সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে লাশ হলেন যুবক

অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে  ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়ে প্রাণ হারান বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে লাশ হলেন যুবক

প্রথম নিউজ, রাজশাহী: অভিমানে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ীর যুবক আব্দুর রহিম মাসুদ (১৮)। সেখানে শ্রমিকের কাজ করে নিজের মত করে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে  ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়ে প্রাণ হারান বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

আব্দুর রহিম মাসুদ উপজেলার দিয়াড় মানিকচক কামারপাড়া এলাকার বাবলু রহমানের ছেলে। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সীমান্তের প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে ওই যুবকের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে দেশটির পুলিশ। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বজনরা নিশ্চিত করেন মরদেহ মাসুদেরই। এদিকে বিজিবির কাছে সীমান্তে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনে হত্যার কোনো তথ্য নেই। ফলে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে ধরতে পারেনি বিজিবি।

পতাকা বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী-১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহম্মেদ। তিনি বলেন, সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে বাংলাদেশি মারা গেছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমাদের জানা মতে, গত ১৮ সেপ্টেম্বরে নৌকাডুবিতে এক বাংলাদেশি নিখোঁজ হয়েছেন। আমরা তার ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিচ্ছিলাম। সীমান্তে চলে যেতে পারে এমন বিষয় সামনে রেখে আমরা বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগ করেছি। পতাকা বৈঠক হয়েছে।

এরই মধ্যে ভারতীয় সীমান্তের প্রায় দুই কিলোমিটার অভ্যন্তরে গলিত মরদেহ উদ্ধার হয়। বিষয়টি জানতে পেরে মাসুদের বাবা বিজিবিকে জানায়। এরপরই শুক্রবার বিকেলে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকে বসে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সেখানে বিএসএফ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া মরদেহটি একেবারেই কঙ্কাল হয়ে গেছে। মরদেহ শনাক্ত করার মতো কিছু নেই। দেশটির পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।

বিজিবি অধিনায়কের ভাষ্য, যে এলাকায় মরদেহটি পাওয়া গেছে, ওই এলাকাটি পদ্মার উজানে। সেখানে মরদেহ যাওয়ার কথা নয়। তাছাড়া এত তাড়াতাড়ি মরদেহ পঁচে যাওয়ারও কথা নয়। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় ধরে নেওয়া হচ্ছে এই মরদেহটি অন্য কারও। মাসুদকে নিখোঁজ ধরে এখন তার সন্ধানের চেষ্টা চলছে।

তবে ওই মরদেহটি নিখোঁজ মাসুদের বলে জানিয়েছেন চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, মরদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে গেছে ভারতের রাণীতলা থানা পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে তারা ভারতীয় স্বজনদের থানায় পাঠান। পরে তিনি নিজেও ওসির সঙ্গে কথা বলেন। হোয়াটঅ্যাপে মরদেহ ও উদ্ধার হওয়া আলামতের ছবি পাঠান ওসি। পরনের লুঙ্গি-গেঞ্জি দেখে মাসুদের স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করেন। প্রথমে বিএসএফ বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে।

চেয়ারম্যান আরও জানান, মাজারদিয়ার বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে আরও তিন যুবকের সঙ্গে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিলেন মাসুদ। ওই সময় বিএসএফের হারুডাঙা ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। অন্য তিনজন আগেও সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। তারা কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসেন। কিন্তু বিএসএফ এর হাতে ধরা পড়ে যান মাসুদ। পরে তাকে নির্যাতনের পর হত্যা করে মরদেহ ফেলে রাখে বিএসএফ। সঙ্গে যাওয়া ওই চার যুবক বাইরের এলাকার। পরে তাদেরও আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।

চেয়ারম্যান দাবি করেন, নৌকাডুবিতে যুবক নিখোঁজের বিষয়টি তিনিই প্রথম বিজিবির সেক্টর কমান্ডারকে জানান। এরপর ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক ও ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে এই খবর যায়। তথ্য প্রমাণ না থাকায় ওই সময় তারা জোর দিয়ে বিষয়টি বলতে পারেননি। এদিকে মাসুদের বাবা মো. বাবলু গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অভিমান করে ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় মাসুদ। পরে তিনি জানতে পারেন, ওই দিন বিকেলের দিকে বিজিবির হারুডাঙ্গা ক্যাম্প হয়ে কয়েকজনের সঙ্গে সে ভারতের সীমান্তের দিকে যাচ্ছিলেন।

বিএসএফের ধাওয়ায় অন্যরা পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে মাসুদ। তাকে নির্যাতন করে হত্যার পর সীমান্ত এলাকায় মরদেহ ফেলে রাখে। ছেলের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানান এই বাবা।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom