচন করতে একটা ইলেকশন কমিশন গঠন করেছে। কোন নির্বাচন কমিশন? যে নির্বাচন কমিশনকে ডিসি-এসপি মানেন না! তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের (ডিসি-এসপি) ডেকেছে। নির্বাচন কমিশনার তাদের বলছেন, নির্বাচন ঠিক করে করবেন। ডিসি এসপিরা বলেছেন, আপনার কথা আমরা মানি না। আমরা শুধু শেখ হাসিনার কথা মানি। তাদের দিয়ে আপনি নির্বাচন করবেন? এই দেশের মানুষ নির্বাচন হতে দেবে? অসম্ভব! এখানে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।  

মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্দি, চিকিৎসারও সুযোগ পাচ্ছেন না। কতটা নিকৃষ্ট হতে পারে তারা? তারা বলে আমরা কথা বললে,  বেগম খালেদা জিয়াকে আবার জেলে নেবে। বেগম খালেদা জিয়া কখনো জেলের ভয় পান না। বাংলাদেশের মানুষ জেলের ভয় পায় না। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘১৪-১৫ বছর ধরে বিএনপির ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। বিএনপিসহ ৩৭ লাখ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। এরপরও বিএনপিকে দুর্বল করা যায়নি। যাদের এত বছরেও দুর্বল করতে পারেননি তাদের আর শেষ সময়ে দুর্বল করতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যারা বাধা দেয় তাদের লিস্ট তৈরি করুন। তাদের বিচার এদেশের মানুষ একদিন করবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই গণতন্ত্রের যুদ্ধে আমরা আইনি পথে আছি। সরকার বেআইনিভাবে হাঁটছে। এই বেআইনি সরকারের পতন ঘটাতে হবে। শেখ হাসিনা দেশের জনগণের প্রধানমন্ত্রী নন। কেননা শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেননি। এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামবাসী পলোগ্রাউন্ড ময়দানের মহাসমাবেশ থেকে একটি বার্তা দিয়েছে। তা হলো শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ থেকে সারা দেশে একটি বার্তা যাবে, সেটি হলো হাসিনা সরকার পদত্যাগ করুন। কাল কিংবা পরশু নয়, আজকের মধ্যে পদত্যাগ করুন। তিনি অভিযোগ করেন, সমাবেশে আসাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশির নামে ভয় দেখানো হয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির বলেন, আগামী  ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে খালেদা জিয়ার সরকার চলবে। যারা খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছেন, ১০ ডিসেম্বরের পর তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হলো।

সমবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক এবং সাবেক ডাকসু ভিপি আমান উল্লাহ আমান বলেন,  শেখ হাসিনার হাত রক্তে রঞ্জিত। তিনি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছেন। শেখ হাসিনার পতন হবে।  খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে। তারেক রহমান বীরের বেশে দেশে আসবেন।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্করের সঞ্চালনায় গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনর রশীদ প্রমুখ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom