সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে হেনস্তা বন্ধে সিপিজে ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান

সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে হেনস্তা বন্ধে সিপিজে ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান
সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে হেনস্তা বন্ধে সিপিজে ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আহ্বা

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : বাংলাদেশি সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এবং আরও বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। এ আহ্বান জানিয়ে রোববার নিজেদের ওয়েবসাইটে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছে সিপিজে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে লেখা ওই চিঠিতে অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

সিপিজের চিঠিতে বলা হয়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক যুগের ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’-এর অধীনে তদন্ত চলছে। কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন সরকারের দুর্নীতি এবং অনিয়মের রিপোর্টিং করার জন্য তাকে এই হেনস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে তার ১৪ বছর কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ডকুমেন্টসের ছবি তোলার কারণে তার বিরুদ্ধে এখন তদন্ত হচ্ছে। বর্তমানে জামিনে থাকা অবস্থায় নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন তিনি। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ব্যাংকগুলোকে রোজিনা ইসলামের সকল লেনদেনের বিস্তারিত সরবরাহ করার নির্দেশ দেয়। সিপিজে এই পদক্ষেপকে ভীতি প্রদর্শন মুলক বলে বর্ণনা করেছে।

সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, রোজিনা ইসলামকে জামিন পাওয়ার জন্য তার পাসপোর্ট সারেন্ডার করতে হয়েছে অথচ ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রোসিডিউরে’ এমন শর্তসাপেক্ষ জামিনের কোনো বিধান নেই। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে আদালত ৬ মাসের জন্য তার পাসপোর্ট ফেরত দেয়।

এরপর থেকে বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে রোজিনা ইসলামকে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে পাসপোর্ট গ্রহণ করতে হচ্ছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ১৪ মাসের তদন্ত শেষে আদালতে রিপোর্ট জমা দেয় পুলিশ। কোনো তথ্যপ্রমাণ না থাকায় তারা মামলাটি বাতিলের কথা বলে। এর সাত মাস পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দেয়। এর ফলে আদালত রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) দায়িত্ব দেয় আদালত।
সিপিজে বলেছে, সরকারি কর্মকর্তার এমন নারাজি পিটিশন নিয়ে আমরা অত্যন্ত ‘ডিস্টার্বড’। পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। রোজিনা ইসলাম তার কাজের জন্য ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘অ্যান্টি-করাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন। তিনি যা করেছেন তা পাবলিক সার্ভিস, কোনো অপরাধ নয়। তাকে ‘ডিসক্লোজার অব পাবলিক ইন্টারেস্ট ইনফরমেশন (প্রোটেকশন) অ্যাক্ট’-এর ৪ ও ৫ নম্বর ধারার অধীনে সুরক্ষা দেয়া উচিত। এমন অবস্থায় কর্তৃপক্ষের কাছে রোজিনা ইসলামের অধিকারকে সম্মান ও সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সিপিজে। তার বিরুদ্ধে চলমান সকল হেনস্তা বন্ধেরও অনুরোধ করেছে সংগঠনটি।

ওই চিঠিতে আরও স্বাক্ষর করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এন্টি ডেথ-পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, কোয়ালিশন ফর উইমেন ইন জার্নালিজম, সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, ডার্ট সেন্টার ফর জার্নালিজম এন্ড ট্রমা, ফ্রি মিডিয়া মুভমেন্ট, ফ্রন্ট লাইন ডিফেন্ডার, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্ট, ওভারসিজ প্রেস ক্লাব অব আমেরিকা, পাকিস্তান প্রেস ফাউন্ডেশন, পেন আমেরিকা, পেন বাংলাদেশ, পেন ইন্টারন্যাশনাল, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, সাউথ এশিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: