আ’লীগ প্রার্থী নয়নের সোনার ভরি চার হাজার!
প্রথম নিউজ, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদর আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি নিজেকে আইনজীবী হিসেবে দেখিয়েছেন। যদিও ২০২১ সালের জুনের উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাকে আইন পেশায় তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে সংসদ সদস্য হওয়ার পর গত আড়াই বছরে তার পেশাগত আয় বেড়েছে ৮ গুণ।
এদিকে হলফনামায় তার কাছে ১০ তোলা (ভরি) সোনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যার মূল্য ধরা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। আর তার স্ত্রী চৌধুরী রুবিনা ইয়াসমিন লুবনার ৫০ তোলা (ভরি) সোনার মূল্য দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকা (প্রতি ভরি ৪ হাজার টাকা)। যদিও বর্তমান বাজারে প্রতি ভরি সোনার মূল্য লাখ টাকার ওপরে। জেলা শহরে তার একটি পাঁচতলা বাসভবন রয়েছে। যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অথচ বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে নির্ধারিত এ অংক আকাশ-পাতাল ব্যবধান। তবে বাসাটির মালিক স্ত্রী রুবিনা ইয়াছমিন লুবনা বলে উল্লেখ করা হয়ছে।
হলফনামা থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের জুনে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে উপ-নির্বাচন করে জয়ী হন নয়ন। ওই সময় হলফনামায় নয়ন তার বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। নগদ টাকার তালিকায় ১০ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৮ টাকা দেখানো হয়। তখন ব্যাংকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা ছিল, কৃষিখাতে নয়নের আয় ছিল ৬ হাজার ৭৮১ টাকা এবং বাড়িভাড়া বাবদ আয় হতো ৯০ হাজার টাকা।
প্রায় আড়াই বছর পর নয়ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় পেশাগত বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৭২ লাখ ৯১ হাজার ২৯৩ টাকা। যদিও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে আইন পেশায় তেমন একটা দেখা যায়নি, তারপরও পেশাগত আয় প্রায় ৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার নগদ দেখিয়েছেন ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। তবে ব্যাংকে জমা টাকা নেই। কৃষিখাত এবং বাড়িভাড়ায় কোনো আয় দেখাননি তিনি।
এদিকে ২০২১ সালে নয়ন তার স্ত্রী লুবনার নামে জেলা শহরের বাড়িটি হলফনামায় দেখিয়েছেন। তবে তখন ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট ছিল না। নয়নের ব্যাংকেও কোনো ঋণ ছিল না। অন্যান্য খাতে নয়নের বাৎসরিক আয় ছিল ২৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫০৯ টাকা। তবে এবার তার স্ত্রীর নামে ঢাকার ধানমন্ডিতে দশমিক ৫৬৯ কাঠার জমিতে একটি ফ্ল্যাট দেখানো হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এরমধ্যে ৮ লাখ ৩৮ হাজার ২৩৩ টাকা পরিশোধ করেছেন। এখনো ৫১ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭ টাকা ঋণি রয়েছেন তিনি।
সংসদ সদস্য হিসেবে ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ১২৫ টাকা বেতন দেখানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য খাতে কোনো আয় দেখাননি তিনি। ২০২১ সালে নয়নের ১ লাখ ৬২ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, ৫৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র দেখানো হয়েছে। তবে এবার বাড়তি কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র দেখাননি তিনি। নয়ন তার পৈত্রিক সূত্রে কৃষি জমির মালিক হয়েছেন ৫৬.৫১ শতাংশ। অকৃষি জমির মালিক ৪৩.১৭ শতাংশের। আইনজীবী সমিতি ভবনে ২০০ বর্গফুটের ৫০ হাজার টাকা মূল্যের চেম্বার রয়েছে তার। ২০২১ সালে ব্যবহৃত নয়নের গাড়ির মূল্য ছিল এক কোটি তিন লাখ টাকা। ২০২৩ সালে এসে দুটি গাড়ি ব্যবহার করেন। এর একটির মূল্য ৮৩ লাখ ৯৯ হাজার ১৮৮ টাকা, অন্যটির মূল্য ১ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫৫ টাকা।
