‘চাকরিটা চলে গেলে পাগল হয়ে যাব’

আউটসোর্সিংয়ে লোকবল নিয়ে সমস্যা হবে। কারণ তারা দক্ষ না। আর যারা বাদ পড়ছে তারা দক্ষ। আর ঠিকাদারের আন্ডারে গেলে ঠিকাদার ঠিকমতো বেতন দেবেন না। তখন নানা সমস্যা হতে পারে।

‘চাকরিটা চলে গেলে পাগল হয়ে যাব’

প্রথম নিউজ, রাজশাহী: ‘হরতালের সময় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি শুরু হয়। তখনই কমিউটার ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে রাজশাহীতে আসছিল। ট্রেন কাছে আসায় দুই ব্যারিয়ার গেট লাগিয়ে দেই। রেললাইনের উপরে পতাকা উড়াচ্ছিলাম। এ সময় একটি রাবার বুলেট গালে লাগে। এখনও চিহ্ন আছে। আসলে আমাদের এই চাকরিতে কোনো মূল্যায়ন নেই। আবার চাকরিটা চলে গেলে পাগল হয়ে যাব।’ 

শনিবার (১০ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে রাজশাহী কোর্ট স্টেশনের পাশের রেলক্রসিংয়ে কথাগুলো বলছিলেন ৪৫ বছর বয়সী গেটকিপার রফিকুল ইসলাম ভোলা। ভোলা এই গেটে (ই-৩৯) ১৩ বছর ধরে কাজ করছেন। শুরুতে তার বেতন ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা। বর্তমানে বেতন ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। এই টাকায় ভোলার চারজনের সংসার চলে। স্ত্রী গৃহিণী এবং দুই মেয়ের মধ্যে রাফিনা খাতুন অষ্টম আর সাফিনা খাতুন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

স্থানীয়রা জানায়, গেটকিপার ভোলার চাকরি তার সততার জন্য হয়েছে। তিনি গেটকিপার না, তার পরও জনস্বার্থে গেটকিপারের দায়িত্ব পালন করার কারণেই রেলওয়ের বড় কর্মকর্তারা চাকরিটা দেয়। ভোলা আর একজন ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করত। পরে আরেকজনকে নিয়োগ দিয়েছে রেলওয়ে। এখন তারা তিনজন এই গেটে পালা করে দায়িত্ব পালন করেন।

রফিকুল ইসলাম ভোলা বলেন, ‘এই গেটের পাশেই আমার চায়ের দোকান ছিল। এক দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রেলওয়ের স্যাররা টাউলিতে (তেলচালিত ছোট গাড়ি) করে যাচ্ছিলেন। এ সময় এই গেটের গেটকিপার ছিল না। আমি দ্রুত গিয়ে গেট ফেলি। তারপর বড় স্যার আমাকে (ভোলা) চাকরি দেয়। আর এখানকার তিনজন গেটকিপারকে বাদ দেয়। তারপর থেকে আমি এখানে কাজ করি।’

একই রেলক্রসিংয়ে গেটকিপারের দায়িত্ব পালন করেন শামিউল ইসলাম জীম ও সোলাইমান। তাদের চাকরির মেয়াদ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। ফলে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হবে ভোলা, জীম ও সোলাইমানের মতো ১ হাজার জনকে। তারা রেলওয়ের দৈনিক মজুরিপ্রাপ্ত লোকবল। 

গেটকিপার শামিউল ইসলাম জীম বলেন, ‘আমি চার বছর ধরে এই পদে চাকরি করি। শুনছি আমাদের চাকরি থাকবে না। বাড়িতে মা-বাবা ও বোন মিলে চারজনের সংসার। আমার আর বাবার টাকায় চলে আমাদের পড়ালেখার আর সংসারের খরচ। চাকরি না থাকলে আর কিছু করার নেই। বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। এমনিতে দুই-তিন মাস পরপর বেতন পাই। এখনও অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন বাকি আছে। তারপরও আমরা কষ্ট করে চলছিলাম। তিনি বলেন, আমার বাবাও দীর্ঘ দিন ধরে রেলক্রসিংয়ে গেটকিপারের চাকরি করছেন। তিনিও টিএলআর। তারও চাকরির মেয়াদ একই দিনে শেষ হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে টিএলআর শ্রমিক পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুর রহমান বলেন, পশ্চিম রেলওয়েতে এক হাজার টিএলআর শ্রমিক কাজ করেন। এই টিএলআর শ্রমিকদের মধ্যে বেশ কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ রয়েছে। যেমন রেলক্রসিংয়ে গেটকিপার, পয়েন্টম্যান। এছাড়া আরও ১৩-১৪টি পদে টিএলআর লোকবল কাজ করে। তাদের আগামী ৩১ ডিসেম্বর চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দুইবার দেখা করে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, তোমাদের বিষয় ঠিকাদারদের বলব। এক কথার উত্তরে তিনি বলেন, আউটসোর্সিংয়ে লোকবল নিয়ে সমস্যা হবে। কারণ তারা দক্ষ না। আর যারা বাদ পড়ছে তারা দক্ষ। আর ঠিকাদারের আন্ডারে গেলে ঠিকাদার ঠিকমতো বেতন দেবেন না। তখন নানা সমস্যা হতে পারে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত টিএলআরদের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। এতে করে পশ্চিম রেলওয়ের ১ হাজার টিএলআর শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। তাদের মধ্যে অনেকেরই বয়স ৪০ এর মতো।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom