জেএমবির আমির সালেহীনের একান্ত সহযোগীসহ গ্রেপ্তার দুই

প্রথম নিউজ, গাজীপুর : জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর বর্তমান আমির সালাউদ্দিন সালেহীনের একসময়ের একান্ত সহযোগী ও সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত জেএমবি’র সদস্যসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন দারুল আকরাম একাডেমির পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে এটিইউ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- জেএমবি’র ওয়ারেন্টভুক্ত সক্রিয় সদস্য ও বর্তমান আমির সালাউদ্দিন সালেহীনের এক সময়ের একান্ত সহযোগী নুরুল ইসলাম (৪০) ও জেএমবি সদস্য মো. রাসেল (৩৭)।
গ্রেপ্তার নুরুল ইসলাম ময়মনসিংহ মুক্তাগাছার চণ্ডিপণ্ডপের (এলাচার পাড়) মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
এটিইউর মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মাদ ছানোয়ার হোসেন জানান, গ্রেপ্তার নুরুল ইসলাম নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তিনি তার বাবা ও ভাইসহ জেএমবির সূচনালগ্ন থেকে সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।
দীর্ঘ দুই যুগ সময় ধরে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সক্রিয় সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি ও জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য সাংগঠনিকভাবে কাজ করে আসছিল।
২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানাধীন চেচুয়া কুড়িপাড়া এলাকায় অবস্থিত ব্র্যাক (আরডিপি) অফিসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
এ সংক্রান্ত মুক্তাগাছা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। জেএমবির শুরা সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীনকে গ্রেপ্তার করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লিখিত চাঞ্চল্যকর ডাকাতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ ডাকাতি মামলার আসামিদের শনাক্ত গ্রেপ্তার করে এবং ২০০৭ সালের ৫ অক্টোবর আসামি নূরুল ইসলামসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
নুরুল ইসলাম মামলার শুরু হতেই পলাতক ছিল। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন।
অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন ধরে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা চালিয়ে অবশেষে তাকে তার সর্বশেষ অবস্থান গতরাতে টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
এটিইউর অপর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সিএমপির পাঁচলাইশ থানাধীন নাসিরাবাদ স্টিল মিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জেএমবির সক্রিয় সদস্য এবং সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. রাসেলকে গ্রেপ্তার করে।
রাসেল লালমনিরহাট পাটগ্রামের ঘোনাবাড়ী পাঠানবাড়ী এলাকার রফিকুল ইসলাম ওরফে মনজুলের ছেলে।
রাসেল লালমনিরহাট জেলার অন্যতম দায়িত্বশীল হিসেবে ২০০০ থেকে জেএমবির কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। তিনি সে সময় থেকেই নিয়মিতভাবে সংগঠনে চাঁদা প্রদান ও সাংগঠনিক কাজে অর্থ ব্যয় করে আসছিল।
২০০৮ সালের ৯ ডিসেম্বর নীলফামারী জেলার ডিমলা থানাধীন দক্ষিণ খড়িবাড়ি এলাকায় নাশকতার পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক চলাকালে জেএমবি’র এহসার সদস্য গোলজার হোসেনকে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসময় গ্রেপ্তার রাসেলসহ অন্যান্য সহযোগী আসামিরা কৌশলে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। এ সংক্রান্ত ডিমলা থানায় মামলা হয়।
মামলার বিচারকাজ শেষে আদালত আসামি রাসেলসহ ৪ জনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। আসামি রাসেল দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থেকে পলাতক ছিল। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।