হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে , স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নেই: টিআইবি
হাসপাতালটিতে রয়েছে সুশাসনের ঘাটতি। পরিচালনায় বিরাজ করছে অথর্ব অবস্থা। অবাক করার বিষয় হলো- প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো অর্গানোগ্রাম নেই।

প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে থাকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। হাসপাতালটিতে রয়েছে সুশাসনের ঘাটতি। পরিচালনায় বিরাজ করছে অথর্ব অবস্থা। অবাক করার বিষয় হলো- প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো অর্গানোগ্রাম নেই। ফলে যে যার মতো নিয়োগ দেয়। অভ্যন্তরীণ যে আয়-ব্যয়ের হিসাব থাকে সেটা যথানিয়মে সংরক্ষণ করা হয় না। সে কারণে হাসপাতালটিতে আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে সুশাসন ও আস্থার ঘাটতি থাকায় টিআইবি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আজ সকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকায় হলি ফ্যামিলি হাতপাতালে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। জবাবদিহিতা ছাড়া একটা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। স্বাস্থ্যসেবা শুধু একটা খাত নয়, এখানে একটা মানবিক দিক রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এসময় তিনি ১৪টি সুপারিশ তুলে ধরেন।
সুপারিশগুলো হলো-
১. বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি অর্ডার, ১৯৭৩ বা প্রেসিডেন্ট’স অর্ডার নং ২৬, ১৯৭৩ সংশোধন করে চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা হ্রাস করতে হবে; আয়-ব্যয় ও কার্যক্রম ও নীতি-সিদ্ধান্তবোর্ডসভার সর্বসম্মত ভিত্তিতে গৃহীত হতে হবে এবং বোর্ডের নিকট জবাবদিহি সাপেক্ষে ব্যবস্থাপনা পর্ষদ কর্তৃক বাস্তবায়িত হতে হবে।
২. হাসপাতালের জন্য একটি কার্যকর এবং বাস্তবসম্মত মানবসম্পদ কাঠামো/আর্গানোগ্রাম তৈরি করতে হবে।
৩. একটি পৃথক বিধিমালার প্রণয়ন করে হাসপাতালটির ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল স্তরের কর্মী নিয়োগ, পদোন্নতি, সুযোগ-সুবিধা ও দায়িত্বনির্দিষ্ট করে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. হাসপাতালটির সুনাম পুনরুদ্ধার এবং হাসপাতালে সেবার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং অবকাঠামো সংস্কার ও মেরামতে কার্যকর পদেক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৫. প্রয়োজনীয়তা যাচাই সাপেক্ষে কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. হাসপাতালে আয়-ব্যয় এবং ক্রয়সহ সকল কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে; একটি বার্ষিক ক্রয়-পরিকল্পনার তৈরি এবং সকল ধরনের ক্রয় নিয়ম মেনে সম্পাদন করতে হবে।
৭. হাসপাতালের বিভিন্নতথ্য স্ব-প্রণোদিত তথ্য প্রকাশ সম্পর্কে তথ্য অধিকার আইনের সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী প্রকাশ করতে হবে এবং কর্তৃপক্ষকে নিম্নোক্ত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে- হাসপাতালের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব নিশ্চিতে সকল ধরনের নথিপত্র সংরক্ষণ ও নিয়মিতভাবে বাৎসরিক ভিত্তিতে খ্যাতি সম্পন্ন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বাধীনভাবে নিরীক্ষা করতে হবে - প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়সহ প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে হবে - হাসপাতালের ওয়েবসাইটে প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সেবা সম্পর্কিত তথ্যের নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে - হাসপাতাল প্রদত্ত সকল সেবা, সেবা মূল্য, সেবা প্রদানের সময়সূচি ইত্যাদি উল্লেখপূর্বক একটি পরিপূর্ণ নাগরিক সনদ এবং সেই সাথে তথ্যবোর্ড প্রণয়ন এবং এটি হাসপাতালের প্রধান ফটকে প্রদর্শন করতে হবে; বিভাগ অনুযায়ী কর্তব্যরত চিকিৎসকের একটি পূর্নাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন ও প্রদর্শন করতে হবে - হাসপাতালের সেবা সম্পর্কে জনগণকে জানাতে এবং উৎসাহিত করতে প্রচার প্রচারণা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।
৮. চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি অনুযায়ী কর্ম সম্পাদনভিত্তিক বার্ষিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য দায়ীদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত করে কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. হাসপাতাল পরিচালনা ও তদারকিতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি স্বাধীন হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে।
১১. সেবাগ্রহীতা কর্তৃক অভিযোগ দাখিলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অভিযোগ নিরসণ করে সেবার মান উন্নয়ন করতে হবে।
১২. হাসপাতালের সকল ধরনের ক্রয়ে সংশ্লিষ্ট আদেশ ও নিয়ম-নীতি কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
১৩. হাসপাতালের সকল ধরনের নিয়োগ ও পদোন্নতি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, পক্ষপাতহীন এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পদান করতে হবে।
১৪. কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিক আচরন বিধি প্রবর্তন করতে হবে এবং এটি তাদের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ক্যাথলিক মেডিকেল মিশনারিজের মাধ্যমে ১৯৫৩ সালে (১৫ মার্চ) স্থাপিত হয়। ক্যাথলিক মেডিকেল মিশনারিজ ১৯৭১ সালে হাসপাতালটি ডিড অফ গিফট নং ৭৬৯৬/১৯৭১-এর আওতায় বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির কাছে হস্তান্তর করলে নামকরণ হয় হলি ফ্যামিলি রেড ক্রস হাসপাতাল। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার সোসাইটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি করার ফলে হাসপাতালের নাম পরিবর্তিত হয়ে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল হয়। ২০০০ সালে মেডিকেল কলেজে হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে এবং তখন থেকে এটি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে পরিচিত।