বুধবার থেকে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসবে

পরিষ্কার করা হচ্ছে বঙ্গবাজার

বুধবার থেকে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসবে

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপে আগুনে পুড়ে যাওয়া মালামাল সরানোর কাজ চলছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য করা হবে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানোর ব্যবস্থা। দোকান মালিক সমিতি জানিয়েছে, বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া মার্কেটের ধ্বংসস্তূপ থেকে মালামাল সরানো শেষে বুধবার থেকে চৌকি দিয়ে দোকান বসানো হবে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে পাঁচ ফুট বাই সাড়ে তিন ফুট পরিমাণ একটা করে দোকান দেয়া হবে। এদিকে শুরু হয়েছে নির্দিষ্ট আয়তনের চৌকি তৈরির কাজ।

গতকাল রাজধানীর বঙ্গবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার সপ্তম দিনেও চলছে মালামাল সরানোর কাজ। বের হচ্ছে আধা পোড়া কাপড়। ধ্বংসস্তূপ থেকে পোড়া ছাই, সকল স্টিল ও লোহার সামগ্রী রেকার দিয়ে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। পরে থাকা মালামাল নিতে এসেছেন টোকাই ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। গত ৪ঠা এপ্রিল সকালে অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনা ঘটে। সব হারানোর পরও আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। এদিকে সড়কের পাশে দোকান সাজিয়ে বসতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মালামাল আনছেন বিক্রেতারা। আশেপাশে ফুটপাথে দোকান নিয়ে বসেছেন অনেকে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ধ্বংসস্তূপে চলছে এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। ফুটপাথে দোকান নিয়ে বসেছেন রাসেল গার্মেন্টের নূর আফসার। তিনি বলেন, আমাদের দু’জন কর্মচারী ছিল। তাদের জন্য আমরা নিজ থেকে ব্যবস্থা করছি। আমরা এখনো কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। কোনো আশ্বাসও এ পর্যন্ত পাইনি।

রায়হান গার্মেন্টের কর্মচারী শিপন বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পাইনি আমরা। তবে একটা আশা আমরা করতে পারি এটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পরে আমাদের বসতে দিতে পারে। আমরা এখন মহাজনদের মতো অসহায়। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে এই দোকান নিয়ে বসে আছি। দোকান মালিক দাঁড়াতে পারলে আমাদেরও কোনো না কোনো ব্যবস্থা হবে। আমাদের এই কাজ করে সংসার চালাতে হয়। আমাদেরও পরিবার আছে। আমি ১৩ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। আল-মক্কা গার্মেন্টের কর্মচারী আব্দুল্লাহ বলেন, সর্বনিম্ন প্রতি দোকানে ৩-৪ জন কর্মচারী ছিল। আনুমানিক ১৫ হাজারের মতো কর্মচারী ছিল। আমি নিজেও একজন কর্মচারী। আজ মালিকের জিনিস নিয়ে বসে আছি ফুটপাথে। এখনো দোকান মালিক আমাদের কোনো আশ্বাস দেয়নি। বলেনি যে তোমরা এটা করো, তোমাদের যেটা পাওনা সেটি দিয়ে দিবো। এখানে তেমন বিক্রি হচ্ছে না। দোকান যখন ছিল তখন আমাদের প্রতিদিন বিক্রি হতো দুই-আড়াই লাখ টাকা। আমাদের মালিকের ছয়টা দোকান ছিল এই মার্কেটে। আমাদের পূর্ণ একটা মার্কেট করে দিক এটাই সরকারের কাছে চাই। এই ভাঙা মার্কেটে কেউ কিনতে আসবে না।

দোকান মালিক আব্বাস বলেন, আগুনের ঘটনার একদিন পর থেকেই এখানে দোকান বসিয়েছি। কিন্তু আগের মতো কি আর কাস্টমার হয়। আগের মতো তো আসবে না। দুই-একজন আসছে। ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানোর জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে আছি। এই মালামালগুলো বাইরের গোডাউনে রাখা ছিল। সেখান থেকে কিছু জিনিস নিয়ে এখন ফুটপাথে বসেছি। বঙ্গবাজারের আবদুর রহমান বলেন, আমরা মোট ২০-২২ জনের মতো সিকিউরিটি গার্ডের লোক ছিলাম। আগুন লাগার পর মার্কেটের সব গেট খুলে দেই। আদর্শ মার্কেটে প্রথমে আগুন লাগে। এরপর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আমরা বেরিয়ে যাই। আমাদের কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। এই মার্কেটে চার বছর ধরে আছি। মার্কেট থেকে আমাদের বলেছে ডিউটি করতে। তারা আমাদের জন্য ব্যবস্থা করবে। আমার এখন হাত খরচের টাকাও নেই। এখন টাকা ধার করে চলছি। যেদিন আগুন লেগেছে ওইদিন রোজা ছিলাম। এ ছাড়া এ পর্যন্ত আর রোজা থাকতে পারিনি। এখানে পানি নেই, থাকার ব্যবস্থা নেই। এই পর্যন্ত আমাদের কেউ সহযোগিতাও করেনি। এখন আমাদের দিকে কেউ যদি না চায় তাহলে কোন উপায় খুঁজে পাবো না। কোন দোকানদার এসেও বলে না যে এই একশ’ টাকা নিয়ে খেতে থাকো।

দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার থেকে পুড়ে যাওয়া মালামাল সরানো এবং পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হয়েছে। আজ পুরো বঙ্গবাজারে পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। আগামীকালের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। বুধাবার দুপুর ১২টায় আমরা ব্যবসায়ীদের দোকান নিয়ে বসবো। সবাই সাড়ে তিন ফুট ও পাঁচ ফুট পরিমাণ একটা করে দোকান পাবে। নির্দিষ্ট আয়তনের চৌকি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, যাদের দুটি কিংবা পাঁচটি দোকান ছিল তারাও একটি করে দোকান পাবে। অস্থায়ীভাবে বসানো দোকান উদ্বোধনের জন্য মেয়র মহোদয়কে আমরা অনুরোধ করেছি। তার মাধ্যমেই আমরা এখানে বুধবার দোকান বসাবো। আমরা সিটি করপোরেশনকে ২ হাজার ৯৬১ জনের একটি তালিকা দিয়েছি। আজকের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তালিকা দিতে বলেছেন মেয়র মহোদয়। আশা করি আজকের মধ্যে এই পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হয়ে যাবে।