দিনে মানলেও রাতে উধাও সব নির্দেশনা

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ধসে যাওয়া ভবনটি কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে লোহার রডে ভর করে।

দিনে মানলেও রাতে উধাও সব নির্দেশনা
দিনে মানলেও রাতে উধাও সব নির্দেশনা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ধসে যাওয়া ভবনটি কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে লোহার রডে ভর করে। ভবনটির পুরোপুরি ধস ঠেকাতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, ভবনটির সামনে অন্তত ২৬ ফুট পর্যন্ত কংক্রিট বা স্টিল রোড ব্যারিয়ার দিয়ে রাখতে হবে। রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত সামনের সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। তবে এর কিছুই মানা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পণ্যবাহী ভারী যান চলাচল করছে ওই ভবনের সামনে দিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে কম্পনের সৃষ্টি হয়ে ফের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রাজউকের অন্যান্য নির্দেশনা না মানায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রাও। গত ৭ মার্চ বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ার অদূরে সিদ্দিকবাজারে কুইন্স স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা অনেকটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এ ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণের পর ভবনটির ব্যবহার উপযোগিতার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ছয় সদস্যের কমিটি করে রাজউক। ওই কমিটি ভবনটি পরিদর্শন শেষে তাদের প্রতিবেদনে সুপারিশ দেয়।

সুপারিশে বলা হয়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংলগ্ন স্থাপনাগুলো এবং রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্ষতিগ্রস্ত বিম-কলামগুলো অতিদ্রুত ঠেকনা দিতে হবে। একই সঙ্গে ওই ভবনের সামনের ফুটপাতসহ রাস্তার দিকে ২৬ ফুট পর্যন্ত জায়গা কংক্রিট বা স্টিল রোড ব্যারিয়ার দিয়ে কর্ডন করে রাখতে হবে। ভবনের সামনের রাস্তায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাসসহ অন্যান্য হালকা যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া যেতে পারে। তবে রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ওই রাস্তায় সব যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবনের ২৪টি কলামের মধ্যে ৯টি, বেজমেন্ট, গ্রাউন্ড ফ্লোর, বিম ও পাশের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য মালিকপক্ষকে ৪৫ দিনের মধ্যে কোনো বেসরকারি বা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান দিয়ে ভবনটি পরিদর্শন করিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়। পরে প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করার কথা।

সরেজমিন দেখা যায়, এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে পারেনি ভবন মালিকরা। পুলিশও ওই ভবনের সামনের সড়কে ভারী যান চলাচল বন্ধ করেনি। ভবনের সামনে ফুটপাত পর্যন্ত রশি দিয়ে কর্ডন করে রাখা হলেও যে কেউ চাইলেই ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে। তবে ভেতরে কেউ থাকছে না। ঝুঁকি জেনেও দুই পাশের দোকান চালু রয়েছে। ভবনটির সামনে রাতদিনই রাখা হচ্ছে ট্রাকসহ নানা পণ্যের গাড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুইন স্যানিটারি মার্কেট ভবনের দুই মালিক এখনো কারাগারে। তাই রাজউকের নির্দেশনাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।