সাংসদ শফিকুলের দেশে-বিদেশে বাড়িবিলাস: সম্পদ বেড়েছে ২৬ গুণ

  * নাটোরে দুটি ও কানাডায় একটি বিলাসবহুল বাড়ি। ঢাকায় ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পদ অর্জন। * নিজের দেওয়া হিসাবেই ১২ বছরে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২৬ গুণ, স্ত্রীর বেড়েছে ৪১ গুণ।

সাংসদ শফিকুলের দেশে-বিদেশে বাড়িবিলাস: সম্পদ বেড়েছে ২৬ গুণ
কানাডায় টরন্টোর স্কারবরোতে সাংসদ শফিকুল ইসলামের বিলাসবহুল বাড়ি

প্রথম নিউজ ডেস্ক: নাটোর শহরটা দেশের অন্য মফস্বল শহরের মতোই। বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট কিংবা অফিস-আদালতে বাড়তি কোনো আকর্ষণ নেই। তবে শহরের কান্দিভিটুয়া মহল্লা কিছুটা ব্যতিক্রম। এই এলাকার বাড়তি আকর্ষণের কেন্দ্রে আসলে সড়কের দুই পাশে থাকা কাছাকাছি দুটি বাড়ি।

একটির নাম ‘জান্নাতি প্যালেস’। দেখতেও প্রাসাদের মতো। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাড়িটির কাজ শুরু হয়। সম্পন্ন হয়েছে মাস ছয়েক আগে। বাড়িটির সীমানাদেয়াল, সুবিশাল গেট সুন্দর কারুকার্যখচিত। মূল বাড়িটা তিনতলা, ট্রিপলেক্স। সামনে খোলা জায়গা। ছাদে লাল টালির ছাউনি। বসার কক্ষ, শয়নকক্ষসহ অন্যান্য কক্ষের বাইরে তিনতলার অন্যতম আকর্ষণ সুইমিংপুল ও ব্যায়ামাগার। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, বাড়িটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি আগে পুকুর ছিল। রাতারাতি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
আলোচিত এই বাড়ি নাটোর সদর আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম ওরফে শিমুলের। প্রায় ২৮ শতাংশ জায়গার ওপর বাড়িটি করেছেন স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতির নামে। আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, বাড়িটিতে দামি সব বিদেশি উপকরণ ও আসবাব ব্যবহার করা হয়েছে।

    * নাটোরে দুটি ও কানাডায় একটি বিলাসবহুল বাড়ি। ঢাকায় ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পদ অর্জন। * নিজের দেওয়া হিসাবেই ১২ বছরে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২৬ গুণ, স্ত্রীর বেড়েছে ৪১ গুণ।

আলোচিত বাড়িটির ১০০ গজের মধ্যে আরেকটি তিনতলা বাড়ি যে কারও চোখে পড়বে। সাদা এই বাড়িতে থাকেন সাংসদের ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম ওরফে সাগর। এই বাড়িও তিনতলা, ট্রিপ্লেক্স। ১৮ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হয়েছে এটি। বাড়ির নকশা, বড় দরজা, ভেতরের আসবাব-সব মিলিয়ে নাটোর শহরে বাড়িটি ব্যতিক্রম। এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল সাংসদের বাড়ির আগে আগে।

শফিকুল ইসলাম নাটোর সদর আসনের সাংসদ হন ২০১৪ সালে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ওই বছরই তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এর আগে তাঁরা চার ভাই কান্দিভিটুয়া এলাকাতেই পৈতৃক দোতলা বাড়িতে থাকতেন। এখন পুরোনো বাড়িটিতে সাংসদের অন্য দুই ভাই থাকেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, সাংসদ শফিকুল ইসলামের বাবা হাসান আলী সরদার ছিলেন ছোটখাটো ঠিকাদার। মোটামুটি সচ্ছল জীবন যাপন করতেন। দোতলা বাড়ি, কিছু কৃষিজমি ছাড়া বলার মতো তেমন কিছু ছিল না পরিবারটির। হাসান আলীর ছেলেদেরও দৃশ্যমান আয়ের উৎস ছিল না। বছর ছয়েক আগে হাসান আলী মারা যান। শফিকুল সাংসদ হওয়ার পরই পরিবারের সবার ভাগ্য ঘুরে যায়। তাঁর দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখায়, গত ১২ বছরে সাংসদের সম্পদ বেড়েছে ২৬ গুণ। তাঁর ‘গৃহিণী’ স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৪১ গুণ।

নাটোরের মতো কানাডার  টরন্টোর নিকটবর্তী স্কারবরো শহরে আরেকটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে শফিকুল ইসলামের। গত বছরের শুরুতে বাড়িটি কেনা হয়েছে। সাংসদের ঘনিষ্ঠ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বাড়িটি কিনতে ১৭ লাখের বেশি কানাডিয়ান ডলার খরচ হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ১২ কোটি টাকা। এই বাড়ির ছবি, দলিল, টাকা পরিশোধের রসিদ নাটোরে আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে রয়েছে।
শফিকুল ইসলামের স্ত্রী তাঁদের ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে কানাডায় বসবাস করছেন। নাটোরে নতুন বাড়ি নির্মাণের পর স্ত্রী, সন্তান দেশে আসেননি। সাংসদ একাই থাকেন। অবশ্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর শফিকুল কানাডায় গেছেন। মাসখানেক সেখানে থাকবেন বলে ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন।

দেশে-বিদেশে বিলাসবহুল বাড়ি ছাড়াও সাংসদের পরিবারের সদস্যদের আটটি বাস রয়েছে। এগুলো ‘সামির চয়েস’ এবং ‘সালেহা’ পরিবহন নামে চলাচল করছে। আরও আছে দুটি ট্রাক।

সম্প্রতি নাটোরের সরকারদলীয় চার সাংসদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের চারজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে সাংসদ শফিকুলের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দলকে পারিবারিকীকরণের বিষয়ে অভিযোগ করেন। তাতে দেশে-বিদেশে বিলাসবহুল বাড়ি ছাড়াও ঢাকার আদাবর রিং রোডে সাংসদ তাঁর স্ত্রী, শাশুড়ি ও ভগ্নিপতির নামে পাঁচটি ফ্ল্যাট কেনার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নাটোরের হাতিমারা বিলে ১৫-১৬ বিঘা জমি এবং যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে নামে-বেনামে সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।


কানাডায় অবস্থান করা সাংসদ শফিকুলের সঙ্গে ফোনে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। নাটোরে বাড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো ফকিন্নির ছেলে নই। আমার ঠিকাদারি ব্যবসা আছে। বাড়ি নির্মাণের বিষয় আয়কর ফাইলে উল্লেখ আছে।’ তাঁর ভাইয়ের বাড়ির বিষয়ে বলেন, ‘ওর পরিবহন ব্যবসা আছে। সেই আয় থেকেই বাড়ি করেছে।’

নামে-বেনামে সম্পদের বিষয়কে ‘অপপ্রচার’ দাবি করে সাংসদ বলেন, বাবা হাসান আলী মারা যাওয়ার আগে ভাইবোনদের মত নিয়ে সব নগদ ও ব্যাংকে থাকা অর্থ তাঁর নামে দিয়ে গেছেন।

কানাডায় নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে শফিকুল বলেন, ‘আমার এমন কোনো অনুমতি নাই। ছেলেমেয়ে সেখানে শিক্ষার্থী। আমার স্ত্রী ছেলেমেয়েদের দেখভাল করেন। কারোই নাগরিকত্ব নাই।’ সে দেশে বিলাসবহুল বাড়ি কীভাবে কিনলেন, এ প্রশ্নের পর তিনি দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে কানাডায় কাজ করেন। ঋণ নিয়ে বাড়ি কিনেছেন।

আর সাংসদের ভাই সাজেদুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি গরুর খামার ও পুকুরে মাছ চাষ করে আয় করেছেন। এ ছাড়া বাবার যে সম্পদ আছে, তাতে বাড়ি ১০টা করা সম্ভব।

কী ছিলেন, কী হলেন: শফিকুল ইসলাম প্রথম জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন ২০০৯ সালে, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে। সে সময় তিনি নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা দাখিল করেন, তাতে তাঁর আয় দেখানো হয় বছরে দুই লাখ টাকা। আর পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয় ঠিকাদারি ও সরবরাহকারী। তখন সব মিলিয়ে তাঁর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল সাড়ে ১৪ লাখ টাকার মতো। স্ত্রীর ছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। তাঁদের কোনো গাড়ি ছিল না। একটি মোটরসাইকেলই সম্বল। নিজ নামে কোনো বাড়িও ছিল না।

২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুসারে, তাঁর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৩২ হাজার। যুক্ত হয় একটি গাড়ি। আর স্ত্রীর সম্পদ বেড়ে হয় ১০ লাখ ৯০ হাজার।

২০১৪ সালে সাংসদ ও দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে জেলা সদরের নিয়ন্ত্রক বনে যান তিনি। এর সঙ্গে সম্পদও বাড়ে পাল্লা দিয়ে।
সাংসদ শফিকুল ইসলামের ছোট ভাইয়ের বিলাসবহুল বাড়ি। ২৮ সেপ্টেম্বর নাটোর শহরের পিটিআই (কান্দিভিটুয়া) সড়কসংলগ্ন এলাকায়
সাংসদ শফিকুল ইসলামের ছোট ভাইয়ের বিলাসবহুল বাড়ি। ২৮ সেপ্টেম্বর নাটোর শহরের পিটিআই (কান্দিভিটুয়া) সড়কসংলগ্ন এলাকায়প্রথম আলো

২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামা অনুসারে, সাংসদ শফিকুলের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা এবং সঞ্চয়পত্রের পরিমাণ ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ২০০৯ সালের দেওয়া হিসাবের সঙ্গে তুলনা করলে ১২ বছরে সাংসদে সম্পদ বেড়েছে ২৬ গুণ।

২০১৮ সালের হিসাবে, স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার। যার বেশির ভাগই তিনি নগদ, ব্যাংকে জমা এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হিসেবে দেখান। যোগ হয় একটি জিপ গাড়ি। অর্থাৎ এক যুগে স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৪১ গুণ। হলফনামা অনুযায়ী, স্ত্রীর পেশা গৃহিণী। তাহলে তাঁর এত সম্পদ বাড়ল কীভাবে? সাংসদের দাবি, তাঁর স্ত্রী ব্যবসা করে। কী ব্যবসা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব তো বলা যাবে না। ট্যাক্স ফাইলে সব বলা আছে।’
দৃশ্যমান আয়ের উৎস ছাড়াই কীভাবে অল্প সময়ে এত বিপুল সম্পদের মালিক বনেছেন সাংসদ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গত ২১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর নাটোরে সরেজমিন ঘুরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। অনুসন্ধানে জানা যায়, শফিকুল ইসলাম সাংসদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সরকারি কাজের ঠিকাদারির নিয়ন্ত্রণ, পরিবহন খাত, সরকারের খাদ্য কর্মসূচি, জলমহালের ইজারা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি তাঁর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে বলেন, সাত বছরে শফিকুলের পরিবারের সদস্যদের বিপুল সম্পদের মালিক হওয়াটা সবার চোখে লাগছে। অনেকে টাকা কামালেও কিছুটা রাখঢাক করেন।
ভাই, ভগ্নিপতিদের কবজায় বিভিন্ন খাত

সাংসদের ভগ্নিপতি বোনের জামাই মীর আমিরুল ইসলাম ওরফে জাহান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ভবন নির্মাণের ঠিকাদারি পেয়েছেন তিনি। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় গত ২৪ মে আমিরুলের সামনেই তাঁর ছেলে মীর নাফিউল ইসলাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানকে মারধর করেন। এতে নির্বাহী প্রকৌশলী আহত হন। পরে আবু রায়হান এই ঘটনায় মামলা করেন। এক মাসের মতো কারাগারে থেকে নাফিউল জামিনে মুক্তি পান।

ওই ঘটনার পর নির্বাহী প্রকৌশলী আর নাটোরে আসেননি। রাজশাহী থেকে অফিস করেন। প্রকৌশলী আবু রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নাটোরের দায়িত্বে আর থাকছেন না। তাঁকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এখন বাকি দায়িত্ব পুলিশের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আমিরুল ইসলাম এবং তাঁর দুই ভাই মীর হাবিবুল ইসলাম ও মীর শরিফুল ইসলাম আগে থেকে ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত। তবে শফিকুল ২০১৪ সালে সাংসদ হওয়ার পর জেলায় এই পরিবার প্রায় ৩৮০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন। এর মধ্যে কিছু কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো চলছে। এসব কাজে ধীর গতি, সময়মতো কাজ শেষ না করা এবং নিম্নমানের কাজের অভিযোগ আছে।

সওজ সূত্র জানায়, নাটোর বড়হরিশপুর থেকে বনবেলঘরিয়া বাইপাস পর্যন্ত নালাসহ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের ৫২ কোটি টাকার কাজ পায় আমিরুলের পরিবার। দেড় বছরের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ বিল উঠিয়ে নিয়ে গেছে। অন্যদিকে যতটুকু কাজ হয়েছে সেটারও বিভিন্ন স্থানে গর্ত এবং পিচ সরে গিয়ে এবড়োখেবড়ো হয়ে পড়েছে।

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ঠিকাদার এখনো কাজ বুঝিয়ে দেননি। কোথাও কাজের মান খারাপ হলে তা পুনর্নির্মাণ ছাড়া বিল দেওয়া হবে না।
নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের নাটোর অংশের ১৫৫ কোটি টাকার কাজও পেয়েছেন আমিরুলরা। চুক্তি অনুসারে, ঠিকাদার দূর থেকে মাটি কিনে এনে সড়ক ভরাট করার কথা। কিন্তু তাঁরা সড়কের পাশ থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি তুলে সেই মাটি দিয়ে সড়ক ভরাট করেন। এর ফলে মহাসড়ক ধসে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে সড়ক সম্প্রসারণ করতে গেলে সমস্যার মুখে পড়তে হবে।

এ বিষয়ে নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলার নথি খোলার আদেশ দেন। বিষয়টি এখন বিচারাধীন।

প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করেছে আমিরুলের পরিবার। জেলা পরিষদ সূত্র বলছে, অডিটরিয়ামে লাগানো এসি পর্যাপ্ত ঠান্ডা দেয় না। বিদ্যুতের যে সাবস্টেশন বসানো হয়েছে, সেটি অডিটরিয়াম চালানোর মতো সক্ষম নয়। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোর কাছে এসি ও বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন।

নাটোর ঘুরে জানা গেছে, সাংসদের ভগ্নিপতির পরিবার যেসব সংস্থার কাজ পেয়েছে, এর মধ্যে সওজ, গণপূর্ত বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর উল্লেখযোগ্য। আমিরুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি নিজ যোগ্যতায় কাজ পেয়েছেন।
সাংসদের আরেক ভগ্নিপতি সাজেদুর রহমান ওরফে বুড়া চৌধুরী আগে থেকেই সরকারি জলাশয় ইজারা নিয়ে মাছ চাষের ব্যবসা করতেন। শ্যালক সাংসদ হওয়ার পর বেশির ভাগ সরকারি জলাশয় তাঁর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাংসদের ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম ওরফে সাগর ২০১৬ সালে অনেকটা জোর করেই পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হন।

পরিবহন সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বাস চলে নাটোর হয়ে। এ ছাড়া নাটোর থেকে ঢাকা, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল করে। প্রতিটি বাস থেকে ২২০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। প্রতিদিন এই খাত থেকে চার-পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে। এর পুরোটাই সাংসদের ভাইদের নিয়ন্ত্রণে। সাজেদুল ইসলাম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, সমিতি চালাতে নেতারাই কিছু চাঁদা দেন। দেড় বছর ধরে চাঁদা তোলা হয় না।
তাঁর আরেক ভাই সিরাজুল ইসলামও পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের চাল-গম ক্রয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ আছে। তিনি গত বছর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হাউজি ও জুয়া খেলার বোর্ডসংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক।

নাটোরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও রাজনৈতিক সূত্র বলছে, বিরোধী দল মাঠে নেই। নিজ দল আওয়ামী লীগও কবজায়। ফলে সাংসদ শফিকুলের পরিবারের সদস্যরা টাকা আয়ের বিভিন্ন খাত নির্বিঘ্নে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন।

এই বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সাংসদ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের এভাবে সম্পদ বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। অবৈধ ফায়দা নেওয়া ছাড়া এটা সম্ভব নয়। এখন রাজনীতির মূল আকর্ষণ অবৈধ ফায়দা আদায়। এ জন্যই সরকারি দলের জনপ্রতিনিধি ও পদ-পদবির জন্য প্রাণপণ লড়াই হয়। এমন ঘটনা শুধু নাটোর নয়, সারা দেশেই ঘটছে।

সূত্র :প্রথম আলো

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom