বন্ধ রেল যোগাযোগ: ৫ ঘণ্টা ধরে শুয়ে-বসে বিরক্ত রেলযাত্রীরা
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ট্রেনের অপেক্ষায় কমলাপুর বিমানবন্দরে বসে আছেন অনেকে।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট এলাকায় রেললাইন অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকরা। এতে করে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার রেলযাত্রী।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ট্রেনের অপেক্ষায় কমলাপুর বিমানবন্দরে বসে আছেন অনেকে। পরিবার-পরিজনদের নিয়ে প্ল্যাটফর্মে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে পড়েছেন তারা। এর আগে, আজ (রোববার) সকাল ১০টায় রেলওয়ের এ অবরোধ শুরু করেন অস্থায়ী শ্রমিকরা। সর্বশেষ দুপুর ২টা পর্যন্ত এই অবরোধ চলছেই।
ঢাকা থেকে নরসিংদী যাবেন ব্যবসায়ী আফরোজ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বসে আছি। তিতাস কমিউটার ট্রেন সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে আসার কথা। কিন্তু এখন দুপুর ১টার বেশি বাজে। আমরা জানি না কখন ট্রেন আসবে। কী হয়েছে সেটাও জানি না। স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা বলছেন, এটা তাদের বিষয় নয়। মালিবাগে একটি ঝামেলা হয়েছে, সেটি শেষ হলেই ট্রেন ছাড়তে পারে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়টি হলো সকাল থেকে এতক্ষণ বসে আছি, অথচ যাত্রীদের উদ্দেশে মাইকে কিছুই জানানো হয়নি।
ঢাকা থেকে রাজশাহী যাবেন জালাল উদ্দিন নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, আমি আমার বউ-বাচ্চা, মা-বাবাকে নিয়ে বেলা ১১টা থেকে বসে আছি। ট্রেন কখন ছাড়বে কেউ বলতে পারছে না। এভাবে শুয়ে-বসে কতক্ষণ থাকা যায়! যারা দায়িত্বে আছেন তারা কি কিছুই দেখছে না? আমাদের ভোগান্তি বাড়িয়ে কী লাভ হচ্ছে তাদের?
বোরহান উদ্দিন নামের আরেক যাত্রী বলেন, আমার ট্রেন দুপুর একটায় আসার কথা ছিল, অথচ এখনো আসেনি। অনেকেই এখানে ৫-৬ ঘণ্টা ধরে বসে আছে। কেউ কিছুই বলছে না। কী হয়েছে আমরা সেটিও জানি না।
অবরোধের কারণে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পঞ্চগড়ের একতা এক্সপ্রেস সকাল (১০টা ১০ মিনিট), ঢাকা থেকে তারাকান্দি রুটের একতা এক্সপ্রেস (বেলা ১১ টা), ঢাকা থেকে সিলেট রুটের জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস (বেলা সোয়া ১১টা), ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ রুটের কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস (সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট) ছেড়ে যায়নি। এছাড়া দুপুর ২টায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও ২টা ২০ মিনিটে বণলতা এক্সপ্রেসের ছাড়ার কথা থাকলেও সেগুলো নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। এছাড়া ঢাকা-রংপুর রুটের রংপুর এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর অবরোধের কারণে মালিবাগে আটকে আছে।
যে কারণে অবরোধ: বাংলাদেশ রেলওয়েতে নিয়োগ পাওয়া অস্থায়ী শ্রমিকদের (টিএলআর) চাকরি ফেরত দেওয়া, স্থায়ীকরণ, আউটসোর্সিং প্রথা বাতিল করা এবং নিয়োগবিধি ২০২০ সংশোধন করে আগের মতো ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি পাস বহাল রাখার দাবিতে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী কর্মরত শ্রমিকদের পদগুলো হচ্ছে— মেকানিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং (গেটকিপার, ওয়েম্যান, লোকো খালাসী, ক্যারেজ খালাসী) সিগন্যালিং ইলেকট্রিক্যাল ও ট্রান্সপোর্টেশন (গেটকিপার, পোর্টার, পয়েন্টসম্যান) ইত্যাদি। শ্রমিকরা বলেন, রেলের ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন পদে অস্থায়ীভাবে মোট ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন। আমাদের মধ্যে অনেকের চাকরির বয়স ৩-১০ বছর। বর্তমানে অনেকের বয়স ৩৫-৪০ বছরের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অন্য কোথাও চাকরি করার বয়স নেই। এর আগে এ বছরের ১৬ জুলাই কারওয়ান বাজার রেল ক্রসিংয়ের অবরোধ করেছিলেন শ্রমিকরা।
রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দেলোয়ার বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য আমরা গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু গত মাসে রেলওয়ের মহাপরিচালক আমাদের বলে দিয়েছেন— চাকরি স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা তারা করতে পারবেন না। সরকার চাইলে এ ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু আমরা কিছু করতে পারব না।
তিনি বলেন, গত ৮ আগস্ট একটি অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন— তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বিষয়ে কথা বলবেন। পরে গত ১৬ আগস্ট আমরা রেলমন্ত্রীর পঞ্চগড়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেন— আমি তো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিনি। তখন আমি তাকে বললাম— স্যার আপনি তো বললেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। তখন তিনি বলেন— বলব। আসলে মন্ত্রী আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খারাপ আচরণ করেছেন।
বর্তমানে রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ রয়েছেন জানিয়ে এ শ্রমিক নেতা বলেন, ২০ আগস্ট রেলওয়ের ডিজির কাছে গিয়েছিলাম। রেলমন্ত্রী যা বলেছিলেন তাকে তা জানালাম। আর জানতে চাইলাম, আপনি কী বলেন? তিনি বলেছেন— এ বিষয়ে আমি জানি কিছু না। পরে তাদের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। তবুও তারা আমাদের জন্য কিছু করলেন না।
দেলোয়ার যোগ করেন, গত ২৯ তারিখে আমরা দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি ঘোষণা করেছিলাম। পরে প্রশাসনের মাধ্যমে আমাদের বলা হয়েছিল যে, ৩০ আগস্টের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। কিন্তু পরে আর আলোচনা হয়নি। সে কারণে আজ (রোববার) অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সেই ঘোষণা মোতাবেক আমরা আজকে মালিবাগে অবস্থান নিয়েছি।