অচল সিলেট ওসমানী মেডিকেল, রোগীরা চরম দুর্ভোগে
আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম

প্রথম নিউজ, সিলেট : অভিযুক্ত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন ওসমানী মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন- বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এছাড়া আউটডোরে চিকিৎসা বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ইন্টার্নরা। এদিকে- তৃতীয়দিনের মতো মেডিকেল হাসপাতালে ধর্মঘট পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে চলেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে- ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে থাকলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত হামলাকারী বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মীরা গ্রেপ্তার হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ; আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াতে কৌশলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। রোববার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে এক নারী চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় সোমবার রাতে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা হয়। তারা ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাত থেকে আন্দোলনে নামেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। মধ্যরাত থেকে তারা হাসপাতালের কর্মবিরতি শুরু করেন। মঙ্গলবার থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি শুরু করা হয়। মঙ্গলবার বিকালে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়ানো সহ শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নদের ৫ দফা দাবির মধ্যে চার দফা দাবি তাৎক্ষণিক মেনে নেওয়া হলেও আন্দোলন প্রশমিত হয়নি। এখন শিক্ষার্থীদের মূল দাবি হচ্ছে; হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা। সব আসামি গ্রেপ্তার না হলে তারা আন্দোলন থেকে সরে যাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
গতকাল দুপুরে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানিয়েছেন- ‘শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন ডাক্তারদের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আসামি গ্রেপ্তার হলে পরিস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক হবে।’ তিনি জানান- ‘আমরা ক্যাম্পাস ও মেডিকেল হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করেছি। বহিরাগতরা যাতে ক্যাম্পাসে ঢুকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না করতে পারে সেদিকে নজর রাখা হয়েছে। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নদের ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানান।’ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ২০০ ইন্টার্ন চিকিৎসক। তারা কাজে যোগ না দেয়ার কারণে গত দু’দিন থেকে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালের অনেক রোগী অন্যত্র চলে গেছেন। গুরুতর রোগীদের স্বজনরা গাড়িযোগে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এই অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম অচল হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে- ঘোষণা মতো ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জরুরি বিভাগ ও কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল দুুপুরের পর শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হন। একই সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতালের সামনে জমায়েত হন। এরপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এই বিক্ষোভ মিছিলটি মেডিকেল এলাকায় এসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিক্ষোভে মিলিত হয়। এ সময় তারা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এবং মেডিকেলের সামনে রাস্তা অবরোধ করে। বেলা একটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত রাস্তায় অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে দু’পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- হামলাকারী আসামিদের গ্রেপ্তার না করলে তারা আন্দোলন থেকে সরে যাবেন না। ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলার সময় সেখানে আসেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা ও ইন্টার্নিরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা পরিচালকের উপস্থিতিতে সমাবেশ করেন। সমাবেশে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মতিউর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- ‘ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা মূল আসামি নয়। এখনো পুলিশ মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে সব পাওয়া যাবে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামিদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানান তিনি।’ বলেন- ‘আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে সরে যাবো না।
প্রয়োজনে আউটডোর বন্ধ সহ আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের জানান- আন্দোলন চলাকালে লেডিজ হোস্টেলের সামনে গিয়ে বহিরাগতদের সহযোগীরা হুমকি দিচ্ছে। এখনো ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হলে কেউ স্বস্তি পাবে না। সমাবেশের পর হাসপাতালের পরিচালকের আহ্বানে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এদিকে- এ ঘটনায় দু’টি মামলা করা হলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দু’জন ছাড়া কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি আলী মাহমুদ জানিয়েছেন- আমরা আসামিদের চিহ্নিত করেছি। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। খুব দ্রুত আসামিরা গ্রেপ্তার হবে বলে জানান তিনি। সিলেট জেলা বিএনপি’র বিবৃতি: সন্ত্রাসীদের হামলার পর চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনার উদ্বেগ জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী।
তারা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, চিকিৎসা সেবা দুর্নীতি আর আওয়ামী দলীয়করণের কারণে এমনিতেই বিপর্যস্ত তার উপর সিলেটে বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন রোগে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাঘাত ঘটেছে। এর মধ্যে সরকারের চরম অব্যবস্থাপনা আর দলীয় সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে সিলেটের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। গত কয়েকদিন থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা কর্মরত চিকিৎসকদের উপর হামলার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে সিলেট অঞ্চলের কোটি মানুষ আজ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। ওসমানী মেডিকেলের ঘটনায় দায়েরকৃত দু’টি মামলায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের আসামি হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে তাদের কারণেই আজ এই অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তারা বলেন, অভিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে চলমান সংকট নিরসন করে সিলেটবাসীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews