গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক বিশ্বের সহযোগিতা চায় বিএনপি
আজ বুধবার ঢাকা মহানগর বিএনপির মিরপুর জোনের উদ্যোগে জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং পুলিশের গুলিতে ভোলায় ছাত্রদল নেতা নুরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জে যুবদল নেতা শাওন হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে বিএনপি গণতান্ত্রিক বিশ্বের সহযোগিতা চায় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
আজ বুধবার ঢাকা মহানগর বিএনপির মিরপুর জোনের উদ্যোগে জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং পুলিশের গুলিতে ভোলায় ছাত্রদল নেতা নুরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জে যুবদল নেতা শাওন হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। এই সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমাননের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিল নিয়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের কর্মীরা এখনও ফাইনাল খেলায় নামেনি। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে যারা আছেন, জনগণের পক্ষে থাকেন। আমাদের সাথে মিছিল করার দরকার নেই। লুটেরা খুনি এই সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য অতি উৎসাহ প্রকাশ করলে এর জবাব দিতে জনগণ বাধ্য হবে। এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের জন্য যারা রক্ত দিয়েছেন, তাদের কারো রক্ত বৃথা যেতে পারে না। অতীতে কারো রক্ত বৃথা যায়নি। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি, গণতন্ত্র এনেছি; রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীনতা রক্ষা করব এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি আর প্রতিবেশী এবং আপনাদের আশেপাশে কিছু সংস্থার লোকরা ঝুঁড়ি নিয়ে নেতাদের বাসায় যায়, আর দুইশ আসন শেখ হাসিনার জন্য...। আসন কী কারো বাপের? যে দেশের লোকেরা এটা করেন, আমরা কি তাদের দেশে বাস করি? স্বাধীন বাংলাদেশে কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলবেন। আমাদের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করবেন না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে আহ্বান থাকবে, জনগণের গণতান্ত্রিক এই লড়াইয়ে বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকুন। আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমরা গণতান্ত্রিক বিশ্বের সদস্য হিসেবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার প্রশ্নে আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমাদের ক্ষমতায় এনে দিতে হবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে ক্ষমতায় বসাবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগের একটি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এরশাদ সাহেব আপনি নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে-এ কথা বলেছিলেন সুজাতা সিং। কিন্তু সম্প্রতি, ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার বললেন আমরা কোনো ব্যক্তি বা দলের পক্ষে নই। বহুদিন পরে বলল-এ কথাটার মানে বুঝতে হবে। তারা এই বোঝা বহন করে আর কলঙ্কিত হতে চায় না। কারণ, তারাও একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তাদেরও তো অন্যান্য দেশের সাথে চলতে হয়। জবাব দিতে হয়। সুরতাং শেখ হাসিনার সব খেলা শেষ। সাহায্য আনতে গিয়ে সাহায্য পায়নি-নিশ্চিত থাকেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, এখন দিনের ভোট রাতে কাটারও লোক নেই। সে কারণে ভোট দিনেই হবে। শেখ হাসিনাকে ছাড়াই হবে অর্থাৎ তার পদত্যাগ নিশ্চিত করতেই হবে। আপনারা যেভাবে জেগে উঠেছেন, সামনে এগুবার পথটা অব্যাহত রাখতে হবে। যদি চিকন লাঠিতে না পোষায়, এরপরে প্রত্যেকের হাতে মোটা মোটা বাঁশের লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামবেন। কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। আমার ভাই মরেছে, মরতে হয় আমিও মরব। তবে, রক্তের ঋণ পরিশোধ করব। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব।
দেশে শতকরা ৫ ভাগ পুলিশ খারাপ উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যদের বলব, আপনাদের ভুল বোঝানো হয়। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আপনাদের চাকরি থাকবে না। এটা অত্যন্ত ভুল ধারণা। আমরা জানি কোনটা ইচ্ছায় কোনটা অনিচ্ছায়। এই কান্ডজ্ঞান বিএনপি নেতাদের আছে। সবার তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাওয়া যাবে। আমাদের শত্রু ভাববেন না, আপনারা জনগণের পক্ষে আসেন। জনগণ আপনাদের সম্মান করবে। মনে করবেন না, আপনাদের পোশাককে ভয় করে, তারা আপনাদের পোশাককে সম্মান করে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যে খালেদা জিয়া ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে গণতন্ত্র এনে দিয়েছেন। তাকে বিনা কারণে জেলখানায় আটক করা হয়। যে তারেক রহমানের কোনো মামলা প্রমাণিত হয় না, তারপরও আদালত শেখ হাসিনাকে খুশি করতে তাকে দন্ড দিয়ে রায় দিয়েছে। তিনি এখন দেশের বাইরে থেকে চলমান আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাকে সহযোগিতা করতে আপনারা আন্তরিকতা ও সফলতার স্বার্থে ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। ওরা পরাজিত হবে, পালাতে চাইবে। কিন্তু পালাতে দেব না। বিজয় আমাদের হবেই। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বক্তব্যের পর্ব অনেক হয়েছে, বক্তব্যে সরকার যাবে না। আর বক্তব্যে দেশ স্বাধীন হয় নাই। দেশ স্বাধীন হয়েছে যুদ্ধে, সেই যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলন জিয়াউর রহমান এ কথা সঠিক? উপস্থিত নেতারা সমস্বরে বলেন ঠিক।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরো বলেন, এই সরকার কোনো কিছুর দাম কমাবে না। আমাদের প্রথম দায়িত্ব এই সরকারকে নামানো। এরপর অবাধ সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জনগণ যাদের ক্ষমতায় বসাবে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছু দাম কমাবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। এই আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে কোনো দাবি করে লাভ নেই। তাই, জনগণের দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এই সমাবেশে আসার সময় আপনাদের হাতে ছোট ছোট লাঠির মাথায় পতাকা ছিল। পুলিশ তা রেখে দিতে চেয়েছিল। আপনারা দেননি। এরপর মোটা মোটা বাঁশির লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। প্রত্যেকের হাতে লাঠি থাকবে। কাউকে আঘাত করার জন্য নয়; আমাদের চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের আত্মরক্ষার জন্য। আঘাত আসলে তো পাল্টা আঘাত করতেই হবে। সেখানে তো ছাড় দেয়ার কোনো উপায় নেই।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে গত দুটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল, বনানীতে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে তার ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এর চেয়ে শান্তিপূর্ণ কী কর্মসূচি হতে পারে। সেখানে তাবিথ আাউয়ালের মতো সুশিক্ষিত এবং তরুণ নেতার ওপর হামলা করল। তাবিথ কে তা আওয়ামী লীগ ভালো করে জানে। তার ওপরে আঘাত করার পর দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিবাদ এসেছে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বহু দেশ থেকে প্রতিবাদ এসেছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তাবিথ আউয়াল ও বরকত উল্লাহ বুলুকে কে আঘাত করেছে? তাদের ধরেন। জনগণের সামনে বলবেন এক কথা আর কানে কানে বলবেন ভিন্ন কথা। মানুষ এগুলো বোঝে। নুরে আলম, আবদুর রহিম, শাওনকে কারা হত্যা করেছে? কর্মসূচি ছিল না, তারপরও কেন কেরাণীগঞ্জে আমার বাড়িতে হামলা করা হলো? নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাসুদের বাড়িতে রাতে আগুন দেয়া হলো, বই পুড়িয়ে দেয়া হলো, কী কারণে? কেন তার বাবা-মায়ের গায়ে হাত তোলা হলো। কেন তার শিশু ভাইকে নির্যাতন করা হলো? আপনারা আমাদের বাড়িঘরে আক্রমণ করেন, আপনাদের বাড়িঘরও কিন্তু আমরা চিনি। পাল্টা কাজটা যদি আমরা শুরু করি পালানোর জায়গা পাবেন?
তিনি আরো বলেন, আমরা এখনও আন্দোলন শুরু করিনি। কিন্তু শুরু করলে...। ওবায়দুল কাদের জেলখানা থেকে (ওয়ান-ইলেভেন) ফিরে এসে বলেছিলেন আর রাজনীতি করব না। সেই দিনগুলো সামনে আসতেছে। সেই কথা বলার সময় এসেছে। দেশের মালিকানা জনগণকে ফিরিয়ে দিতেই বিএনপি আন্দোলন করছে উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই আন্দোলন আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয়। জনগণকে তার মালিকানা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আমরা আন্দোলন করছি। দশ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে তার হিসাব চাই। জনগণকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে চাই। অত্যাচারকারীদের বিচার চাই, শাস্তি চাই।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা বজলুল বাছিত আঞ্জু, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ^াস, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজ্জামেল হক, আমিনুল ইসলাম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।