১২ জুলাই সমাবেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আসবে: মির্জা ফখরুল 

১২ জুলাই সমাবেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আসবে: মির্জা ফখরুল 

প্রথম নিউজ,সিলেট থেকে: অবিলম্বে সরকার পদত্যাগ না করলে রাজপথেই ফয়সালা হবে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। নিজেদের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য। যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু আজকে ভিন্নভাবে শেখ হাসিনা বাকশাল কায়েম করেছে। বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নির্বাচনকে ব্যবহার করে। আর তারাই বলে দেশে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন তারাই করে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। তারা মনে করে দেশটা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। তাদের তালুকদারী। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, আগামী ১২ জুলাই (বুধবার) ঢাকার সমাবেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আসবে। যার মধ্য দিয়ে দেশের সব মানুষকে জাগ্রত করে এই সরকারকে বিদায় দিয়ে জনগণের নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আসুন আমরা সবাই উঠে দাঁড়াই। আজ রোববার বিকেলে সিলেট শহরের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, জনগণরে দাবি আদায়ে আমাদের কথা বলার অধিকার ১৪ বছর ধরে বাঁধা দিয়ে আসছে সরকার। আমরা এক কঠিন সময় ও সংকটের মধ্যে উপনীত হয়েছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্ব থাকবে কি না তা কয়েক মাসের মধ্যেই নির্ধারণ হবে।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার ও শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে এই সমাবেশ হয়। বিকেল সোয়া চারটায় কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে নতুন ভোটার ও তরুণদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

পূর্ব নির্ধারিত এই সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকেই সিলেট শহরে জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সিলেট শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে দুপুরের মধ্যেই আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে জড়ো হন। তারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশ স্থলের চারপাশে অসংখ্য ব্যানার পোস্টার ও ফেস্টুন টাঙানো হয়।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএমএ জিলানীর সভাপতিত্বে ও যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, যুবদলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেন, সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি মোহাম্মদ কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির নিখোঁজ নেতা ও সিলেট বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা, নতুন ভোটার সাবিয়া জামান আরিফা, সাদিয়া কাওসার রুহি, বিগত আন্দোলনে পঙ্গুত্ববরণকারী খালেদুর রহমান খালেদ, গুম হওয়া ইফতেকার আহমেদ দিনার এর বোন তাহসিন শারমিন তামান্না, কবিতা আবৃত্তি করেন শিক্ষার্থী সায়েমা আহমেদ অসীম, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের এম এ চৌধুরী শাহান, শিক্ষার্থী আরিফ উল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে তারা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করবে। কিন্তু কোন সংবিধান? যেটা তারা নিজেদের মতো কাটা ছেঁড়া করেছে সেই সংবিধান? আমরা বলেছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। যেটা ১৯৯৬ সালে নির্ধারণ হয়েছিলো। আজকে কেউ ভোট দিতে পারেনি। তরুণরা ভোট দিতে পারেনি। এই কথা বলতে গিয়ে অনেককে মেরে পঙ্গু করা হয়েছে। আমাদের সিলেটের নেতা এম ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকে এই সরকার বাংলাদেশ ও জনগণের অনেক কিছু ক্ষতি করেছে। এরা বিদ্যুৎ খাতকে লুটেরা মডেল বানিয়েছে। যা সম্প্রতি সরকারের রিপোর্টে বলা হয়েছে। অথচ সরকার বলে বাংলাদেশ নাকি উন্নয়নের রোল মডেল। দশ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুর ব্যয় এখন কতো? আর দেশের কৃষক তার ফসলের দাম পায় না। মানুষ বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেনা। এককথায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রায় সব খাতে দলীয়করণ করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত দুটি নির্বাচনে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। সেজন্যই আমরা আবারও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে ধরেছি। যদিও আওয়ামী লীগ নিজেরা এই দাবিতে আন্দোলন করেছিলো। আজকে এই সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিলো। কিন্তু দেয়নি। ৪ কোটি যুবক এখন বেকার। এমতাবস্থায় তরুণদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ বাঁচাতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য সরকারকে বিদায় করা ছাড়া কোনো পথ নেই। সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।

তিনি আরও বলেন, তারুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে তরুণরা এগিয়ে আসছেন। আজকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। তার পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনিই নেতৃত্ব দিয়ে সিলেটকে শত্রুমুক্ত ও স্বাধীন করেছিলেন। এসময় সিলেটের উন্নয়নে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর নাম গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করেন বিএনপির মহাসচিব।

যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধ এবং ক্ষমতায় থাকার তাদের কোনো অধিকার নেই। এই সরকারের আমলে কেউ ভোট দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা ভোট চোর। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন ও সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরবো না মর্মে উপস্থিত সব নেতাকর্মীকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে টুকু বলেন, আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবোনা। এসময় বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল কারাবন্দী নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, আমাদের তারুণ্যের সমাবেশ ঘিরে সারাদেশে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো বাধা বিপত্তি তরুণদেরকে দমাতে পারেনি। আমরা তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করছি। কারণ তারা ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে। শেখ হাসিনা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। ইনশাআল্লাহ তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন ঘটাবে।

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নিপীড়নে তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ আমরা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেই রাজপথ ছেড়ে যাবো।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে হলে তরুণদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা তরুণদেরকে যা সহযোগিতা দরকার তাই দিবো।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেন বলেন, তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ঘটবে। অতীতেও স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন তরুণেরা ঘটিয়েছে।

তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, যারা সাংগঠনিকভাবে দক্ষ বেছে বেছে তাদেরকে গুম করা হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় নেতাদেরকে গুম করা হয়েছে। যেন আওয়ামী লীগ সরকার ভোট ডাকাতি করতে পারে। গুম হওয়া যে কত কষ্টের ও বেদনাদায়ক সেটা তারাই বুঝে যাদের পরিবারে কেউ গুম হয়েছেন। তরুণদের বলবো তোমাদের হাত ধরেই ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব। তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবে।