ফেনীতে বই উৎসবে এসে মলিন মুখে ফিরল ৩৮ ভাগ শিক্ষার্থী 

ফেনীতে বই উৎসবে এসে মলিন মুখে ফিরল ৩৮ ভাগ শিক্ষার্থী 

প্রথম নিউজ, ফেনী: ২০২৪ সালের প্রথম দিনে উৎসব করে বই বিতরণ করা হলেও ফেনীতে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছাপানো জটিলতা ও নতুন কারিকুলামের কারণে মাধ্যমিকে প্রথম দিনে চাহিদার ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বই বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ফেনীতে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৮৫ জন এবং মাদরাসায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫ জন। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে বইয়ের মোট চাহিদা ২৬ লাখ ৯১ হাজার ৩৯২টি। কিন্তু ফেনীতে এখন পর্যন্ত বই এসেছে ১৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭৯ টি। মোট প্রাপ্তির হার ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এদিকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে শুরু হচ্ছে নতুন কারিকুলামে পাঠদান। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৮ম ও ৯ম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের বই ফেনীতে আসেনি। জেলায় মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে শুধু ৮ম ও ৯ম শ্রেণির চাহিদা রয়েছে ১০ লাখ ২৮ হাজার ১৭৮টি বই। একই সূত্র জানায়, জেলায় চাহিদার সম্পূর্ণ বই আসতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহিয়া ইয়াছমিন বলে, বই নিতে বিদ্যালয়ে এলেও খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি। স্যাররা বলেছেন পরে বই দেবেন। আবদুল্লাহ আল মামুন নামের ৯ম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী বলে, বিদ্যালয় থেকে নোটিশ পেয়ে বছরের প্রথম দিনে বই উৎসবে এসেছি। ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছোট ভাই সব বই পেলেও আমি পাইনি।

দেলোয়ার হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার সন্তান ৯ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। বিদ্যালয়ে নতুন বইয়ের জন্য এলেও শিক্ষকরা পরে আসতে বলেছেন। বই কখন দিবে তাও নির্দিষ্ট করে বলেনি। ফেনী শিশু নিকেতন কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক শফিউল আলম বলেন, বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ১৫০ জন শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যরা বই পেয়েছে। ৯ম শ্রেণির বই কবে নাগাদ পাওয়া যাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নির্দিষ্ট করে জানায়নি। আশা করি শিক্ষার্থীরা শিগগিরই বই পাবে।

বই না পৌঁছানো প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফি উল্ল্যাহ  বলেন, ৮ম এবং ৯ম শ্রেণির বই আসেনি। অন্যান্য সব বই এসেছে। খুব শিগগিরই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া যাবে। তবে মাধ্যমিকে শতভাগ বই না এলেও জেলায় প্রাথমিকের শতভাগ বই এসেছে। বছরের প্রথম দিনেই প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা শতভাগ বই পেয়েছেন বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রাথমিকে জেলায় মোট বরাদ্দকৃত বইয়ের সংখ্যা ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৩টি। তার মধ্যে সব বই ইতোমধ্যে জেলার ৫৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে গেছে। ফেনীর ৬ উপজেলায় ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৩টি বইয়ের মধ্যে সদর উপজেলায় বরাদ্দকৃত বই ২ লাখ ৬৯ হাজার ২৩৮টি, দাগনভূঞায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৬১টি, সোনাগাজীতে ১ লাখ ৩৯ হাজার ২০০টি, ছাগলনাইয়ায় ৫৭ হাজার ৩৪টি, পরশুরামে ৩৯ হাজার ৫৫০টি ও ফুলগাজীতে ৫৫ হাজার ৬৪০টি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সকল স্কুলে বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীরা নতুন বই পাচ্ছে। প্রাথমিকের কারিকুলামে খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও ভেতরে কিছু কিছু পাঠ পরিবর্তন হয়েছে। ফলে পুরাতন বই দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। সকল শিক্ষার্থী নতুন বই পাচ্ছে। এদিন সকাল থেকে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বই উৎসব করা হয়েছে। এতে নতুন বই পেয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।

ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজিত বই উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বছরের প্রথম দিনে এই বই উৎসব বাংলাদেশের জন্য বড় দৃষ্টান্ত। পৃথিবীর কোনো দেশে এমনটি নেই। বাংলাদেশে এত উৎসবের ভিড়ে এ উৎসবটি একদম ব্যতিক্রম। একসময় ধার করে বই পড়তে হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিচ্ছে।