প্রত্যয় স্কিম বাতিলের আশ্বাস পাননি শিক্ষকরা
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা-

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত বা আশ্বাস মেলেনি। তবে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। এতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে শিক্ষক নেতারা এ কথা জানান।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী আমাদের যুক্তি শুনেছেন।
তিনি বলেন, তিন দফার মধ্যে বাকি যে দুটি দাবি শিক্ষকদের ছিল, সেগুলোও ইতিবাচকভাবে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এটির সমাধান তো উনি দেবেন না, দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিষয়গুলো আরও খোলামেলাভাবে প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করবেন। পরে হয়তো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আজকের আলোচনার পর আমরা দাবি পূরণের ব্যাপারে আরও বেশি আশাবাদী।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হতাহত হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক করার বিষয়ে শিক্ষক নেতারা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে কোনো দাবি বা পরামর্শ তুলে ধরেছেন কি না, তা নিয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক নিজামুল হক বলেন, এটা নিয়ে বৈঠকে কোনো কথা হয়নি। এটা তো সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছেই। সরকার শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে, নিহতদের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। এটা নিয়ে আমাদের তো আর কিছু বলার নেই।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও শাহজালার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, দেশ আজ চরম সংকটে উপস্থিত। এরপরেও প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক, শিক্ষার কথা বিবেচনা করে আমাদেরকে আলোচনার জন্য ডেকেছেন। দেশ, জাতীয় স্বার্থ সবার আগে। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব করতে হবে। এই সংকটের মধ্যে আমরা সবাই ইউনাইটেডলি দাঁড়াব। যত অপশক্তি থাকুক না কেন, দেশ বিদেশি যত ষড়যন্ত্র হোক না কেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। আর আমদের যে সমস্যা সেটা আমরা নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে সমাপ্তি করব।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকাসহ সারাদেশ যে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে চলে গিয়েছিল, সেখান থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করেছেন। শিক্ষার্থীদেরকে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে উদ্ধার করে তিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছেনে।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিক্রিয়াশীল উগ্র জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী আজকে শিক্ষার্থীদের লাশের উপর ও ব্যাপক আত্মত্যাগের উপরে ক্ষমতা দখলের হীন ও নৃশংস ষড়যন্ত্র করতে চেয়েছিল, সেটা তিনি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই প্রেক্ষিতে আজকে সম্মানিত শিক্ষক ম-লী মন্ত্রণালয়ে এসেছেন। আজকে শিক্ষকদের সাথে বৈঠক হলেও এ নিয়ে কোনো বিফ্রিং হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষকদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক সাবিতা রেজওয়ানা রহমান, ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক অব্দুর রহিম, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন ছিলেন বৈঠকে।