দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য ও চিকিৎসকদের গ্রেপ্তারে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ড্যাব

সম্প্রতি ড্যাব’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম এক যৌথ বিবৃতিতে এই নিন্দা জানান।

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য ও চিকিৎসকদের গ্রেপ্তারে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ড্যাব

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য, চিকিৎসক গ্রেপ্তার ও হয়রানির তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সম্প্রতি ড্যাব’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম এক যৌথ বিবৃতিতে এই নিন্দা জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রতিটি নাগরিকের রাষ্ট্র কর্তৃক চিকিৎসাপ্রাপ্তি অনেকগুলো মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম অধিকার। অথচ দুঃখজনকভাবে সত্যি হলো বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ নির্ভরশীল বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর। যার ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। ফলে প্রায়শই আমরা বিভিন্ন অনিয়ম, অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয় আদায় এবং বিভিন্ন রকমের দুর্ঘটনার কথা শুনি। 

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতায় রোগীর মৃত্যু ও তার পরবর্তীতে রোগীর লোকজন কর্তৃক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, স্বাস্থ্যকর্মীদের মারধর এমনকি একজন চিকিৎসকের করুণ মৃত্যু এবং তৎপরবর্তী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ঢালাওভাবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ও রিমান্ড, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একধরনের ভীতিকর অবস্থা তৈরি করেছে।  ড্যাব’র নেতৃদ্বয় আরও বলেন, অন্তর্নিহিত মানবিক ইচ্ছার তাগিদে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী মারাত্মক চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি নিয়ে রোগীর প্রাণ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ে, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সেই মানবিক ইচ্ছা থেকে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রতিষ্ঠান বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছে। 

সম্প্রতি ঢাকার একটি নামি দামি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে জনৈক প্রসূতি রোগীর অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উক্ত হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ এবং দায়ী ব্যক্তিদের তদন্তপূর্বক চিহ্নিত না করে যে চিকিৎসকবৃন্দ এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা সেই সময় রোগীর প্রাণ রক্ষার্থে জীবনবাজি রেখে কর্তব্য পালন করেছেন তাদেরকে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার এবং জামিন না দেয়া এবং উক্ত হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে রোগীর মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে জটিলতা তৈরি হবে এবং প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার ব্যাপারে বাধার সৃষ্টি হবে বলেও তারা মনে করছেন। দ-বিধি ধারা ৮৮ ও ৮৯ অনুসারে চিকিৎসা প্রদানকারী কোনো চিকিৎসক একজন রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার পরও রোগীর মৃত্যু হলে সেটা কোনোভাবেই হত্যা মামলা হতে পারে না। এ আইনে চিকিৎসকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সততার সঙ্গে নিঃশঙ্কচিত্তে কর্তব্য পালন করার নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে এবং হত্যা মামলার মতো ফৌজাদারি মামলা হতে দায়মুক্তি প্রদান করা হয়েছে। 

চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা বা ক্ষতির কারণ হলে তা নিরূপণে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল সংক্ষেপে বিএমডিসি নামে সরকারি বিধিবদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান কার্যকর আছে যারা যেকোনো অভিযোগ পাওয়ামাত্র বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্তপূর্বক তাদের সুপারিশ পেশ করেন অতঃপর বাংলাদেশের বর্তমান আইনের বিধান অনুযায়ী বিএমডিসি’র সুপারিশ মোতাবেক দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। উল্লেখিত বিধি-বিধান থাকা সত্ত্বেও যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তা অনভিপ্রেত এবং ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াস বলে মনে হয়। 

ড্যাব’র সভাপতি ও মহাসচিব উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের মানুষের বিদেশমুখিতা (বিশেষ করে কার্ডিয়াক সার্জারি, ব্রেন সার্জারি, কিডনি সার্জারি) কমিয়ে আনার দিকে যাচ্ছিল কিন্তু প্রশাসন ও রাষ্ট্রের কার্যকলাপের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তাহীনতা জনগণের স্বাস্থ্য সেবাদানের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক মনিটরিং এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে যে অবহেলা পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে করে নিম্নগামী স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আরও নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে এবং মানুষের চিকিৎসাসেবা নেয়ার জন্য বিদেশ গমন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন। গ্রেপ্তারকৃত চিকিৎসক কর্মীদের অনতিবিলম্বে জামিন এবং হয়রানি বন্ধ। বিএমডিসি কর্তৃক তদন্তসাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত এবং যে সমস্ত অতি উৎসাহী ব্যক্তিবর্গ দেশের বিভিন্নস্থানে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন ড্যাব’র চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ।