বেড়িবাঁধ ভাঙন, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ২৫ হাজার পানিবন্দি মানুষ
মোট ১০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছে। এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন পানিবন্দি এলাকার সমস্ত মানুষেরা।

প্রথম নিউজ, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম দুর্গাবাটিতে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে আরও ছয় গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছে। এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন পানিবন্দি এলাকার সমস্ত মানুষেরা।
এদিকে জোয়ারের তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধটি গত দুই দিনেও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এখনও এখানকার মানুষের বাড়ির উঠানে চলছে জোয়ার-ভাটা। নিরাপদ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অপরদিকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন নারীরা। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য সন্ধ্যা বা অন্ধকারের অপেক্ষায় থাকতে হয় তাদের।
স্থানীয়রা জানান, প্রত্যেক বছর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়। আর প্রত্যেক বছরই তারা পায় আশার বাণী। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘোরে না এই বাঁধপাড়ের মানুষগুলোর। তারা বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাত ১১টার দিকে প্রবল জোয়ারের চাপে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটির প্রায় দেড়শ ফুট বেড়িবাঁধটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, পূর্ব পুড়াকাঠলা, পশ্চিম পুড়াকাঠলা, আড়ঙ্গাশিয়া, করবাড়ি, দাতিনাখালি, ভামিয়া, মাদিয়া ও নীল ডুমুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে কালকের ভিতরে বাঁধটি মেরামত করা সম্ভব না হলে নতুন করে আটুলিয়া ইউনিয়নের একাধিক গ্রামও প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
স্থানীয়রা আরও বলেন, বর্তমানে কলাগাছের ভেলা এবং নৌকা দিয়ে বাড়িতে যাতায়াত করছেন অনেকেই। তা ছাড়াও ভেসে গেছে কয়েক হাজার বিঘা জমির চিংড়ি ঘের। চলাচলের রাস্তা ডুবে যাওয়ায়, বাড়িঘরে পানি ওঠায় ও রান্না করতে না পারায় শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে বলে জানান তারা।
পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় চারিদিক পানিতে ডুবে আছে। ভেলায় করে চলাফেরা করতে হয়। চারিদিকে পানি থাকলেও কোথাও খাওয়ার পানি নেই। গোসল করতে হচ্ছে নোঙরা ও লবণাক্ত পানিতে। যেই পানিতে পায়খানা প্রসাব আবার সেই পানিতেই গোসল করতে হচ্ছে। তবে দ্রুততম সময়ের ভিতরে বাঁধ মেরামত সম্ভব না হলে বদ্ধ পানির মধ্যে থাকার কারণে জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে নদী ভাঙ্গন এলাকায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিনামূল্যে সুপেয় পানি পৌঁছে দিতে কাজ করছে স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিইও ইয়ুথ টীম। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির আহ্বায়ক ফজলুল হক বলেন, নদীর বাঁধ ভাঙ্গনের কারণে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খাদ্যের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন তারা। এ কারণে পানিবন্দি এসব মানুষের কথা মাথায় রেখে তাদের পাশে থেকে কাজ করবে সিডিইও ইয়ুথ টীম।
এ বিষয়ে বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাতে প্রবল জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটির বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় এখন পর্যন্ত ১০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে দুর্গত এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, শনিবার (১৬ জুলাই) দুপুরের ভাটিতেও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি বাঁধা যায়নি। রবিবার (১৭ জুলাই) জোয়ারের পানি গতকালের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছি। তবে এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি সংস্কারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পাউবোর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বস্তা, দঁড়ি, বাঁশ ও পেরেকসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় ৬০০ ফুট এলাকায় পাইলিং করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে তীব্র জোয়ারের কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস,এম জগলুল হায়দার বলেন, এ ধরনের বিপর্যয় ইতিপূর্বে কখনও আমরা দেখিনি। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য। মানুষ খুব দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি দ্রুততম সময়ের ভিতরে আমরা স্থায়ী সমাধান পাব।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews