মাথাপিছু আয় বেশি দেখাতে জনসংখ্যা কম দেখানো হয়েছে: মির্জা ফখরুল

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মাথাপিছু আয় বেশি দেখাতে জনসংখ্যা কম দেখানো হয়েছে: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, ঢাকা:  মাথাপিছু আয় বেশি দেখাতে জনসংখ্যা কম দেখানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জনশুমারি সঠিক হয়নি। বিশ্বব্যাপী এই শুমারিকে আদমশুমারি বলা হলেও সরকার এটাকে জনশুমারি বলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার সবক্ষেত্রে প্রতারণা করছে। সরকার প্রতারণার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ফেক গভর্নমেন্ট।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

নড়াইলে সহিংসতার ঘটনায় গত ১৮ জুলাই বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নেতাই রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত শনিবার (২৩ জুলাই) তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের সেই তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

নড়াইলের লোহাগাড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের অন্তর্কোন্দল, দ্বিধাবিভক্তির কারণেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা।

এই ঘটনায় অবিলম্বে দোষীদের শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলা হয়। তাদের সম্পদ দখল হয়। নির্দলীয় সরকারের দাবি পাশ কাটাতে সাম্প্রদায়িক হামলার মতো নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। আওয়ামী সরকারের অধীনে ইলেকশন হতে পারে না। তারা নির্বাচনী ব্যবস্থা এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখানে শিশু পর্যন্ত রক্ষা পায় না। পুলিশের গুলিতে ঠাকুরগাঁওয়ে ইউপি নির্বাচনে শিশু হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে দায়ীদের গ্রেফতারের দাবিও জানান মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, আদমশুমারিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমে গেছে শতকরা এক শতাংশেরও বেশি। বারবার এই অত্যাচার হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করেছে তারা।

এই বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্রের অভাবেই ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে দেশ থেকে তাড়িয়ে সম্পত্তি দখল করাই উদ্দেশ্য।

রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি যে আন্দোলন করছেন সেটাও আওয়ামী লীগের কৌশল বলে মন্তব্য করেন এই বিএনপি মুখপাত্র।

এসময় বিএনপির তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, নড়াইলের দিঘলীয় গ্রামে ৭০ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। অথচ পুলিশের নাকের সামনে তাদের ওপর হামলা হলো। হামলায় ২২টি পরিবার এবং ৯টি মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরীন মুন্নি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, অমলেন্দু দাস অপু ও নিপুন রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

নড়াইলের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে কটূক্তি করে  পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৫ই জুলাই, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে  নড়াইল জেলাধীন লৌহাগাড়া দিঘলীয়ার সাহাপাড়ায় একাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট এবং তাদের মালিকানাধীন দোকান ভাঙচুর করা হয়।

গত ১৮ই জুলাই ২০২২ তারিখ, সোমবার, রাত ৮টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল  বিএনপি'র জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান।

উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ যথাক্রমে -

১। জনাব ড.খন্দকার মোশারফ হোসেন

২। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার

৩। জনাব মির্জা আব্বাস

৪। বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

৫। ড. আব্দুল মঈন খান

৬। জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

৭। বেগম সেলিমা রহমান

৮। জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু

উক্ত সভায় গত ১৫ই জুলাই ২০২২ তারিখ, শুক্রবার, নড়াইল জেলাধীন লৌহাগাড়া,দীঘলিয়ার সাহাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ন্যাক্কার জনক হামলা ,ভাঙচুর ,লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞ্যাপন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান। এবং সেই সাথে সভায় ভিন্ন ধর্মাবল¤॥^ীদের  ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করার জন্য সকলের প্র্রতি আহবান জানানো হয়। সভায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা সরেজমিনে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উক্ত সভায় বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট বাবু নিতাই রায় চৌধুরী কে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

 

উক্ত কমিটির সদস্য যথাক্রমে 

১। জনাব অনিন্দ ইসলাম অমিত

২। বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু 

৩। এ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি

৪। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা,এমপি

৫। বাবু অমলেন্দু দাস অপু

৬। এ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তদন্ত কমিটির প্রধান এ্যাডভোকেট বাবু নিতাই রায় চৌধুরী টিমের সকল সদস্যের সাথে জরুরি বৈঠকের মাধ্যমে ২৩ শে জুলাই ২০২২, শনিবার, সরেজমিনে আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত  গ্রহন করেন। গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্ধারিত তারিখে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত টিম স্থানীয় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সন্মানিত আহবায়িকা ও বিএনপি'র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বেগম সেলিমা রহমানের পরামর্শক্রমে সংগঠনটির  সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী এবং নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য পার্থ দেব মন্ডল (সাবেক সহ-সভাপতি, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ) - সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে নিম্নরুপ তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হইলো-

তদন্ত টিম নড়াইল শহর প্রবেশকালে কালনা ফেরি পার হলেই স্থানীয় প্রশাসন টিমের সংগে থাকা স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের শতাধিক মোটর সাইকেলের চাবি কেড়ে নেওয়া ও লাঠিচার্জসহ তদের উপর নানাবিধ ভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে ।  কিন্তু সকল বাধা অতিক্রম করে ঘটনাস্থলে পৌছালে আক্রান্ত হিন্দু সম্প্রদায় ও সাধারণ মানুষের চোখে মুখে আতঙ্কের প্রতিচ্ছবি আমরা স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করি।

আমরা প্রথমেই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার দীপঙ্কর সাহা'র (ডেপুটি ডিরেক্টর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়) বাড়ি পরিদর্শন করি। এবং প্রত্যক্ষদর্শী তার মা বিজলী রানী সাহা'র বক্তব্য গ্রহন করি যার রেকর্ড নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে আনুমানিক বিভিন্ন বয়সী ১০০/১৫০ হামলাকারী বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সেøাগান সহকারে পাড়ায় নির্বিচারে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বাড়ির প্রধান প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। তখন ভিতরে অবস্থানরত নারী সদস্যরা সম্মান এবং জীবনের ভয়ে অন্দরমহলের একটি গোপন কক্ষে আত্মগোপন করেন। ইতিমধ্যেই হামলাকারীরা প্রধান ফটকের তালা ভেঙে বারান্দা সংলগ্ন গৃহদেবালয়ে প্রবেশ করে। দেবালয়কক্ষের স্থাপিত দেবতা মূর্তি এবং পূজার সকল সরঞ্জাম ভাংচুর করে, এলোপাথাড়ি ছুড়ে মারে। পরবর্তীতে দীপঙ্কর সাহার মায়ের কক্ষে প্রবেশ করে আলমারি ভেঙে সর্ণালঙ্কার ও টাকাপয়সা লুট করে। তারপর অন্য কক্ষে প্রবেশ করে ফ্রিজ,আসবাবপত্র ভাংচুর করে তারা আত্মগোপনে থাকা নারী সদস্যদের কক্ষে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। তাদের বিভিন্ন ভাবে লাঞ্চিত ও প্রহার করেন।

 

এরপর পাশের ঘর পলাশ সাহার বাড়িতে তার স্ত্রী এবং তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী'র সাথে আমাদের কথা হয়। তখনও তারা জীবননাশের ভয়ে এবং নিরাপত্তাহীনতায় চরমভাবে শংকিত ছিলেন। আমাকে (নিপুন রায় চৌধুরী) কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন ঐ সময়ে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাড়ির বাহিরে ছিলেন  যারভ কারনে পরিবারের নারি ও শিশুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে এবং একটি দূর্বিসহরাত পার করেন। তারা জীবনের নিশ্চিত নিরাপত্তার জন্য বারবার বিএনপির  টিমের কাছে আকুতি জানায়। এবং ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত  সাপেক্ষে সঠিক বিচার প্রার্থনা করে। আবার যদি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে তবে তাদের আর এ দেশে বাস করা সম্ভব পর হবে না বলেও আমাদের জানায় তাদের সেই ব্যাকুল ক্রন্দন আমাদের মাঝেও এক ধরনের ব্যাথার আবহ তৈরি করে । তাদের বক্তব্যের এক পর্যায়ে তারা স্বীকারও করেন যে ঘটনাটি স্থানীয় আওয়ামীলীগের দলীয় কোন্দলের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। বিএনপির প্রতিনিধি টিমের কাছে এও বলেছেন, প্রকৃত ঘটনা কোন ভাবেই যাতে প্রকাশ করা না হয় এজন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসছে এ কারনে হামলাকারিদের চিনলেও আক্রান্ত হিন্দু পরিবারগুলো হামলাকারীদের নামগুলো প্রকাশ করা থেকে বিরত রয়েছে।

পরবর্তীতে ওই পাড়ায় গোবিন্দ সাহা নামক এক ব্যাক্তি যার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় তাকে স্থানীয় সকলেই অত্যান্ত নিরীহ এবং ভদ্র হিসেবে জানে।গোবিন্দ সাহা এবং তার মা দীপালি রানী সাহা ঘটনার বিবরণে বলেন,যে গৃহে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে সে গৃহে তার বৃদ্ধা মা ও পিসিমা অবস্থান করছিলেন।হামলাকারীদের আওয়াজ পাওয়া মাত্রই গোবিন্দ সাহা তাৎক্ষনিক তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে অন্য একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে দুষ্কৃতকারীরা ওই ঘরে প্রবেশ করে আলমারি ভেঙে গোবিন্দ দাদার মা ও স্ত্রীর আনুমানিক ১২/১৩ ভরি সর্ণালঙ্কার এবং ৭০ হাজার টাকা লুটপাট করে গৃহে আগুন ধরিয়ে দেয়।পুরো আধাপাকা ঘরটি সকল আসবাবপত্র সহ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তারাও এক পর্যায়ে উক্ত ঘটনাটির সাথে স্থানীয় আওয়ামীলীগের গ্রুপিংকেই দায়ী করেন।

এরপর গ্রাম্য ডাঃ স্বপন সাহার বাড়িতে প্রবেশ করি। উনি হামলার চিত্র আমাদের সরেজমিনে পরিদর্শন করান। সেখানে আমরা মহাদেবের মন্দির এবং মূর্তি ভগ্ন অবস্থায় দেখতে পাই।

এছাড়াও আরো কয়েকটি বাড়ি আমরা পরিদর্শন করি এবং সাধারণ জনগনের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করি। প্রতিটা বাড়িতেই হামলার স্পষ্ট চিত্র পরিলক্ষিত হয়। পাড়াসংলগ্ন মুসলিম পরিবারগুলোও একধরণের ভীতিকর অবস্থায় বসবাস করছে। সত্য প্রকাশ না করার জন্য তাদের উপরও এক ধরনের প্রছন্ন হুমকি ছিলো বলে টিম মনে করে।

সকল ভিকটিমদের বক্তব্যের রেকর্ড গ্রহণকালে স্থানীয় পুলিশও বক্তব্যগুলোর ভিডিও ধারণ করছিলো। যার ফলে সব কথা তাদের পক্ষে নির্ভয়ে বলা সম্ভবপর ছিলো না। টিম সরজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে জানতে পারে যে ঘটনার সময় কিছুসংখ্যক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সত্বেও হামলাকারীরা নির্ভয়ে হামলা চালায়। নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের  সদস্যদের  সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামে পরিদর্শন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দিঘলীয়ার সাহাপাড়ায় ১০৫টি বাড়ির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের নামের তালিকা এবং ক্ষতিগ্রস্থ মন্দিরের প্রকৃত তালিকা গ্রহন করা হয়।  যাহা নিম্নরূপ -

 

ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা -

১। ভবেশ সাহার মিষ্টির দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

২। অনুপম সাহার ফার্মেসি ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

৩। অশোক সাহা মুদি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

৪। গোবিন্দ কুন্ডুর মিষ্টির দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

৫। সুব্রত সাহার মুদি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

৬। সবুজ সাহার সেলুন ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

৭। নিত্য সাহার মুদি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

৮। গৌড় সাহার জুতার দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

৯। সুব্রত সাহার গার্মেন্টসের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

১০। সমির পাল খাবারের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

১১। সমর শীলের সেলুন দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

১২। গবিন্দ সাহার বাড়ি আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

১৩। পলাশ মাস্টার এর বাড়ি আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

১৪। গৌর চন্দ্র সাহার বাড়ি লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

১৫। প্রসেনজিত সাহার লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

১৬। গৌর চন্দ্র সাহার বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

১৭। শংকর সাহার বাড়ি  লুটপাট হয়।

১৮। কমলা রানী বিশ্বাস বাড়ি  লুটপাট হয়।

১৯। সুভাস বিশ্বাস বাড়ি  লুটপাট হয়।

২০। তরুন সাহার বাড়ি  লুটপাট হয়।

২১। রনি সাহার বাড়ি  লুটপাট হয়।

২২। স্বপন সাহা মাস্টারের  বাড়ি  লুটপাট হয়।

ভাঙচুরকৃত মন্দিরের তালিকা -

১। দিঘলিয়া রাধা গবিন্দ মন্দির।

২। আখরাবাড়ি সর্বজনীন দুর্গা মন্দির।

৩। একাবাড়ি কালি মন্দির।

৪। দিঘলিয়া পালপাড়া দুর্গা মন্দির।

৫। পালপাড়া গোবিন্দ মন্দির ।

৬। স্বপন সাহার বাড়িতে অবস্থিত  শিব মন্দির ।

৭। শ্মশান কালী মন্দির ।

৮। ঋষিপাড়া চান্দি মন্দির।

৯। আখড়া বাড়ি নন্দ মাস্টারবাড়ি দুর্গা মন্দির।

 

তদন্ত টিম সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে আক্রান্ত পরিবার এবং স্থানীয় জনসাধারনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছে যে, ঘটনাটি নিশ্চিতরুপে স্থানীয় আওয়ামীলীগের গ্রুপিংয়ের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সংখ্যালঘুদের একটি সহজ উপাদান হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে। অতীতেও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন এ দেশের সকল অধিকারসমূহ ভূলন্ঠিত করে বর্তমান স্বৈরশাসকগোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের নিয়ে বার বার একটি অপ-রাজনৈতিক নাটক মঞ্চস্থ করেছে ।

অগণতান্ত্রিক এ সরকারের অধীন সংখ্যালঘুরা কখনোই এদেশে নিরাপদ নয়। তদন্ত টিম মনে করে বিচারহীনতাই বার বার এদেশে একই ধরনের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পিছনে অন্যতম উৎসাহ হিসেবে কাজ করেছে। আওয়ামীলীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে বারবারই হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষদের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে তাদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা করা হয়েছে। নড়াইলের ঘটনাও আওয়ামীলীগ সৃষ্ট তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারনেই এই হামলা হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেই এই সহজ কাজটিই বারবার করা হচ্ছে ।