হবিগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসক–সংকটে ব্যাহত হচ্ছে সেবা
এ হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসকের পদ আছে ৫৭টি। কিন্তু বর্তমানে ২৬ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন।

প্রথম নিউজ, হবিগঞ্জ : পাঁচ বছর আগে ১০০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় রূপান্তর করা হয়। নতুন আটতলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু চিকিৎসক, সরঞ্জাম ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকার কারণে এখনো ২৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আটতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের ২০ জুলাই ভবনটির উদ্বোধন করা হয়। এ হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসকের পদ আছে ৫৭টি। কিন্তু বর্তমানে ২৬ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। অর্থাৎ ৩১টি পদই ফাঁকা। নার্স ও কর্মচারী পদেও রয়েছে লোকবলসংকট। অথচ বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী চিকিৎসা নেন। আর ভর্তি থাকেন ৩৫০ থেকে ৪০০ জন। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ গ্রামের রোকেয়া বেগম (৬৫) গত সোমবার সকাল ৮টায় হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে আসেন ফলোআপ করাতে। কিন্তু চার ঘণ্টা সারিতে দাঁড়িয়েও তিনি চিকিৎসকের দেখা পাননি। অসুস্থ হওয়ার কারণে তাঁর শরীরও ছিল দুর্বল। এ কারণে তাঁকে দ্বিগুণ ভোগান্তি পোহাতে হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার বলেন, প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ না দেওয়ায় নতুন ভবনে কার্যক্রম চালু করতে পারছেন না। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল অনুযায়ী বর্তমানে ৩১টি চিকিৎসক পদ ফাঁকা আছে। আর নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫৬টি পদও খালি আছে। হাসপাতালটিতে লোকবল বাড়ানোর জন্য তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান। সোমবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে আটতলা নতুন ভবনের নিচতলায় কোভিড-১৯-এর টিকা দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। চতুর্থ তলাটি অস্ত্রোপচারের জন্য রাখা হয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলাটি কয়েকটি শয্যা ফেলে রাখা হয়েছে। বাকি তলাগুলো ফাঁকা। অথচ শয্যাসংকটের কারণে পুরোনো ভবনের ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে রোগীদের।
বেলা ১১টায় দেখা যায়, বহির্বিভাগে কয়েক শ রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল গাইনী বিভাগে। রোগীদের সঙ্গে আছেন তাঁদের স্বজনেরা। ১ মাসের এক শিশুকে নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো রুবি আক্তার বলেন, দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। শরীর ভালো না থাকায় দাঁড়াতে পারছেন না। চিকিৎসক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ রোগী তাঁকে একাই দেখতে হয়। হাসপাতালের সব চিকিৎসক একই রকম পরিশ্রম করছেন। এ চাপ কমাতে হলে আরও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ও কনসালট্যান্ট (অর্থো-সার্জারির) ২১৪ নম্বর কক্ষে দুপুর ১২টায় দেখা গেল দরজায় তালা ঝুলছে। হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত রোগে সায়মাকে (১) গত রোববার বেলা তিনটায় ভর্তি করা হয়। শিশুর অভিভাবক টিপু আহমেদ বলেন, গত ১৯ ঘণ্টায় কোনো চিকিৎসক তাঁকে এসে দেখেননি। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা আবদুল আলিম। তিনি বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল কেন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না? বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। তাঁরা জনগণের সমস্যা আমলেই নিচ্ছে না। এই গাফিলতি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।