কাদেরের হুমকি বাস্তবায়ন করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী: রিজভী
আজ বুধবার (২৪ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হুমকি আওয়ামী চেতনায় লালিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বাস্তবায়ন করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, এই মাফিয়া সরকার সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের সমাবেশগুলোতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখা যায় না। সম্মেলনস্থলের চেয়ার খালি থাকে। তাদের গণভিত্তি ধ্বসে গেছে। তাই পেশীশক্তি, সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ওরা টিকে থাকতে চায়। তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের অবস্থা টলমল। তারা আতঙ্কিত।
আজ বুধবার (২৪ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে তাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখে ফ্যাসিবাদী হুংকার শুনেছেন নিশ্চয়ই। ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দিয়ে বলেছেন, বিএনপিকে ঠান্ডা মাথায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। দুইদিন আগেও তিনি বলেছিলেন, এখন থেকে শান্তি সমাবেশ নয়, সারাদেশে বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে হবে। বিএনপির আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরসহ তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এই হুংকারের পর বিএনপির ওপর হামলা-মামলা-আটকের অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পুলিশ, র্যাব, সোয়াট বাহিনী। সাইন্স ল্যাবরেটরী এলাকায় আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বিনা উস্কানীতে হামলা করেছে পুলিশ ও আওয়ামীলীগের বিশেষ গুঁড়িয়ে দেয়া বাহিনী। বৃষ্টির মতো টিয়ারগ্যাস রাবার বুলেট ছুঁড়েছে। আমাদের বহু নেতাকর্মীকে আহত করেছে। রাজপথের সাহসী কন্ঠস্বর সরকারের আতংক বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শেখ রবিউল আলমসহ ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। অতীতের মতো আবারো বাসে আগুন দিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপানোর পুরানো নাটক শুরু করেছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এটি সরকারের একটি অশুভ পরিকল্পনা। এই মামলাতেও আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নিয়ে আওয়ামী প্রধান এই মামলা থেকে নিজের নাম বাদ দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দেশনেত্রী বেগম জিয়ার বিচারকার্য চালানো হচ্ছে। কারণ অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্রমাণত্বক ভাষায় কথা বলতে ভালবাসেন। শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া, তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবার ও বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে বিনয়-শিষ্টাচারের কোন তোয়াক্কা করেন না। নিপীড়ণের খড়গ চালিয়ে যেতে তিনি আইন আদালতকে নাৎসীবাদী ক্ষমতার দ্বারা যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন। নাইকো মামলায় বেগম জিয়ার বিচারকার্য শুরু সম্পূর্ণরুপে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উগ্রতা ও প্রতিহিংসা। শেখ হাসিনা তার বিরোধীদের জীবন, সম্পদ, সম্পত্তি, নিরাপত্তা সম্পূর্ণরুপে বিপন্ন করে যাচ্ছেন।
রিজভী বলেন, গণআন্দোলনে ভীত-সন্ত্রস্ত আওয়ামী লীগ খেই হারিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণা দিয়ে বিএনপির ওপর নারকীয় উন্মত্ততায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বৈঠক করে পরিকল্পিতভাবে বিএনপির নেতাকর্মী ও মিছিল-সমাবেশের ওপর হামলা চালাচ্ছে, গুলি চালাচ্ছে। চারিদিকে তীব্র নিন্দার বিদায় ঘন্টায় তারা মরণ কামড় দিতে শুরু করেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই ভোট ডাকাত সরকারের হিংস্রতা প্রকট হচ্ছে। ভোটাধিকারের ন্যায্য দাবী, অত্যাচার, উৎপীড়ন, খুন, গুম, লুণ্ঠন, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীও সহ্য করতে পারছে না। ছাত্রলীগের বাছাই করা ক্যাডারদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে ঢুকিয়ে তাদের দিয়ে হায়েনার মতো হামলে পড়ে পদযাত্রা-মিছিল সমাবেশ ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়া হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গায়েবী মামলা, গ্রেফতার-নির্যাতনের চণ্ডনীতিতে নেমেছে নিশিরাতের সরকার। সারাদেশের জনপদের পর জনপদ আওয়ামী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অস্ত্রসজ্জিত করা হয়েছে এবং উজ্জীবিত করা হয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করতে।
রিজভী বলেন, রাজশাহীতে পুলিশ অঘোষিত সান্ধ্য আইন জারি করেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে তাণ্ডব চালিয়েছে। ঢাকা থেকে সোয়াট বাহিনী গিয়ে রাজশাহী বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলায় ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে। গত পরশুদিন সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ শামীম সরকারকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে এখনও স্বীকার করছে না। এটি দল এবং তার পরিবারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরো বলেন, ঢাকার আগে খুলনা, পটুয়াখালী, নেত্রকোনা, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সহিংস হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের গুরুতর আহত করাসহ মহাসমারোহে পতনোন্মুখ সরকারের মন্ত্রী এমপিরা রাজপথে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই ঘৃণ্য হামলা চালাচ্ছে।
রিজভী বলেন, গত ১৫ বছরের মতো আবারও ভাওতাবাজির নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে মাফিয়া সরকার পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি করে দেশে নৈরাজ্য ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। সরকার যদি বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে দলীয় ক্যাডার ও পুলিশ দিয়ে হামলা ও বাধা প্রদানের এ ধারা অব্যাহত রাখে, তাহলে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। এর জন্য সৃষ্ট যেকোন উদ্ভুত পরিস্থিতির দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার হুংকারের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ তার লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দেয়ার চরিত্র বদলায়নি। তারা যে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিহ্ন করেছে সেটি ফিরিয়ে দিতে এখনও অনিচ্ছুক। কারণ তাদের মনোযোগের কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে মহাদুর্নীতি ও টাকা পাচার। জনগণের টাকায় তারা ফুর্তিবাজি করছে। এই কারণেই তারা ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়।
তিনি বলেন, জনগণ এই ফ্যাসিবাদী নিশিরাতের সরকার উৎখাতে রাস্তায় নেমে পড়েছে। হাটে মাঠে ঘাটে মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। আন্দোলনে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিএনপির তৃণমূলের শক্তি এখন সবচেয়ে জোরালো। বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শণ এদেশের মৃত্তিকা থেকে উৎসারিত। তাই একে উপড়ে ফেলা এত সহজ নয় ৷ রক্তপিপাসু মনোভাব পরিত্যাগ না করলে আওয়ামী লীগ চিরতরে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, পুলিশ ভাইদের বলবো, অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষ নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন না। এই সরকারই শেষ সরকার নয়। জনগণের সরকার অচিরেই প্রতিষ্ঠিত হবে। মাফিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হবে খুবই শোচনীয়। অতি বাড়াবাড়ি যারা করবে তাদেরকে উপযুক্ত পরিণতি ভোগ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম,আবুল খায়ের ভূইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।