ধস্তাধস্তিতে শেষ হলো হরতাল, বাম জোটের দাবি ‘সফল’
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর পল্টন মোড়ে পুলিশসহ মোটরসাইকেল ও বাসচালক এবং হরতাল সমর্থকদের ধস্তাধস্তি হয়।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজধানীতে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবসের হরতাল। জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া হরতাল দুপুর ১২টায় পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
হরতালের শুরুতে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগ, কাঁটাবন, গুলিস্তান ও পল্টন এলাকায় মিছিল করেন সমর্থকরা। পরে পল্টন মোড়ে জোটের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে মিছিল, স্লোগান ও গান-বাজনা করেন। এ সময় হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে গাড়ি চালক, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের কথা-কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টায় পল্টন মোড়ে জোট নেতারা হরতাল ‘সফল’ হয়েছে জানিয়ে রাস্তা ছেড়ে দেন।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবস হরতালের শেষ সময়ে এসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর পল্টন মোড়ে পুলিশসহ মোটরসাইকেল ও বাসচালক এবং হরতাল সমর্থকদের ধস্তাধস্তি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের দিকে বাস ও কয়েকটি গাড়ি চলে গেলে প্রথমে হরতাল সমর্থকরা বাধা দেয়। এ সময় বাধা উপেক্ষা করে যেতে চাওয়া গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা চালায় তারা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ, চালক ও হরতাল সমর্থকদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
পল্টন মোড় থেকে সচিবালয়ের দিকে এক কর্মকর্তার গাড়ি যেতে চাইলে হরতাল সমর্থকরা প্রথমে বাধা দেয়। পুলিশ তাদের ব্যারিকেড ভেঙে গাড়িটি পার করে দিতে চাইলে সমর্থকরা প্রথমে গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। এ সময় উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে আরেকটি পরিবহন ব্যারিকেড ভেঙে গুলিস্তানের দিকে যেতে চাইলে ওই পরিবহনে ভাঙচুর চালায়। জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। তখন পুলিশ, চালক ও হরতাল সমর্থকদের মধ্যে আরেক দফা ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কয়েকজন হরতাল সমর্থক সামান্য আহত হয়েছেন।
একই স্থানে আজমেরী পরিবহনের একটি বাস হরতালকারীরা আটকে দিতে চাইলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর আগে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে আওয়ামী লীগের এক নেতা গাড়ি নিয়ে পল্টন মোড় দিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যাওয়ার পথে বাম জোটের বাধার মুখে পড়েন। গাড়িতে থাকা যুবলীগের দুই কর্মী নেমে এসে জোরপূর্বক যেতে চাইলে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। তাৎক্ষণিক পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় হাতাহাতির ঘটনায় হরতাল সমর্থকের একজনের জামা ছিঁড়ে যায়। এ সম্পর্কে বাসদ জাতীয় কমিটির সদস্য নাসিরউদ্দিন প্রিন্স বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করতে চাইলে আমাদের (বাম জোট) নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হরতালের শুরুতে শাহবাগ ও পল্টন এলাকায় মিছিল করেন বাম জোটের নেতারা। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থেকে জোটের নেতাকর্মীরা পল্টন মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৮টার পর পল্টন মোড়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে ও সবদিকে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধের চেষ্টা করেন। এতে কিছুটা সফলও হন। তবে, পুলিশের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সীমিত আকারে যান চলাচল অব্যাহত থাকে।
এদিকে বাম জোটের হরতালকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সর্তক অবস্থান থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে পল্টন এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি পল্টন মোড়ে পুলিশের জল-কামানসহ বিক্ষোভ দমনের কয়েকটি গাড়ি অবস্থান করতে দেখা গেছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এবার জনগণ হরতালে যেভাবে নৈতিক সমর্থন করেছে, এতে কিছু ঘাটতি আছে। কিন্তু এই জালিম সরকারের কানে নৈতিক সমর্থন যায় না। তাদের কানে পানি পৌঁছাতে হলে রাস্তায় নেমে শক্তি ও সমর্থন দিতে হবে। বামপন্থীরা আজকের কর্মসূচি শেষ করলেও আন্দোলন শেষ করছে না। আগামী দিনে বাম সংগঠন ও অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষ, যারা মুক্তিযুদ্ধের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়, দ্বি-দলীয় রাজনীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিকল্প শক্তির পক্ষে আছে তাদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধসহ ঘেরাও কর্মসূচি দেব।
তিনি বলেন, আসুন আমরা আজ এই সফল হরতালের পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘরে ফিরে যাই। আগামী দিনে বৃহত্তর কর্মসূচি দেব, আন্দোলন গড়ে তুলব। জিনিসপত্রের দাম না কমানো পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।
হরতাল চলাকালে রাজধানীর শাহবাগসহ দেশের কয়েক জায়গায় বাম জোটের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আজ শাহবাগে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ হামলা করেছে, এ ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৩ ছাত্রনেতা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া সারাদেশে আরও কয়েক জায়গায় হামলা, নাটোরে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রিন্স বলেন, গতকাল রাতে যেসব ছাত্রনেতাদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদেরকে রাতে খাবার দেওয়া হয়নি। যারা দেখা করতে গিয়েছিল, তাদেরকেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তবে, আমি দেখা করতে গেলে পুলিশ আমার সঙ্গে সৌজন্য ব্যবহার করেছে। পুলিশ আমাকে বলেছে- হরতালের দাবি যৌক্তিক, কিন্তু আমরা তো পোশাক পরা। কাল যেহেতু কর্মসূচি, যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে এখন ছাড়তে পারব না। আমি প্রশ্ন করতে চাই, এখন পর্যন্ত কেন তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হলো না। বিক্ষোভ সমাবেশে বাম জোটের নেতা অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বজলুর রশীদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতন, মোশরেফা মিশু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews