ঠিকাদারের অবহেলায় সেতুর কাজ বন্ধ, এলাকাবাসীর দুর্ভোগ

নদীর দুই পাশে আংশিকভাবে ১৮টি পিলার তৈরি হলেও গত চার মাসে পলি-মাটি জমে সেগুলো ঢাকা পড়েছে। এতে জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

ঠিকাদারের অবহেলায় সেতুর কাজ বন্ধ, এলাকাবাসীর দুর্ভোগ
কাঠ-বাঁশের তৈরি সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পারাপার

প্রথম নিউজ, খুলনা: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শালতা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ ছয় মাসেও শেষ হয়নি। নদীর দুই পাশে আংশিকভাবে ১৮টি পিলার তৈরি হলেও গত চার মাসে পলি-মাটি জমে সেগুলো ঢাকা পড়েছে। এতে জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

এলাকাবাসী ও সেতু সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময়কার খরস্রোতা নদীটি পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। ফলে সরকারি উদ্যোগে গত ২ বছর আগে খনন করা হয়। বর্তমানে নদীটি ৩০-৪০ ফুট চওড়া খালে পরিণত হয়েছে। অনেক বছর আগে থেকেই ওই স্থানে বড় স্টিল বডি-কাঠের সেতু ছিল। আর ডুমুরিয়ার এই প্রধান সড়কের দুই পাশে অসংখ্য দোকান-পাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান। কিন্তু নদী খননের সময় সেই কাঠের সেতুটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মানুষের চলাচল ও দোকান পাটে ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে পড়ে। ওই সময় এলাকার ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে মাত্র ১২ জোড়া বাঁশের খুঁটির ওপর জোড়া-তালি দিয়ে মানুষের চলাচলের জন্য একটা কাঠ-বাঁশের সেতু গড়ে তোলা হয়। তখন এলাকাবাসীর ওই দুরাবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সাবেক মন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এগিয়ে আসেন। তিনি সরকারের সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে ‘ডুমুরিয়া বাজার হতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সড়কে শালতা নদীর ওপর ৫০ ফুট লম্বা ও ১৩ ফুট চওড়া সেতুটি নির্মাণের পরামর্শ দেন। 

অফিস গত ফেব্রুয়ারিতে একই প্রকল্পের মধ্যে উপজেলার আরও ছয়টি নদী-খালের ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজও শুরু করে। আর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদার শেখ ওমর ফারুক এই সেতুটি নির্মাণের জন্য ৭৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় কার্যাদেশ পান। কিন্তু নির্ধারিত ছয় মাসের মধ্যে নদীর দুই পাশে মোট ১৮টি পিলারের অংশ বিশেষ তৈরি করে ফেলে রেখেছেন। আর চার মাস ধরে পলি-মাটি পড়ে পিলারগুলোও মাটির তলে চলে গেছে।


সেতু সড়কের পাশে মিষ্টির দোকান আছে গণেশ চন্দ্র পালের। তিনি বলেন, ‘কাঠের সেতুটি ভেঙে গেলে  চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় আমাদের বেচা-কেনাও বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমরা ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েই টাকা দিয়ে কাঠ-বাঁশের একটা সেতু তৈরি করি। সেটার ওপর দিয়েই এখন কোনোরকমে ‍যাতায়াত করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী কানাই চক্রবর্তী বলেন, ‘সেতু নেই বলে আজ আমাদের এত বড় বাজারে বেচা-বিক্রি নেই বললেই চলে। চায়ের দোকানদার আকব্বর মোড়ল বলেন, ‘ঠিকাদার চার মাস আগে ১৮টি পিলার তৈরি করেছিলেন। কিন্তু নদীর পলি পড়ে তা ঢাকা পড়ায় আজ পিলারের কোনও চিহ্নও নেই।’

সমাজসেবক মোশাররফ হোসেন কচি বলেন, ‘এলাকাবাসীর কষ্টের কথা বিবেচনা করে এমপি সেতুটি দিলেন। কিন্তু ঠিকাদার কাজ না করে ফেলে রাখায় প্রতিদিন ডুমুরিয়া উপজেলার নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ভাঙ্গা সেতু দিয়েই চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। ঠিকাদার শেখ ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সেতুর ১৮টি পিলার তৈরি করেছি। আর জোয়ার-ভাটার নদীতে গেলো বর্ষার পানির খুব চাপ থাকায় আমরা কাজটা করতে পারিনি। তবে দ্রুত কাজ শুরু করবো।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন জানান, একই প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় সাতটি গার্ডার সেতু তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ওই সাতটির মধ্যে উপজেলার আন্ধারমানিক বয়ারসিং দোয়ানিয়ার খালের ওপর সেতুটি ঠিকাদার খন্দকার শহীদুল ইসলাম কাজ শুরুই করেননি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডুমুরিয়া থানা সড়কের এই সেতুটি মেয়াদ শেষ হলেও আংশিক কাজ করেছে। তাই শর্ত ভঙ্গের জবাব চেয়ে দুই বার চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং তাকে কোনও বিলও দেওয়া হয়নি। সাবেক মন্ত্রী ও খুলনা-৫ কাঠ-বাঁশের তৈরি সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পারাপার(ডুমুরিয়া- ফুলতলা) আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘আমরা এলাকার মানুষের কষ্ট কমাতে অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু ঠিকাদারের কারণে এই অবস্থা মানা যায় না।’

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom