কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা হেফাজতের

নেতারা বলছেন, কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে বার বার দাবি তোলা হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি।

কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা হেফাজতের

প্রথম নিউজ, অনলাইন: কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি পূরণ না হওয়ায় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার চিন্তা করছে হেফাজতে ইসলাম। নেতারা বলছেন, কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে বার বার দাবি তোলা হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। বিভিন্ন সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সরকার এসব বিষয়ে আশ্বাস দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন শীর্ষ নেতারা। এমনকি একাধিক শীর্ষ নেতাকে সরকার নানাভাবে হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ। এজন্য আগামী ভোটের আগেই সব মামলা ও কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির বিষয়টির সুরাহা চায় হেফাজত। 

একাধিক হেফাজত নেতা জানান, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হেফাজতের অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। অনেকে কারাবন্দি হয়েছেন। পরবর্তী সময়েও অনেকে কারাগারে গেছেন। ২০২১ সালের ঘটনায় হেফাজতের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সময়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সরকার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু নেতারা মুক্তি পাচ্ছেন না। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, এই মুহূর্তে হেফাজত দুটি বিষয়ে সুরাহা চায়। একটি নেতাকর্মীদের মুক্তি, অন্যটি সকল মামলা প্রত্যাহার। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। এই নির্বাচনে হেফাজত অংশ না নিলেও সরকারকে চাপে রেখে নেতাকর্মীদের কারামুক্ত করতে কাজ করছেন তারা। নেতারা মনে করছেন, আগামী নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বর্তমানে সরকার চাপের মধ্যে রয়েছে। এই সময়ে নতুন কর্মসূচি দিয়ে সরকারের ওপর আরও চাপ বাড়ালে নেতাকর্মীদের মুক্তির বিষয়টি সামনে আসবে। অন্যথায় সরকার বিষয়টি আমলে নিতে চাইবে না। 

নেতারা বলেন, সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে নতুন কমিটি শিগগিরই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন শীর্ষ নেতারা। মাঠের কর্মসূচিতে নামতে শীর্ষ নেতৃত্বকে তাগিদ দিচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী বলেন, হেফাজত একটি ইসলামিক সংগঠন। অরাজনৈতিক সংগঠন। নির্বাচন নিয়ে হেফাজতের কোনো ভাবনা কিংবা চিন্তার বিষয় নেই। নির্বাচনের সঙ্গে হেফাজতের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের গঠনতন্ত্রে এসব বিষয়গুলো নেই। তবে ২টি মৌলিক দাবি রয়েছে- এরমধ্যে যেসব ওলামায়ে কেরাম কারাবন্দি রয়েছেন তাদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। ২০১৩ সালের পর থেকে ২০২১ সালসহ হেফাজত নেতাদের নামে যেসব মামলা হয়েছে সেসবগুলোর প্রত্যাহার চাই। বিভিন্ন সময়ে এসব মামলা ও হেফাজত নেতাদের মুক্তির দাবিতে আমার আন্দোলন করে আসছি। কর্মসূচিও পালন করছি। কয়েকবার আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা কর্মসূচি দিলেও আমাদের দাবি মানা হয়নি। সামনের দিনে আলাপ-আলোচনা করে এই দুইটি দাবিতে কর্মসূচি আসতে পারে। 

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ড. আহমেদ আব্দুল কাদের বলেন, আমরা কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে আছি। এজন্য সরকারকে বার বার বলে আসছি, হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দিন। সরকার আমাদের আশ্বাস দিলেও কাউকে মুক্তি দেয়া হয়নি। কারাবন্দি নেতাদের মুক্ত করতে আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাবো। সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো হবে। খুব শিগগিরই শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মিটিং করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই মুহূর্তে আমাদের চাওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার। হেফাজত সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে মাওলানা মামুনুল হক, মুনির হোসেন কাসেমী, নূর হোসাইন নূরানী, রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা কারাগারে আছেন। মামুনুল হকসহ শীর্ষ কয়েকজন নেতার একাধিক মামলা বিচারাধীন। প্রায় আদালতে হাজিরা দিতে হয় তাদের। এ ছাড়া গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন মামলায় আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন অনেকে। 

সূত্র জানায়, সংগঠনের কিছু নেতা এতদিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করে আসছিলেন। এই ইস্যুতে আন্দোলন বা কর্মসূচির বিষয়ে তারা অনেকটা নীরব ছিলেন। সদ্য ঘোষিত কমিটির নেতারা মনে করছেন আলোচনা করে আর লাভ হবে না। কঠোর অবস্থান নিয়ে দাবি আদায় করতে হবে।