রংপুরে মির্জা আব্বাস: ভিক্ষা নয়, ভারতের কাছে পানির ন্যায্য হিস্যা চাই

রংপুরে মির্জা আব্বাস: ভিক্ষা নয়, ভারতের কাছে পানির ন্যায্য হিস্যা চাই

প্রথম নিউজ, রংপুর: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমরা বকশিস চাই না, ভিক্ষা চাই না; ভারতের কাছে পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। আমাদের হিসাবের পাওনা চাই, তা দিতে হবে। আজকে না হলে কালকে দিতেই হবে। পানি কখনও মারণাস্ত্র হতে পারে না। পানি কখনো যুদ্ধের অস্ত্র হতে পারে না। বিশ্বে একমাত্র ভারত দেখিয়ে দিলো, পানি তারা যুদ্ধের মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।  রবিবার (৪ মে) বিকালে তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গণ পদযাত্রার আগে নগরীর শাপলা চত্বরে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের কাছে ভারতের অনেক কিছু আছে। আমাদের কাছে ভারতের অনেক পোর্ট আছে। মংলা পোর্ট আছে, চট্টগ্রামে আছে। আমরা এগুলো হিসেব করবো। হিসেব করার সময় এসেছে। আমাদের তিস্তার পানি দিতে হবে। ফারাক্কার পানি চাই। দিতে হবে। যেখানে যেখানে পানি দরকার সেখানে সেখানে পানি দিতে হবে। শুধু সরকারের অপেক্ষায় আছি। কিছুদিন আগে যে সরকার ছিলো, তারা সরকারে থাকার ইচ্ছে থেকে ভারতের সঙ্গে এসব হিসেব করেন নাই।

তিনি বলেন, আমরা অনেক আগেই পানির ন্যায্য হিস্যা পেতাম। যদি হাসিনার মতো একটা সন্ত্রাসী সরকার না আসতো। এই পানি নিয়ে তারা ভারতের কাছে কিছু বলতে পারে নাই। 
এসময় তিনি আসাদুল হাবীব দুলুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দুলু উত্তরবঙ্গের একজন প্রতিবাদী মুখ। একজন কৃতি সন্তান। তাই দুলু তুমি সাবধানে থাকবে। কেননা ভারত কখনো এই ধরনের প্রতিবাদী মুখ সহ্য করতে পারে না। ইতিপূর্বে শুধু সুরমা নদীর বাঁধের জন্য আমাদের ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে। 

মির্জা আব্বাস এসময় তিস্তা নদী নিয়ে আন্দোলনের আয়োজনের প্রশংসা করেন এবং তিস্তা আন্দোলন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেন। গণ পদযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু, বিএনপি নেতা এমদাদুল হক ভরসাসহ অন্যান্য নেতারা।

এদিকে এই গণ পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে দুপুর ১টার পর থেকেই তিস্তা নদীবেষ্টিত বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে লোকজন আসতে শুরু করে। সময় যত বাড়ে লোকজনের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর এলাকা। সব শ্রেণিপেশার মানুষের যেন জনস্রোত। এতে বন্ধ হয়ে যায় সকল সড়কে যানবাহন। নগরীর প্রধান সড়কে তিস্তা বাচাই আন্দোলন গণ পদযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষ। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন আয়োজিত এ গণ পদযাত্রা রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে রংপুর জিলা স্কুল মাঠ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষক সংগঠন, শ্রমজীবী মানুষ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পদযাত্রাটিকে এক গণআন্দোলনে রূপ দেয়। এই গণ পদযাত্রায় তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে অংশ নেন নদীপাড়ের মানুষসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

এর আগে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তাপাড়ের মানুষজন ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দু’দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার ১১ পয়েন্টে তাঁবু খাটিয়ে একই সময়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

এতে সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাপনী অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে সবগুলো পয়েন্টে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ব্যতিক্রমধর্মী এই কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেন। এরপরেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত বিষয়টি আমলে নেয়নি।