সরকারের সিন্ডিকেট, লুটপাট ও ব্যর্থতায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ অসহায়: রিজভী

আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

সরকারের সিন্ডিকেট, লুটপাট ও ব্যর্থতায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ অসহায়: রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: শুধু খেজুর নয়, সরকারের সিন্ডিকেটবান্ধব লুটপাটের নীতি ও চরম ব্যর্থতায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিশ্বের প্রতি মুসলমানের কাছেই রমজান মাস অত্যন্ত গুরুত্তপূর্ণ মাস। পবিত্র রমজান মাসে মানুষ একটু শান্তি এবং স্বস্তিকর পরিবেশে রোজা রাখবে, সাহরী করবে, ইফতার করবে, এবাদত বন্দেগী করবে, প্রত্যেকটি মানুষেরই এমন আশা—আকাঙ্খা। কিন্তু গণবিরোধী অগণতান্ত্রিক সিন্ডিকেটবাজ সরকার ক্ষমতায় থাকলে মানুষের আশা—আকাঙ্খা গভীর হতাশায় নিমজ্জিত থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। যারা দেড় দশক ধরে বিনা ভোটের ডামি সরকার হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে রেখেছে তাদের প্রথম এবং প্রধান শত্রু হচ্ছে গণতন্ত্রকামী জনগণ। তারা জনগণের জন্য সুন্দর পরিবেশ পরিস্থিতি নিশ্চিত করা দূরে থাক বরং জনগণের রক্ত নিংড়িয়ে নিতেই সদা তৎপর। দেশের আপামর জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সংস্কৃতি নিয়ে ঠাট্টা মস্করা করতেও এদের বিবেকে বাধে না।      
সরকার গতকাল নিম্নমানের পচা খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে রোজাদারদের উপহাস করেছে। রমজান মাসে ইফতারের সময় খেজুর খাওয়ায় ধর্মীয় অনুভুতি কাজ করে। অথচ ডামি সরকারের একজন ডামি মন্ত্রী ইফতার নিয়ে কতই না উপদেশ দিচ্ছেন জনগণকে। যেহেতু এরা অবাধ—সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এমপি বা মন্ত্রী হননি, এই কারণে তারা ‘বিগ ব্রাদার’ হয়ে রোজাদার মানুষদের নিয়ে মশকরা করছেন। 
পবিত্র রমজান মাসের খেজুর আমদানির জন্য ভতুর্কি দুরে থাক, উল্টো খেজুরকে বিলাসী পণ্য উল্লেখ করে খেজুর আমদানির উপর শুল্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বিনাভোটের 'ডামি সরকার'। খেজুরের উপর ভর্তুকি না দিলেও ‘ডামি সরকার’ শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সোনালী ব্যাংক, রূপালি ব্যাংককে। আওয়ামী লুটেরা চক্র ব্যাংক থেকে বিভিন্ন প্রজেক্টের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া বানিয়ে দিয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে ৯ টি ব্যাংকে জ্বলছে লাল বাতি, আরও ১২টির অবস্থা খুব খারাপ।সব মিলিয়ে ৩৮টি ব্যাংকে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে 'ডামি সরকার' এইসব ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। ঋণ খেলাপি, লুটেরা, টাকা পাচারকারীদের বাঁচিয়ে রাখতে ভর্তুকি দিলেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইফতার করার জন্য খেজুর আমদানির উপর ভর্তুকি দিচ্ছেন না। খেজুর আমদানির উপর ভর্তুকি না দিয়ে উল্টো বেশি করে শুল্ক আরোপ কোনো সাধারণ অপরাধ নয়, রীতিমতো মহাপাপ।    
তিনি বলেন, শুধু খেজুর নয়, সরকারের সিন্ডিকেটবান্ধব লুটপাটের নীতি ও চরম ব্যর্থতায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। বাজারে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, চিনি, আটা, ময়দা, ছোলা, বেসন, লেবু, শসা, মাছ—মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম মানুষের আয় থেকে দুস্তর ব্যবধান। দুর্নীতিবাজ 'ডামি সরকার' বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ এই কারণে যে, সিন্ডিকেটবাজরা সকলেই সরকারের আশ্রিত লোক। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে হাজার হাজার মাইল দুরে কোথায় কোন দেশে যুদ্ধ হচ্ছে দুর্নীতিবাজ 'ডামি সরকার' সেইসব অজুহাত তুলছে। প্রতিদিন দাম বাড়ার নানান ধরনের উদ্ভট কারন আবিস্কারে ব্যস্ত সরকার। শেখ হাসিনা সিন্ডিকেটের পক্ষে জনগনকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন। অথচ, বাস্তবতা ভিন্ন।
গত শুক্রবার প্রকাশিত জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন—“ফাও” এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে টানা ৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম কমছে অব্যাহতভাবে। জাতিসংঘ বলছে, ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমে যাওয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে গত ৭ মাসে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ, ভোজ্য তেলের দাম ১১ শতাংশ এবং মাংসের দাম দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। সারাবিশ্বে দাম কমলেও বাংলাদেশে প্রতিদিন কেবল বাড়াচ্ছে জনগণের ‘পকেট কাটা সরকার’। বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়া—কমার সঙ্গে বিশ্ব পরিস্থিতির সম্পর্ক নেই।  দেশে জিনিসপত্র দাম বাড়া — কমার সঙ্গে সম্পর্ক আওয়ামী লুটেরাদের সঙ্গে। আওয়ামী লুটেরা আর টাকা পাচারকারীদের দমণ করা না গেলে কখনোই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়—ক্ষমতার মধ্যে আসবেনা।    

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। দেশে ৯০ ভাগের বেশি মুসলমান। সুতরাং, আমরা দেখে আসছি, রমজান মাস জুড়ে সাধারণত সারাদেশের সকল  স্কুল কলেজ কিংবা মাদ্রাসা—সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতো। অথচ, এবার ব্যতিক্রম। 'ডামি সরকার' রমজানের অর্ধেক মাস দেশের সকল স্কুল কলেজ মাদ্রাসা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। প্রশ্ন হচ্ছে, 'ডামি সরকার ধর্মীয় সংস্কৃতি সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয় নিয়ে কি কারণে বিতর্ক তৈরী করতে চায় ? আপনারা সুক্ষভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, রমজান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা, ইফতার পার্টি নিষিদ্ধ অর্থাৎ বর্তমান 'ডামি সরকার' বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় সংস্কৃতি—বিশ্বাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করছে।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান বিশেষ করে দেশের আলেম সমাজকে উদ্দেশ্য করে গতকাল বলেছেন, আলেম সমাজ যদি অন্য কোনো ইস্যু নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ বাড়াতে থাকে আমরা যদি দেশে ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে চলমান ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক সচেতন না হই, আমরা যদি প্রায়োরিটি ইস্যু নির্ধারণ কিংবা করণীয় নির্ধারণে ব্যর্থ হই তাহলে সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয় আমাদেরকেও হয়তো নিজ ভূমিতেই নির্যাতিত ফিলিস্তিনীদের ভাগ্যবরণ করতে হবে। সেই আলামত — সে লক্ষণ ক্রমেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
লালমনিরহাট জেলাধীন সদর উপজেলার অন্তর্গত খুনিয়াগাছা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোঃ ফেরদৌস আলীকে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গত ১০ মার্চ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ১১ মার্চ ভোরে মহেন্দ্রনগরের নিজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে তার লাশ পাওয়া যায়। আওয়ামী সন্ত্রাসী দ্বারা এই ধরণের ন্যাক্কারজণক হত্যাকান্ডের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, একইসাথে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোঃ ফেরদৌস আলীর হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনার জোর আহ্বানসহ নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। 
গ্রেফতার ঃ
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে গত ১১ মার্চ ২০২৪ তারিখ একটি মিথ্যা মামলায় আদালতে জামিন চাইতে গেলে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাঁর নি:শর্ত মুক্তির জোর আহবান জানাচ্ছি। 
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পিরোজপুর জেলা বিএনপি আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, কদমতলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন শেখ ও পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়াদীর্ কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জালিস মাহমুদকে গত ০৯ মার্চ ২০২৪ তারিখ পিরোজপুর জেলা বিএনপির শান্তিপূর্ণ লিফলেট বিতরণ শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে গ্রেফতার করে পুলিশ। অবিলম্বে তার নি:শর্ত মুক্তির জোর আহবান জানাচ্ছি। 

বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম বলেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় উল্টো ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে গত ০৯ মার্চ ২০২৪ তারিখ রাতে পুরানাপল্টনস্থ নিজ চেম্বার থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অবিলম্বে তাঁর নি:শর্ত মুক্তির জোর আহবান জানাচ্ছি।  মেহেরপুর জেলা বিএনপি'র সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণসহ পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, জেলা কৃষকদলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, জেলা যুবদলের সভাপতি জাহিদ বিশ্বাস, আমঝুঁপি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান মেম্বার, সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান মুজিব ও মেহেরপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আকিব জাবেদ সেনজির আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে গত ১০ মার্চ ২০২৪ তারিখ একটি মিথ্যা মামলায় হাইকোর্টের জামিন থাকা সত্বেও মেহেরপুর চিফ জুডিশিয়াল আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং একইসাথে মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণসহ আটককৃত সকল নেতৃবৃন্দের নি:শর্ত মুক্তির জোর আহবান করছি।