পদত্যাগ না করলে এই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা শান্তিপূর্ণ থাকবে না: দিনাজপুরে মির্জা ফখরুল
আজ বুধবার (১৯ জুলাই) দিনাজপুরে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, দিনাজপুর: ‘আপনারা তো বেশির ভাগ কৃষক, তাই না? সারের দাম কত, কহিবা পারিবেন, মুই কহিবা পারিম, বস্তা হচে ১২শ ১৩শ টাকা তাই না? ইউরিয়া হামার সময় আছল ৩০০ টাকা, ধান বেচি সেই টাকা পাওয়া যায়? কৃষক ধান ফলায় খাদ্য নিরাপত্তা দেয় অথচ টাকা পায় না। আর ওরা সার আমদানি করে লোন করে, চুরি করে বেশি বেশি টাকা নিয়ে যায়। বিদ্যুৎ আমাদের গ্রামে সেচের জন্য দেওয়া হয় না। অথচ বিদ্যুতের দাম বেশি নেয়’ বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার (১৯ জুলাই) দিনাজপুরে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি করেন। বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় অংশ নিতে আসা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আগে বিএনপিকে সহ্য করতে পারত না, এখন তারা হিরো আলমকেও সহ্য করতে পারছে না। কী লজ্জা, কী লজ্জা! কাউকেই তারা সহ্য করতে পারেন না।
৩৬ দলের একটাই ঘোষণা, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সরকারকে দেশের মানুষ দেখতে চায় না। অবৈধ হাসিনা সরকারের অধিনে নির্বাচন নয়। আগে ঘোষণা দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল, এখন গনতন্ত্রের মোড়ক সামনে রেখে বাকশাল কায়েম করেছে। শেখ হাসিনা গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে তামাশায় পরিণত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস করিয়েছেন, ২০১৮ সালে রাতে ভোট করেছেন। এখন দেশের মানুষের পকেট খালি করছেন আর কর বাড়াচ্ছেন। আধুনিক দিনাজপুরের রূপকার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, খুরশীদ হাজান হক চকলেট আপা ও তারেক রহমান। তারা এই জেলায় মেডিক্যাল কলেজ, শিক্ষা বোর্ড, জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন, ব্লাড ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করেছেন। আর এখন সেই প্রতিষ্ঠানের নাম আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে রাখা হয়। এসব উন্নয়নের কথা দিনাজপুরের বিএনপি নেতারা বলতে চায় না, কারণ কী আমি জানি না। আওয়ামী সরকারের সন্ত্রাসীরা এই পদযাত্রাকে ঠেকানোর জন্য হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমরা আন্দোলন করলে পুলিশ পেটায়, তাহলে কি আমি চুপ করেই থাকব? খালি ঠিক ঠিক বলব, নাকি উঠে দাঁড়াব? জেগে উঠতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ বিএনপির ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। ফেনীতে গিয়েছিলাম, সেখানে খালেদা জিয়ার বাবার বাড়ি ছিল, সেখানকার মানুষ স্লোগান দেয় গর্ব মোদের আলাদা, নেত্রী মোদের খালেদা। এই দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার জন্ম, এখানেই তিনি বসবাস করেছেন, আপনারা দিনাজপুরের মানুষ কেন স্লোগান দেন না―গর্ব মোদের আলাদা, নেত্রী মোদের খালেদা?’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘এখন শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা ও সমাবেশ হচ্ছে, পদত্যাগ না করলে এই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা ও সমাবেশ শান্তিপূর্ণ থাকবে না। তখন পালানোর রাস্তা থাকবে না। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সরকার যা বলে নির্বাচন কমিশন তাই করে। তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। লক্ষ্মীপুরে কৃষক দলের সজিব হোসেন নিহত হয়েছেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আগামী ২১ জুলাই সারা দেশে শোক র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এরা মারবে, মারবে, ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করবে, জনগণের প্রতিরোধের মুখে কিছু টিকে থাকতে পারে না। তাই রুখে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তারেক জিয়া নির্বাসিত হয়ে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে উদ্ধার করার জন্য কাজ করছেন। কৃষকরা ধানের দাম পাচ্ছেন না। অথচ সারের দাম বাড়তেই আছে, আমাদের সময়ের সারের দাম ছিল ৩০০ টাকা। আর সেই সার এখন ১১০০ টাকা। পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।






