সরকারের করুণা প্রার্থী জাপাসহ মহাজোটের শরীকরা

সরকারের করুণা প্রার্থী জাপাসহ মহাজোটের শরীকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারী-২০২৪। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে তফসিল ঘোষণা করেছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ও শেষ হয়েছে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের শরীকদের তেমন পাত্তা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদে জাপার ২৩টিসহ ১৪ দলীয় জোটের আরও ৮টি এমপি থাকলেও এবার এতটি আসন আওয়ামী লীগ ছাড়বে না এটি প্রায় নিশ্চিত। আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দিয়ে ফেলেছে। শুধুমাত্র নারায়নগঞ্জের একটি আসন ও কুষ্টিয়ার একটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। ১৪ দলের শরীক বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ঢাকার আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমকে। রাশেদ খান মেনন ঢাকায় সিট না পেয়ে বরিশালের দুটি আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার জন্যও রাখা হয়নি কোন আসন। তিনি রাজশাহী-২ সদর আসন থেকে তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর জন্য কুষ্টিয়ায় একটি সিট রাখা হলেও  তার সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের জন্য ফাঁকা রাখা হয়নি কোন আসন। গত সোমবার ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হলেও তাদের কোন কোন আসনে ছাড় দেওয়া হবে তা চুড়ান্ত হয়নি। জাতীয় পার্টির মনোভাব শেষ পর্যন্ত কি দাঁড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখছে সরকার। কারণ নানা আলোচনা-সমালোচনা ও নাটকীয়তার পর আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা অংশ নিলেও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় সরকারের মধ্যে সন্দেহ দূর হচ্ছে না। যদিও গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে বলে চাউর আছে। গণমাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাদের চাহিদা অনুযায়ী আসন না পেলে মত পরিবর্তন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতেও পারেন। এছাড়াও জাপাকে যদি  আওয়ামী লীগ সিট না ছাড় দেয় তাহলে দু একটি আসন ছাড়া বেশিরভাগ আসনে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। কারণ বিগত উপনির্বাচনগুলোতে জাপা এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও কোথাও তাদের প্রার্থীর জামানত টিকে নি। এ অবস্থা জোটের অন্য প্রার্থীদের বেলায়ও হবে বলে তাদের নেতাকর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছে। 

এদিকে বিএনপিসহ বেশিরভাগ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে হরতাল অবরোধসহ ধারাবাহিক আন্দোলনে আছে। তাদের দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোন ভাগাভাগির নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। 
ওয়ার্কার্স পার্টি চায় ৭ আসন, জাসদ চায় আসন বাড়াতে:গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনে নিজ বাসায় আমির হোসেন আমুর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, নিজ নিজ দলের কথা বলেছেন নেতারা। জোটের অন্য কোনো শরিক দল নিয়ে আলোচনা হয়নি। তিন পক্ষই এটি সৌজন্য সাক্ষাত্ বললেও আসনের ভাগ নিয়ে আলোচনা উঠেছিল। এই আলোচনায় ওয়ার্কার্স পার্টি সাতটি আসন দাবি করেছে। আর জাসদ কোনো সুনির্দিষ্ট আসনসংখ্যা না বললেও বর্তমানের চেয়ে বেশি আসন চায়। শরিকরা জোট থেকে যেসব আসন পাবে, সেসব আসনে তারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে। বাকি আসনগুলোতে নিজের দলের প্রার্থীদের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। তাঁদের দাবিগুলো জোটের প্রধান শেখ হাসিনার কাছে আমির হোসেন আমু তুলে ধরবেন।
জানতে চাইলে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা শুধুই সৌজন্য সাক্ষাত্। ব্যক্তিগত বৈঠক বলা যায়। জাসদের যা আসন আছে সেটা থেকে বাড়াতে বলেছি।’ দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের আসন নিশ্চিত করার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘অনেক মুখী আলোচনা হয়েছে। আমরা কারো নাম উল্লেখ করতে চাই না।’

বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন  বলেন, ‘অনেক কথাই এখনে বলা যাচ্ছে না। দলের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ কোনো বৈঠক হয়নি। রোজ রোজ দাবিদাওয়া চাওয়া-পাওয়া উত্থাপন হয় না। গত (সোমবার) নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সামনে তাঁরা কথা বলেছেন। নেত্রী তাঁদের কথা শুনেছেন।’

বহাল থাকছে স্বতন্ত্র প্রার্থী

বেশির ভাগ সংসদীয় আসনেই আওয়ামী লীগের ঘরের ছেলেরা নৌকা প্রতীকের বাইরে থেকে ভোটে অংশ নিচ্ছেন। এতে করে জোটের শরিক ও জাতীয় পার্টি দুই পক্ষই অস্বস্তিতে রয়েছে।

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জোটের শরিক নেতাদের বৈঠকেও স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে আলোচনা উঠেছিল। ওই বৈঠকে এই আলাপ তোলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তবে জোটের প্রধান শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোনো সম্মতি পাওয়া যায়নি।

গতকাল ধানমণ্ডিতে অবস্থিত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসতে চাপ দেওয়া নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন।’

উল্লেখ্য ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হওয়া ১৪ দলীয় জোটের শরীক অন্য দলগুলো হলো-সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, জাসদ (ইনু), গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাসদ, তরিকত ফেডারেশন এবং জেপি। এছাড়াও ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে জাপাকে নিয়ে গঠিত হয় মহাজোট।