নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করার নিশ্চয়তা চাইলেন ব্লিঙ্কেন
উদ্বোধনী বক্তৃতাতেই বাংলাদেশের অত্যাসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করার নিশ্চয়তা চাইলেন ব্লিঙ্কেন। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ওপেনিং স্টেটমেন্টে কিছু না বললেও হোটেলে ফিরে 'মডেল' নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়ার দাবি করেছেন। ওয়াশিংটনে মোমেন-ব্লিঙ্কেন কাঙ্খিত বৈঠকটি কিছুক্ষণ আগে শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ সোমবার সময় মধ্যরাতে অনুষ্ঠিত বৈঠক বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরফে উদ্বোধনী পর্ব প্রচার করা হয়েছে। ক্লোজডোর আলোচনার অনেক কিছুই মুখপাত্রের পরবর্তী ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রচারিত ভিডিওতে শোনা যায়, উদ্বোধনী বক্তৃতায় ব্লিঙ্কেন বলছেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অবশ্যই অবাধ এবং সুষ্ঠু হতে হবে। শুধু বাংলাদেশ নয় বরং আন্তর্জাতিকভাবেও নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হওয়ার তাগিদ দিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের শুরুতেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,এটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: উদ্বোধনী বক্তৃতাতেই বাংলাদেশের অত্যাসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করার নিশ্চয়তা চাইলেন ব্লিঙ্কেন। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ওপেনিং স্টেটমেন্টে কিছু না বললেও হোটেলে ফিরে 'মডেল' নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়ার দাবি করেছেন। ওয়াশিংটনে মোমেন-ব্লিঙ্কেন কাঙ্খিত বৈঠকটি কিছুক্ষণ আগে শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ সোমবার সময় মধ্যরাতে অনুষ্ঠিত বৈঠক বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরফে উদ্বোধনী পর্ব প্রচার করা হয়েছে। ক্লোজডোর আলোচনার অনেক কিছুই মুখপাত্রের পরবর্তী ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রচারিত ভিডিওতে শোনা যায়, উদ্বোধনী বক্তৃতায় ব্লিঙ্কেন বলছেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অবশ্যই অবাধ এবং সুষ্ঠু হতে হবে। শুধু বাংলাদেশ নয় বরং আন্তর্জাতিকভাবেও নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হওয়ার তাগিদ দিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের শুরুতেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,এটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দৃঢ় করার গুরুত্বের পাশাপাশি উঠে আসে রোহিঙ্গা ইস্যু। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার জন্য বাংলাদেশ এবং দেশের জনগণকে সাধুবাদ জানিয়ে ব্লিঙ্কেন বলেন, বাংলাদেশ ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাদের উদারতার সঙ্গে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজুবত করার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানবাধিকার এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতেও জোর দেন তিনিও।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে সূচনা বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এতে দুই দেশের সম্পর্কের ভীত মজবুত উল্লেখ তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভীত অনেক মজবুত। এটি বহুমাত্রিক এবং গতিশীল সম্পর্ক, যা বিগত ৫০ বছরে ধাপে ধাপে বিকশিত হয়েছে। মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা চাই সামনের ৫০ বছর এবং তারপরেও যেনো এটি আরও আরও বৃদ্ধি পায়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন। সেই চিঠি দুটির অংশবিশেষ বৈঠকে তুলে ধরেন মোমেন। বাংলাদেশের সরকার প্রধানকে লেখা মার্কিন প্রেসিডেন্টের চিঠির সমাপনীতে মুক্তিযুদ্ধের সর্বজনীন স্লোগান 'জয় বাংলা' উল্লেখ থাকার বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরেন মোমেন। সেই সঙ্গে বাইডেনের চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি চিঠি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দিয়েছেন জানিয়ে মোমেন বলেন, বৈঠক শেষে আমি তা আপনার কাছে হস্তান্তর করবো। ব্লিঙ্কেনের চিঠিতে বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে উল্লেখ করে প্রশংসাসম্বলিত যেসব কথা বলা হয়েছে তার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে মোমেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার সূত্র ধরে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের অঙ্গীকার রয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে ... এটা করার জন্য আমরা ছবি সম্বলিত আইডি তৈরি করেছি যাতে ফেইক ভোট না হয়। আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করেছি। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন করেছি। আমরা আশা করছি এই কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। তবে নির্বাচন একা একা হয় না। আমরা তোমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) নির্বাচন পর্যবেক্ষক চাই। তোমরা আসো। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু সরকার করতে পারবে না। এ জন্য সকল বিরোধী দলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে অঙ্গীকার করতে হবে। তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন …।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচনে লোক মারা যায়। আমরা চাই না একটা লোক মারা যাক। আমাদের এখানে হাসি-আনন্দে নির্বাচন হয়। তবে আমরা খুব ইগোস্টিক, এত উদ্বেলিত হই যে; লোক মাইরা ফেলি। আমরা চাচ্ছি, নির্বাচন ইস্যুতে আমাদের একটা লোকও যেন না মারা যায়। আমরা পরিবেশ তৈরি করেছি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে। এতে অন্য লোকদেরও সাহায্য করতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন জানান, তিনি আগামী নির্বাচনে মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানালেও দেশটিতে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি নাগরিক রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে পর্যবেক্ষক হতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘আমি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হলে আমরা অবশ্যই নির্বাচনে জিতে আসবো। এ জন্য সব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ), গণমাধ্যম এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, ডিএসএ করেছি, কিন্তু গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য তা করিনি। আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। আমাদের দেশে ১২৫১ টা দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ৪৩টি প্রাইভেট টিভি নেটওয়ার্ক আছে। তারা হাইপার অ্যাকটিভ। আমরা কোনো কিছু খর্ব করি না। আমাদের দেশে বিরোধী দল যখন তখন বিক্ষোভ করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘একমাত্র সরকারি এবং বেসরকারি সম্পত্তি কেউ ধ্বংস করলে আমরা তাকে শাস্তি দেই। সরকারের এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কেউ জনজীবন বিঘ্নিত করতে পারে না।’
মানবাধিকারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে কয়েকজন লোকের বিষয়ে ন্যায়বিচার করার জন্য। তখন বলেছি, আমরা অবশ্যই ন্যায়বিচার করব। কারণ আমরা আইনের শাসন ও সুশাসন চাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন জানান, বৈঠকে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা, ব্যবসা–বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান, যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেওয়াসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় এসেছিল।
এর আগে বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ব্যাপক পরিসরে বেড়েছে। অর্থনীতি, দুই দেশের জনগণের মাঝে সম্পর্ক থেকে শুরু করে জলবায়ু, স্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যাপকতর সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ মূল্য দেয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানবাধিকারসহ নানা ক্ষেত্রে এই সম্পর্ককে আরও গভীর ও জোরালো করার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ব্যাপারে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে একমত পোষণ করে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আপনাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সহযোগিতা এবং অংশীদারত্বের মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্বের বিষয়ে আমরা গর্বিত। আমাদের সম্পর্ককে আরও জোরদার এবং শক্ত ভিত্তি দিতে আমি এই সফরে এসেছি।’






