ডেঙ্গুতে আক্রান্ত-মৃত্যু বাড়লেও, মশার ওষুধ ছিটানোর কাজে নেই গতি
মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এতে নগরবাসীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এতে নগরবাসীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। নগরবাসীর অভিযোগ, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও সিটি করপোরেশন থেকে মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রমে কোনও গতি নেই। তবে চসিক কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, চট্টগ্রামের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ও বাসা-বাড়ির আশপাশে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চলছে।
এদিকে বছরের শুরুতে শুরুতে মশা নিয়ে পরিচালিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা টিমের এক জরিপে দেখা গেছে, নগরীতে মশার ঘনত্ব বেড়েছে। দুই ধরনের মশা ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। নগরীর মুরাদপুর সঙ্গীত এলাকার বাসিন্দা মো. ইউসুফ তালুকদার বলেন, ‘গত ৫-৬ মাস এ এলাকায় মশার ওষুধ ছিটাতে কাউকে আসতে দেখা যায়নি। অথচ মশা বেড়েছে, বেড়েছে মশাবাহিত রোগ আত্রান্ত হওয়ার সংখ্যা। কয়েল জ্বালিয়েও মশার উপদ্রুব থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ প্রতিবছর আমরা সময়মতো কর পরিশোধ করছি। তবে নাগরিক সেবার বদলে মিলছে ভোগান্তি।
নগরীর বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা শরীফুল রুকন বলেন, ‘মাঝে-মধ্যে তিন-চারমাস পর এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয়। এগুলো নামমাত্র কার্যক্রম। একবার ওষুধ ছিটানোর পর দুই-তিন মাসেও স্প্রেম্যানদের দেখা মেলে না। দায়িত্ব অবহেলা ও গাফিলতির দায়-দায়িত্ব সিটি করপোরেশন কিছুতেই এড়াতে পারে না।’
কোথায়, কত রোগী ও মৃত্যু: সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় (রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ৬৪ জন নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৩৭ জন সরকারি হাসপাতালে এবং ২৭ জন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চট্টগ্রামে এ বছর এক হাজার ৫৮৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মারা গেছেন ১২ জন। তিনি আরও জানান, আক্রান্তদের মধ্যে নগরীতে এক হাজার ১৬৫ জন ও জেলায় রোগী ৪১৮ জন। এরমধ্যে জানুয়ারিতে ৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে চার জন, মার্চে এক, এপ্রিলে তিন, জুনে ১৯ জন, জুলাইয়ে ৬৪, আগস্টে ১১৪ জন, সেপ্টেম্বরে ৬০১ ও অক্টোবরের ১৬ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৭৫০, নারী ৪৩৩ ও শিশু ৪০০ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলা পর্যায়ে সীতুকুণ্ডে ১১০ জন, কর্ণফুলীতে ৬৩ জন, সাতকানিয়ায় ৪৪ জন, পটিয়ায় ৪১ জন, হাটহাজারীতে ৩৫ জন, বাঁশখালীতে ও লোহাগাড়ায় ১৭ জন করে, বোয়ালখালীতে ১৬ জন, মীরসরাইয়ে ১৪ জন, রাউজানে ১৩ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১২ জন, চন্দনাইশে ১১ জন, আনোয়ারা ও ফটিকছড়িতে ১০ জন করে, সন্দ্বীপে পাঁচ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১২ জনের মধ্যে চার জন শিশু, মহিলা ছয় ও পুরুষ রোগী দুই জন।
যেসব এলাকায় রোগী বেশি: রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে নগরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি এমন পাঁচটি স্থান চিহ্নিত করে। পরবর্তীতে তা চসিক কর্মকর্তাদের অবহিত করে প্রতিনিধিদল। পাঁচ স্থানের মধ্যে রয়েছে হালিশহর, আগ্রাবাদ, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডবলমুরিং এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকা।
এখনের আক্রান্তরা বেশি ঝুঁকিতে: সীতাকুণ্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন ৭-৮জন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। বর্তমানে ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা গত মাসে আসা রোগীদের তুলনায় খারাপ। যেমন প্রেসার কম থাকে, নাক দিয়ে রক্ত পড়ে, অনেক রোগীর প্লাটিলেট (অনুচক্রিকা) কম পাওয়া যাচ্ছে। এসব রোগীদের ক্ষেত্রে সুস্থ হতে সময় বেশি লাগছে।’
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে। বর্তমানে ৬১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এরমধ্যে ৩২ জনই শিশু। বাকিরা প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ। দিনি দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’
সিটি করপোরেশনের দাবি: ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় কাজ করছে না, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাশেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষায় সচেতন করার পাশাপাশি রোগের বাহক এডিস মশা নিধনের কাজ চলছে। নগরীর প্রতিটি হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ এবং নগরীর অলিগলিতে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চলছে। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মশার ওষুধ দেওয়ার জন্য ২০০ জন স্প্রেম্যান কাজ করছেন। ওষুধ ছিটানোর জন্য ফগার মেশিন আছে ৬০টি এবং স্প্রে আছে ১৫০টি।’
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews