ইউনানি চিকিৎসক সমাবেশ :একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা জরুরিঃ ডা. জাহিদ

প্রথম নিউজ ঢাকা: মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, গুম খুন, ক্রসফায়ারসহ নানা ধরণের মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের মাধ্যমে সরকার দেশকে মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য করে ফেলেছে। তাই আমাদের তরুণরা আর দেশে থাকতে চাইছেন না। সুযোগ পেলেই তারা পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে। বিদেশে যারা পড়তে যান তারা আর দেশে ফিরতে চান না। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য লজ্জার। তিনি বলেন, একটি কার্যকর ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রুপরেখা ঘোষণা করছেন। এই রুপ রেখা দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে প্রায় অকার্যকর বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারে।
আজ বুধবার রাজধানীর মিরপুরের একটি রেস্তোরাঁয় ইউনানি আয়ূর্বেদিক গ্রাজুয়েট ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-আগড্যাবের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। আগড্যাবের সভাপতি মির্জা লুৎফর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে ও ডা. আমিনুল বারি কাননের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান,বিএনপির সহস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকী, অধ্যক্ষ ডা. আতাউর রহমান, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুন হাদান, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ হানিফ, এমট্যাবের মহাসচিব বিপ্লবউজ্জামান বিপ্লব,ডা. মিজানুর রহমান খান,ডা. মাসুদুল ইসলাম দুখু, ডা. আবদুল মজিদ,ডা. গোলাম হায়াত,ডা. মেহেদী জামান,ডা. সোহেল, এমট্যাবের হাফিজুর রহমান, ডা. আরিফুর রহমান. ডা. মামুন প্রমুখ।
ডা. জাহিদ বলেন,আইনের শাসন না থাকায় এখন ঘরে-বাইরে কারও জীবনের নিরাপত্তা নেই। কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়- এমন নির্দোষ মানুষকেও অপরাধী বানিয়ে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তার করে কারান্তরীণ করা হচ্ছে, রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এমন কি হত্যা করা হচ্ছে। নওগাঁর সুলতানা জেসমিনকে রাস্তা থেকে র্যাব তুলে নেয়ার পর পরিবারের কাছে লাশ ফেরত দেয়া হয়েছে। কি দোষ ছিল জেসমিনের এখনো জানাতে পারে নি সরকার। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি পর্যন্ত নেই আজ দেশে।'
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বর্তমানে চাল, ডাল, লবণ, চিনি, তেল, মাছ-মাংস, মুরগি, ডিম এমনকি কাঁচামরিচসহ সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এতে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। টিসিবির পণ্য কিনতেও রীতিমতো যুদ্ধ করছেন মানুষ। চাল না পেয়ে ট্রাকের নিচে পড়ে থাকা চাল কুড়িয়ে মানুষ ক্ষুধা নিবারণ করছেন। অথচ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ না নিয়ে ব্যর্থ এ সরকার বিরোধীদল ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ ও দমনে ফ্যাসিবাদী কায়দায় ধারাবাহিকভাবে জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।’
দেশে এক ভয়ানক দু:শাসন চলছে উল্লেখ করে পেশাজীবীদের এ নেতা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হওয়ায় মানুষ আজ ন্যায় বিচার বঞ্চিত। অপরাধীরা দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। প্রতিবাদকারিরা হচ্ছে জুলুমের শিকার। আজ মানবাধিকার র্যাবের তপ্ত বুলেটে ক্ষতবিক্ষত।গণতন্ত্র পুলিশের বুটের তলায় পৃষ্ঠ। মানবতা আজ "আয়নাঘরে" আহাজারি করছে। মানুষের ভোটাধিকার লুণ্ঠন করা হয়েছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে বাকস্বাধীনতা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শৃঙ্খলিত করা হয়েছে।হরণ করা হয়েছে গণতন্ত্র। স্বৈরতন্ত্রের খোলসের ভেতরে দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার আজ মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে। গুম, খুন, বিনাবিচারে হত্যা, ধর্ষণ সহ্যসীমা ছড়িয়ে গেছে।এ থেকে পরিত্রাণ দরকার। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন রাতের আঁধারে লুট হয়ে যাওয়া মানুষের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। লুণ্ঠিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নিশ্চিত করা।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, দেশ আজ একটি দল ও পরিবারের হাতে জিম্মি। কোথাও কাউকে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে না। বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। স্বাধীন দেশে আজ ভিন্ন মত দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদী শাসনের সামাজিক ভিত্তি রচনা করা হচ্ছে। ক্ষমতার লিপ্সা রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে, রাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। সুতরাং দেশ ও জনগণের স্বার্থেই এ অবৈধ আওয়ামী সরকারের পতন ও রাষ্ট্র মেরামত আবশ্যক হয়ে পড়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে জনগণের শাসন। আর এই শাসন ব্যবস্থা আবর্তিত হয় মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’-এটাই মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মূল শর্ত। দুর্ভাগ্য মানুষ এখন আর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছে না।আমরা দেখলাম, দিনের ভোট আগের দিন রাতেই হয়ে গেছে। সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনেও আইনজীবীরা ভোট দিতে পারে নি।এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকরা ভোট দিতে পারে নি।এভাবে সর্বস্তরে ভোটাধিকার হরণ করা হচ্ছে।ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া মানে গণতন্ত্রকে হত্যা করা।যা প্রতিনিয়ত এ বিনাভোটের সরকার করছে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে এর চাইতে বড় লজ্জার বিষয় আর কিছু হতে পারে না।