ভবন নির্মাণ অনুমোদন-তদারকিতে গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রোববার বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ভবন নির্মাণে বিভিন্ন ধরনের অনুমোদন ও তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সমন্বয়ে একটি সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। ভবন নির্মাণ অনুমোদন-তদারকিতে গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, বেইলি রোডের ভবনে আগুনের ঘটনায় অনিয়ম তদন্তের দায়িত্ব একটি সংস্থাকে দেয়া হবে। অগ্নিকাণ্ডে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে কার গাফিলতি ছিল। যারা অনিয়ম করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও তদন্তের দায়িত্ব কীভাবে একটি সংস্থাকে দেয়া যায়, শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
রোববার বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর রেস্তোরাঁগুলোতে অভিযানের নামে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো রেস্তোরাঁর মালিক নন, কেবল কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেখেছেন। রাস্তার পাশের বাড়িগুলোতে রেস্তোরাঁ করার অনুমতি ছিল না। যে ভবনটিতে আগুন ধরেছে সেই বাড়িটি অফিস করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল বলে স্থপতি বলেছেন।
তিনি বলেন, রেস্তোরাঁর জন্য নকশা করা হয়নি। এ ছাড়া ফায়ার এক্সিট সিঁড়িগুলোতে গ্যাসের সিলিন্ডার বসিয়ে চলাচলের অনুপযুক্ত করা হয়েছিল। এ কারণে অকস্মাৎ এ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। কাজেই এ ক্ষেত্রে যাদের গাফিলতি ছিল, তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। মন্ত্রী বলেন, সবারই প্রশ্ন এ অগ্নিকাণ্ডের দায় কার? এ কারণে যার যে দায়িত্ব, তা পালন করার জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কেন অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল, তার কারণ বের করতে অনুসন্ধান হচ্ছে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন জায়গায় তদারকির অভাব ছিল, তা দেখা হচ্ছে। হোটেল-রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশকে অনুরোধ করা হচ্ছে, তারা অভিযানে যাচ্ছে। যারা অভিযান পরিচালনা করছেন, তারা পুলিশকে অনুরোধ করছেন। পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো জায়গায় গিয়েছিল বলে আমার জানা নেই। তদন্ত করতে অন্য বিভাগের সঙ্গে পুলিশও গিয়েছিল। মন্ত্রী বলেন, আমরা চিন্তা করছি, আমরা সবাই মিলে একটি অথরিটি হবো (কর্তৃপক্ষ), সেখানে ফায়ার সার্ভিস থাকবে, মেয়রদের প্রতিনিধিরা থাকবেন। সবাইকে নিয়ে একটি অথরিটি করার চিন্তা আমরা করছি। ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কাজ হলো হুঁশিয়ারি করে দেয়া। কারওয়ান বাজারের একটি ভবনকে পাঁচ বছর ধরে বলা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ। গাউছিয়া মার্কেটে আগুন ধরলে কাকে দোষ দেবেন? ফায়ার সার্ভিস কিন্তু বলে দিয়েছে, সেটি ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, আমরা একটা অথরিটি চাচ্ছি। এ অথরিটি পুরো দায়িত্ব নেবে।
সবাই মিলে একটা অথরিটি হবে, সেখানে ফায়ার সার্ভিস থাকবে, মেয়রদের প্রতিনিধি থাকবে। সবাইকে নিয়ে একটা অথরিটি করার চিন্তা করছি। তবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, এক্সিডেন্ট তো একবারই হয়, একদিনই হয়। রোজ রোজ তো এক্সিডেন্ট হয় না। ঘটনা অকস্মাৎ এ রকমভাবে হয়েছে। মোট ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আরও কয়েকজন এখনো মুমূর্ষ অবস্থায় আছেন। সবারই প্রশ্ন- এর দায়-দায়িত্ব কার? কেউ কি দেখাশোনার মালিক নেই বাংলাদেশে? প্রশ্নটা আপনাদের যেমন আছে, সবারই আছে। যার যার দায়িত্বটা পরীক্ষা করার জন্যই এগুলো (অভিযান) করা হচ্ছে’- বলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারিভাবে আমরা একটি টিম করে দিয়েছি। কেন অগ্নিকাণ্ড হলো, ঘটনা কী, সেটার অনুসন্ধান হচ্ছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা তো হবেই। তিনি বলেন, রাজউকের কোথায় তদারকির অভাব ছিল, সেটা রাজউক দেখছে। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর কোনো গাফিলতি ছিল কি না, সবাই এখন দেখছেন। অভিযানগুলোতে পুলিশকে অনুরোধ করছে, তাই পুলিশ যাচ্ছে। পুলিশ স্ব-প্রণোদিত হয়ে কোনো জায়গায় গিয়েছে বলে আমরা জানা নেই। নজরে গাফিলতি পড়লে অন্য ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে পুলিশও গিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দেয়া বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটা বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অনুমোদন দিতে হয়। এ অনুমোদন ছাড়া ভবন ব্যবহারের উপযোগী ঘোষণা দেয়া যাবে না বলে আইনে আছে। কিন্তু কেউ তা তোয়াক্কা করছে না। সেই জায়গাটিতেই তো প্রশ্ন আসছে।






