মাওলানা সাঈদীর লাশ আজ পিরোজপুর যাচ্ছে, কাল বায়তুল মোকাররমে জানাজা

আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে তার জানাজা হবে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

মাওলানা সাঈদীর লাশ আজ পিরোজপুর যাচ্ছে, কাল বায়তুল মোকাররমে জানাজা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন ও সাবেক এমপি কারাবন্দী মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর লাশ আজ মঙ্গলবার পিরোজপুরে তার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে তার জানাজা হবে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

সোমবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর মঙ্গলবার ভোর ৫টার ৪০ মিনিটের দিকে মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়।

এর আগে, ঢাকায় সাঈদীর জানাজার নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়ার দাবিতে রাতভর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রাখেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ‘জানাজা হবে কোথায়? ঢাকায়-ঢাকায়’ বলে স্লোগান দেন।

একপর্যায়ে ভোররাত ৪টার দিকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশ সদস্যরা সরে যান। ভোর ৫টার দিকে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রবেশ করে পুলিশ। সাঈদীর ভক্তদের এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বিএসএমএমইউ প্রাঙ্গণ দখলে নেয় পুলিশ। ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি বের করে পুলিশ।

বিএসএমএমইউ থেকে বের হওয়ার পরপরই সাঈদীর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের একটি চাকা ফেটে যায়। পরে পুলিশের সহযোগিতায় আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স এনে মরদেহটি নিয়ে যাওয়া হয়।

জানা গেছে, উপস্থিত লোকজনের দাবি ছিল যে আজই বায়তুল মোকাররমে মাওলানা সাঈদীর জানাজা হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে সায় দেয়নি। অনেকে দাবি করেছেন, জোর করেই তার লাশ পিরোজপুর পাঠানো হচ্ছে। লোকজন বাধা দিতে গেলে শক্তিপ্রয়োগ করা হয় বলেও জানা গেছে।

গতকাল সোমবার রাত ৮.৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল সোমবার রাতে বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো: রেজাউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

এ দিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর বিএসএমএমইউ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকাসহ রাজধানীতে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুর খবর প্রকাশের পরপরই বিপুলসংখ্যক লোক শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়। এ সময় হাসপাতালের সবগুলো গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। লোকজন স্লোগান দিতে থাকে।

এর আগে গত রোববার বিকেলে কাশিমপুর কারাগারে মাওলানা সাঈদী হার্টে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলে প্রথমে তাকে গাজীপুরের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আনা হয়।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর হার্টে পাঁচটি রিং পরানো ছিল। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। এ ছাড়াও তিনি পায়ের গিরায় ব্যথাসহ বার্ধক্যজনিত নানান জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে সর্বশেষ আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে প্রথমে গ্রেফতার হন তিনি। পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

মাওলানা সাঈদী দেশ-বিদেশে একজন জনপ্রিয় ওয়ায়েজিন ও মুফাসসিরে কুরআন ছিলেন। তিনি পিরোজপুর-১ আসন থেকে দু'বার নির্বাচিত এমপি ছিলেন। গ্রেফতারের সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ছিলেন।