‘জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে’
ইনসাফ কায়েম কমিটির গণসমাবেশে বক্তারা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির উদ্যোগে রাজধানীতে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত হন। এ সময় ইনসাফ কায়েম কমিটির নেতারা জাতীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের জোর দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও জাতীয় সরকার গঠনের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই সরকারের অধীনে কখনো কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। এজন্য আগে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে হবে। সেই গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী শক্তিগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে তাদের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এজন্য সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান নেতারা।
জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির আহ্বায়ক কবি ফরহাদ মজহার বলেন, এই মুহূর্তে দরকার জাতীয় সরকার। ইনসাফ কমিটি এমন একটা সরকার চাইছে যেখানে জনগণের সরকার ও ইনসাফের সরকার কায়েম করতে পারি। আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নই। কিন্তু আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন জানাই আপনারা একত্র হন। আপনারা ফ্যাসিস্ট সরকার উৎখাতের জন্য সংগ্রাম করেন। আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো কায়েম করতে হবে। ইনসাফ কমিটি সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। বর্তমান সরকারকে তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। ইনসাফ কমিটি কোনো পিকনিক করতে আসে নাই।
সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বাঙালিরা যে প্রতিবাদ করতে জানে তা আমরা এখানে এসে প্রমাণ করেছি। এই দেশে এখন অনেক মানুষের ঘুম হয় না বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল দেয়ার চিন্তায়। আরেকটি শ্রেণির ঘুম হয় না চুরির টাকা কোথায় পাচার করবে। কোন দেশে পাচার করবে। বর্তমান সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা ঠিক করেছেন এই টাকা তুমি ভোগ করতে পারবে না। বাংলাদেশ থেকে চুরি করা টাকা তারা সুইজারল্যান্ডে রাখে, আমেরিকায় রাখে। তারা ভাবে ওখানে গিয়ে বউ বাচ্চা নিয়ে আরামে ভোগ করবে। এই সুযোগ তারা পাবে না। আফগানিস্তানে আপনারা দেখেছেন একটা সরকার পালালে কি হয়। আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের একটাই দাবি, শেখ হাসিনার সরকারের আমরা পদত্যাগ চাই।
ইনসাফ কায়েম কমিটির সদস্যসচিব শওকত মাহমুুদ বলেন, জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি কোনো রাজনৈতিক দল নয়। আমরা চাই বাংলাদেশের মানুষ মানবিক অধিকার ভোগ করুক। আমরা দেখছি, গোটা রাষ্ট্রে একটা জালিম ব্যবস্থা। বর্তমান সরকার বছরের পর বছর তারা গুম করছে, মানুষ হত্যা করছে। মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। আমরা চাই জালিম সরকারের বিদায়। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে যাতে কোনো জালেম সরকার আসতে না পারে। আমরা সামাজিক ন্যায় বিচার চাই। সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে ৩৫ জনের উপরে সাংবাদিককে খুন করা হয়েছে। অথচ তারা বলে, সাংবাদিকরা নাকি সকল অধিকার ভোগ করছে।
তিনি বলেন, আমরা চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। শুধু নির্বাচন দিলেই হবে না। একটা জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতীয় সরকারের অধীনেই একমাত্র সম্ভব ইনসাফ কায়েম করা। যারা এই জালেম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেবে এবং বিজয়ী হবে তাদেরকে নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।
সমাবেশে কুমিল্লা, চাঁদপুর, টঙ্গী, টাঙ্গাইল ছাড়াও রাজধানীর মিরপুর, লালবাগ, পল্লবী এলাকা থেকে বাস-ট্রাক ও মাইক্রোবাসে করে নেতাকর্মীরা জড়ো হন। দুপুর দু’টায় এ সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও পুলিশের অনুমতি মেলেনি বলে বিকাল চারটার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। আয়োজক সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, পথে পথে তাদের নেতাকর্মীদের পুলিশ হয়রানি করেছে, বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সাংবাদিক নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের পরিচালনায় এ সময় আরও বক্তব্য দেন- সাংবাদিক আব্দুল আউয়াল ঠাকুর, ড. ফরহাত হোসেন খন্দকার, মাওলানা আশরাফুল হক প্রমুখ।