লেটক্লিয়ারিংয়ের জন্য অপেক্ষা করবেন না প্রধানমন্ত্রীকে রিজভী

শুক্রবার(১৬ জুন) বিকেলে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

লেটক্লিয়ারিংয়ের জন্য অপেক্ষা করবেন না প্রধানমন্ত্রীকে রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আবারও ভোটারবিহীন সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি- অবিলম্বে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। লেট ক্লিয়ারিং এর জন্য যাতে অনেক ড্যামারেজ দিতে না হয়, সে বিষয়ে ইতিহাসের শিক্ষা থেকে সরকারের সতর্ক হওয়া উচিৎ।

শুক্রবার(১৬ জুন) বিকেলে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

রিজভী বলেন,'বর্তমান দেশের দুঃশাসন ও অগণতান্ত্রিক সরকারের গণবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দেশের জনগণের চাপ ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ক্রমাগত চাপের কাছে মাথা নোয়াবেন না বলে বলেছেন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। অবৈধ লুটের মালের প্রতি লালসা লুটেরারা কখনোই ত্যাগ করতে পারে না। অক্লেশে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। তাই অবৈধ ক্ষমতার প্রতি গণতান্ত্রিক শক্তির যেকোনো চাপেই তাদের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা যায়। ইতোমধ্যেই পরিবর্তনের দ্রুততা এতটাই প্রখর হয়ে উঠেছে যে, অবৈধ সরকারের মনে বিভিষিকা বিস্তার লাভ করেছে। শেখ হাসিনার উন্নয়নের ইন্দ্রজালে কোনো কাজ হচ্ছে না দেখে এখন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর পুরোপুরি নির্ভর করছেন। একমাত্র শেখ হাসিনার একগুঁয়েমির কারণেই রাজনীতির ময়দান স্থিতিশীল, নিরাপদ, শান্ত হয়ে উঠছে না।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গত ৯ জুন কুমিল্লায় পুলিশের নৃশংসতার এক অভিনব পৈশাচিক দৃশ্য দেশবাসীকে হতবিহব্বল করেছে। পুলিশ যে শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার চোরাস্রোত দিয়ে সৃষ্টি সেটি দেখা গেছে কুমিল্লার ঘটনায়। সেই দিনের ঘটনা ছিল তীব্র দুঃশাসনের এক জলন্ত দৃষ্টান্ত। কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নার গ্রেফতারসহ নানা জনদাবিতে যুবদল কুমিল্লা শাখার উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ একটি বিক্ষোভ মিছিল স্থানীয় দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসার পথে পুলিশ বাধা দিয়ে তাদের ফিরে যেতে বলে।যেকোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি পরিহারের লক্ষ্যে পুলিশের এমন উস্কানিমূলক নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তির পর যুবদল নেতৃবৃন্দ তাদের কর্মীদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ অতর্কিতে মিছিলের পেছন দিক থেকে হামলা চালায়। এতে মিছিলে অংশগ্রহণকারিরা প্রাণভয়ে দিকবিদ্বিক ছুটে যায়। এ সময় পুলিশ যুবদলের নেতাকর্মীসহ পথচারীদেরকেও বেধড়ক মারপিট করে আহত করে। পুলিশের এমন সহিংস আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে নেতাকর্মীরা নিকটবর্তী বাসাবাড়ী ও দোকানপাটে আশ্রয় নেয়। এরপর পুলিশ পাশর্^বর্তী মার্কেট ও তৎসংলগ্ন স্থান হতে নিরীহ-নিরপরাধ ১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশের এহেন অন্যায় ও বেআইনী কর্মকান্ড আশেপাশের লোকজন ও স্থানীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সামনে ঘটেছে। অথচ কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুর মোর্শেদ এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান উল্টো যুবদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। তাদের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যার প্রমাণ-এই ভিডিওটির মধ্যে সংরক্ষিত রয়েছে।
তিনি জানান, নিরীহ, নিরপরাধ ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারিদের ওপর অপরাধজনক আক্রমণ পরিচালনাকারি পুলিশ সদস্যদেরই একজন এসআই খাজু মিয়া বাদী হয়ে ভিকটিম বিক্ষোভকারিদের মধ্যে ১৮ জনকে এবং অজ্ঞাতনামা ৬০/৭০ জনকে আসামী করে কুমিল্লা কোতয়ালী থানায় একটি মিথ্যা মামলা রুজ্জু করে। পুলিশের এহেন আচরণ গণতন্ত্রকামী শক্তির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নিশিরাতের সরকারের একটি হিংস্র রসিকতা।

তিনি বলেন,'ওই নৃশংস আক্রমণে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান, কোতওয়ালী থানার ওসি আহমদ মঞ্জুর মোর্শেদ, এসআই খাজু মিয়া, শফিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, এএসআই মাসুদুর রহমান, এএসআই সাইফুল ইসলাম, এএসআই আলাউদ্দিন, এএসআই প্রণয় চাকমা, নায়েক দেলোয়ার হোসেন, কনস্টেবল তুহিনুর রহমান, নজরুল ইসলাম, উজ্জল মিয়া, রফিক ও অন্যান্য আরও অজ্ঞাত ১০/১৫ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন বলে রিজভী জানান।
তিনি বলেন, উল্লিখিত পুলিশ কর্মকর্তাদের এহেন অপরাধজনক আচরণ যা মূলত: দন্ডবিধি আইনের ধারা ১৪৭/৩৩৫৩০৭/৩৪/১৯৩/১৯৪/১৯৫ মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। 

রিজভী আরও বলেন, গত ১৪ জুন চট্টগ্রামে তারুণ্যের মহাসমাবেশ শেষে সিএনজি যোগে বাড়ি ফেরার পথে মীরসরাই উপজেলা ছাত্রদল নেত্রী নাদিয়া নুসরাতকে মীরসরাই ইছাখালী শাহাজি বাজার এলাকা থেকে রাত ৯টার দিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে প্রায় ৩/৪ ঘন্টা পর জোরারগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে এবং পরবর্তীতে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এটি মর্মস্পর্শী, বেদনাদায়ক ও নির্দয় নিষ্ঠুরতার এক নজীরবিহীন ঘটনা। সভ্যতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক কুৎসিত ঘটনা।

রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা যুবলীগ-ছাত্রলীগকে উগ্রতা, নির্মমতা, হিংস্রতা, বর্বরতা এবং রক্তারক্তির চেতনায় লালন করেছেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতনের বীরত্বে শেখ হাসিনার সরকার দারুণ উল্লসিত। এজন্য এদের আমলে জনপদের পর জনপদ নারীরা লাঞ্ছিত, নির্যাতিত এবং হত্যার শিকার হচ্ছে। নারী ও শিশুদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক আতঙ্কের নাম ছাত্রলীগ-যুবলীগ। শেখ হাসিনার নিষ্ঠুর শাসনের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যুবলীগ-ছাত্রলীগ রক্তপিপাসু কিলিং স্কোয়াড হিসেবে কাজ করছে। নারীর কান্নায় বাংলাদেশ এখন এক শোকার্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়া এবং আইনের আওতা থেকে বারবার রেহাই পাওয়ার জন্য এরা নারীর ওপর নির্যাতন করাকে বৈধ ম্যান্ডেট হিসেবে মনে করছে। জোরারগঞ্জ থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম যদি আইনসম্মত দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে নাদিয়া নির্যাতিত হতো না। বরং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কথায় তিনি নাদিয়াকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আওয়ামী দুষ্কর্মের সহযোগী। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কাপুরুষোচিত ও পৈশাচিক হামলার ঘৃণা, ধিক্কার ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। নাদিয়ার ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি ও দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

তিনি আরও বলেন,'এছাড়া বৃহস্পতিবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান রিপন, বসুরহাট পৌর যুবদলের আহবায়ক ওবায়দুল হক রাফেল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইমুনকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই কাদের মির্জার লোকজনের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। উল্টো বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মো. আবদুর রহিম, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।