যশোরের দুঃখ ভবদহ পরিদর্শনে তিন উপদেষ্টা, খননের দায়িত্বে সেনাবাহিনী

যশোরের দুঃখ ভবদহ পরিদর্শনে তিন উপদেষ্টা, খননের দায়িত্বে সেনাবাহিনী

প্রথম নিউজ, যশোর: যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পরিদর্শন করলেন মন্ত্রণালয়ের তিন উপদেষ্টা। পরিদর্শন শেষে এক ব্রিফিংয়ে পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভবদহ এলাকার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মতামতের ভিত্তিতে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগ নেয়া‌ হবে। পাশাপাশি ত্রাণ সহায়তা প্রদান, বিদ্যুৎ মূল্য কমানো, ক্ষুদ্র ও কৃষি ঋণে শিথিলতাসহ সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ভবদহ স্লুইসগেট ২১ ভেন্ট এলাকা পরিদর্শন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিন উপদেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলনে।
 পরিদর্শন শেষে ভবদহ কলেজ মাঠে ব্রিফ করেন পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, ‘গতবারের মতো এবার বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন কাজ শুরু হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব সেচ পাম্প কাজ করছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিল এরইমধ্যে ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ। এ এলাকার জন্য ক্ষুদ্র ঋণ ও কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান যাতে হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ভবদহের স্থায়ী সমাধানের লক্ষে দ্রুত কাজ শুরু করতে চায় সরকার। ২০০৫ সালে ভবদহ সমস্যার সমাধান করা সহজ ছিল। কিন্তু সে সময় সরকারের সদিচ্ছা দেখায়নি। বর্তমান সরকার এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য এরইমধ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মতামতের ভিত্তিতে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হবে। পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে এ ব্যাপার মতামত নেয়া হবে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এরইমধ্যে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের প্রাথমিক উদ্যোগে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান হয়েছে উল্লেখ করে পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবদহ এলাকায় গৃহীত প্রকল্পের আগের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি নতুন উন্নয়ন‌কাজ চলবে। এরআগে, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারে নামেন তিন উপদেষ্টা। পরে ধানক্ষেত পরিদর্শন করেন ৩ উপদেষ্টা।
প্রসঙ্গত, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নামতে পারে না। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ক্ষেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয় পানি। জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি এবং মাছের ঘের।
এ অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক মানুষের ঠাঁই হয় মহাসড়কের ধারে বা স্কুল কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। অথচ বিগত চার দশকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি। অভিযোগ, বিগত সরকারগুলোর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা সিংহভাগ লুটপাট করেছে। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগা মানুষেরা দীর্ঘদিন স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।