‘সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন ছিলেন সংকট সমাধানের সারথি’

তিনি ছিলেন বিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের অবিভক্ত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব।

‘সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন ছিলেন সংকট সমাধানের সারথি’

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন সাংবাদিকতার সংকট সমাধানের সারথি। তার মৃত্যুতে সাংবাদিক সমাজ একজন অভিভাবককে হারিয়েছে। তিনি ছিলেন বিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের অবিভক্ত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য তার আদর্শ অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। 

আজ মঙ্গলবার সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে যৌথভাবে এই স্মরণসভার আয়োজন করে সম্পাদক পরিষদ ও নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। এতে সভাপতিত্ব করেন নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ। স্মরণসভার শুরুতে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবাহান চৌধুরী বলেন, আমি আর রিয়াজ ভাই একই সঙ্গে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম। আমরা পাকিস্তান অবজারভারে কাজ করেছি। দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি একটি ধারায় চলে গেছেন। এক সময় ঐক্যবদ্ধ পতাকার তলে আমরা কাজ করতাম। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে সাংবাদিক ইউনিয়নের ঐক্যবদ্ধ পতাকা পেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা সে পতাকা ধরে রাখতে পারিনি। ১৯৯২ সালে আমরা বিভক্ত হয়ে গেলাম। একটি হলো মুক্তিযুদ্ধ চেতনার। আরেকটি জাতীয়তাবাদী। এরপর আমরা কিছু বিষয়ে এক হয়েছি। তিনি সাংবাদিক ছিলেন এবং সাংবাদিক হিসেবেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘তিনি সাংবাদিকতার সব কিছু অর্জন করেছেন। তিনি রিপোর্টার থেকে সম্পাদক হয়েছেন। উচ্চ স্লোগান না দিয়েও কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, আমরা তার থেকে শিখেছি। তিনি পেশাগত মূল্যবোধ ধারণ করতেন। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পেশার উপরে কখনোই দলীয় রাজনীতিকে গুরুত্ব দেননি।’

বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘রিয়াজ উদ্দিন একজন আপাদমস্তক সাংবাদিক ছিলেন। তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের বন্ধু। দল মত নির্বিশেষে সবার কথা বলতেন। তিনি প্রেস ক্লাবের ৪ বারের সভাপতি ছিলেন। সাংবাদিক সংগঠন বিএফইউজে দুইভাগ হলেও তিনি কখনো দলকে প্রাধান্য দিতেন না, সকল সাংবাদিকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন।’

সাংবাদিক মনজুরুল হাসান বুলবুল বলেন, ‘রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একাধারে ভালো মানুষ, ভালো সাংবাদিক, ভালো নেতা। তিনি শুধু পেশাগত দিকই খেয়াল রাখতেন না, ব্যক্তিগত পারিবারিক বিষয়ে সাংবাদিকদের খোঁজ নিতেন। কোনো সংকটে রিয়াজউদ্দিন ভাই থাকলে আমরা জানতাম এর সমাধান হবে।’

যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করেছেন। সাংবাদিকদের মাধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকতে পারে, কিন্তু তিনি পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করেছেন। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তিনি বিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের অবিভক্ত মানুষ ছিলেন। মতানৈক্য থাকতে পারে কিন্তু তাতে দূরত্ব বাড়ে না, এটা তিনি তার আচরণ ও কর্মে প্রমাণ করেছেন। মেরুদণ্ড সোজা রেখে কথা বলার মত সাহসী মানুষ ছিলেন তিনি।’

প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা পারভীন বলেন, ‘আমরা একে একে অভিভাবক শূন্য হয়ে যাচ্ছি। রিয়াজ উদ্দিন ভাই শুধু একজন খ্যাতিমান সাংবাদিকই ছিলেন না, তিনি একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক ছিলেন। কিছুদিন আগেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, রিয়াজ ভাইকে আমরা প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য করব।’

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘বাবা সব সময় আমাদের আদর্শিক একটা চেতনায় বড় করেছেন। সৎ পথে চলা, মানুষকে ভালোবাসা শিক্ষা দিতেন। তিনু পরিবার এবং সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সমানভাবে দেখতেন। বরং সংবাদকর্মীদের প্রতি বেশি উদার ছিলেন।’

উল্লেখ্য, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ শনিবার রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি করোনা-পরবর্তী জটিলতায় ভুগছিলেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় যোগদানের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news