এমপি একরামের ‘শক্তি প্রদর্শনের’ সমাবেশ বর্জন আওয়ামী লীগের

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, ‘সমাবেশটি সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত মিটিং। তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এখন নিজের শক্তি প্রদর্শন করতেই তিনি এ সমাবেশ ডেকেছেন। এর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।

এমপি একরামের ‘শক্তি প্রদর্শনের’ সমাবেশ বর্জন আওয়ামী লীগের
সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন সংসদ সদস্য একরামুল করিম

প্রথম নিউজ, নোয়াখালী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তির প্রতিবাদে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ডাকা সমাবেশ বর্জন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। তাদের দাবি এটা প্রতিবাদের নামে সংসদ সদস্য একরামের ‘শক্তি প্রদর্শনের’ সমাবেশ।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নোয়াখালী পৌর শহরের আবদুল মালেক উকিল সড়কের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সামছুদ্দিন জেহানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- সাবেক স্পিকার প্রয়াত আবদুল মালেক উকিলের ছেলে বাহার উদ্দিন খেলন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্ট, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, নোয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও অ্যাডভোকেট গুলজার আহমেদ জুয়েল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান আরমান, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত আদনান, একরাম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী।

সমাবেশে সংসদ সদস্য একরামুল করিম বলেন, ‘কিছু মানুষ মনে করেছে, আমাকে পদ থেকে সরালে আমার রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমার জনপ্রিয়তা আগে যা ছিল, এখন তা আরও অনেক বেড়ে গেছে। আমি যতদিন ধরে রাজনীতি করছি, রক্তের বিনিময়ে নেতাকর্মীদের ভালোবাসা দিয়েছি। আপনারা ভালোবাসা দেননি। খাওয়ার সময় একা একা খেয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার নেত্রীর বিরুদ্ধে কথা বললে কাউকে আমি ছাড় দেবো না। তাকে গালি দেওয়া আর আমার কর্মীকে গালি দেওয়া একই কথা। বাংলাদেশের যে প্রান্ত থেকেই নেত্রীকে গালি দেওয়া হোক আমি এর প্রতিবাদ করবো। আমার নেত্রীকে কটূক্তি করা আমি কোনোভাবেই বরদাশত করবো না।’

এদিকে একরামুল করিম চৌধুরীর ডাকা সমাবেশে যোগ না দিয়ে তা বর্জন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। সমাবেশে দলের আহ্বায়ক, দুই যুগ্ম-আহ্বায়কসহ শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতাকেই দেখা যায়নি।

এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, ‘সমাবেশটি সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত মিটিং। তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এখন নিজের শক্তি প্রদর্শন করতেই তিনি এ সমাবেশ ডেকেছেন। এর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। দলের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের সভা আহ্বান করার কোনো এখতিয়ার তার আছে বলে আমি মনে করি না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাবেশে লোকসমাগম নিশ্চিত করতে সদর উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে লোক এনে জড়ো করা হয়। তাদের আসা-যাওয়ার জন্য ৩৫০টি বাস ভাড়া করা হয়। ফলে দুপুর থেকে আন্তঃজেলাসহ দূরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে না যাওয়ায় দূর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

অন্যদিকে মাইজদীর প্রধান সড়ক আটকে সমাবেশ করায় তিন-চার ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে অ্যাম্বুলেন্সসহ যানবাহনের যাত্রীরা পড়েন বিপাকে।

একরামুল করিম চৌধুরী ২০০১ সালে নোয়াখালী-৫ আসনে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে বহিষ্কার হন। পরে ২০০৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বরের সম্মেলনেও তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

প্রস্তাবিত কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠার পর ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। পরে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ৮৭ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়, যাতে একরামুলকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। কিন্তু তিনি ওবায়দুল কাদেরসহ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে বেফাঁস মন্তব্য করে একঘরা হয়ে পড়েন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় যোগ দিয়ে তিনি দলের নেতাদের কাছে অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা চান।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom