সীমান্তে বাড়ছে উদ্বেগ, পুশইন ঠেকাতে সতর্ক বিজিবি

সীমান্তে বাড়ছে উদ্বেগ, পুশইন ঠেকাতে সতর্ক বিজিবি

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) অপতৎপরতা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একের পর এক পুশইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে শত শত মানুষকে। এ বিষয়ে সীমান্তজুড়ে সতর্কতা ও তৎপরতা বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। 

বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মুরাইছড়া সীমান্ত দিয়ে ১৪ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশে পুশইন করে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী। এর আগের দিন বড়লেখা উপজেলার লাতু ও পাল্লারতল সীমান্ত দিয়ে ৪৪ জনকে ঢুকিয়ে দেয় বিএসএফ। দুই দিনে মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়েই বাংলাদেশে পুশইন করা হয়েছে ৫৮ জনকে।

শ্রীমঙ্গলের ৪৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএসএম জাকারিয়া জানিয়েছেন, আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা মূলত কুড়িগ্রাম ও যশোর জেলার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ভারতে বসবাস করলেও সম্প্রতি দেশটির পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষীরা কঠোর অবস্থান নিয়ে তাদের ধরে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। পরে সুযোগ বুঝে পুশইন করা হচ্ছে বাংলাদেশে।

এছাড়া সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত দিয়েও বুধবার ১৬ জন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে বিজিবি। এর মধ্যে ৮ জন পুরুষ, ৬ জন নারী ও দুই শিশু রয়েছে। এদেরও একইভাবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ধরে এনে সীমান্তে ফেলে যায় বিএসএফ। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিজিবি এসে তাদের আটক করে।

জানা যায়, সীমান্ত পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে ভারতের মেঘালয়ের পূর্ব জৈন্তিয়া হিলস জেলায়। সেখানে আন্তর্জাতিক সীমান্তজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ৫শ মিটার পর্যন্ত এলাকায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, গবাদিপশু পারাপার, অস্ত্র বা বিপজ্জনক বস্তু বহনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তের ওপারে এমন সতর্ক অবস্থানের পর বাংলাদেশ অংশেও সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী। গোয়াইনঘাটের খাসিয়া হাওড়, তামাবিল, সোনাটিলা, সংগ্রামপুঞ্জি, পান্তুমাই, বিছনাকান্দিসহ ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্টে টহল জোরদার করা হয়েছে।

৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নাজমুল হক জানিয়েছেন, মেঘালয় সীমান্তে ১৪৪ ধারা জারির পর সম্ভাব্য পুশইন ঠেকাতে আমরা অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং প্রতিটি সীমান্ত ফাঁড়ি সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। বিজিবির তামাবিল ফাঁড়ির কমান্ডার সুবেদার হাবিবুর রহমান জানান, এখনো তার আওতাধীন এলাকায় পুশইনের কোনো ঘটনা ঘটেনি, তবে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছেন তারা।

দেশের ভেতরে অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি যেমন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তেমনি সীমান্তবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে উৎকণ্ঠা। সীমান্তবর্তী জেলা ও উপজেলাগুলোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের পাশাপাশি পুশইনের মতো অবৈধ প্রক্রিয়া বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।