অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায় নেবে না ইসি

প্রথম নিউজ, অনলাইন : রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার হয়েছে। গোপন কক্ষে একজনের বেশি প্রবেশ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি অনিয়মের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায় নেবে না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় দিকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙখলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে ব্রিফিং করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আবদুল বাতেন ও মহানগর পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা। রংপুর পুলিশ লাইনস মাঠে ব্রিফিংয়ে ভোটের পরিবেশ ও বিধি নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়। পুলিশি নিরাপত্তায় বিকেল ৫টার মধ্যে কেন্দ্রগুলোতে ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে যায়। আগেই কেন্দ্রগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। নগরীর সীমানায় সংযোগ সড়কে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মহানগর পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠ, উৎসব মুখর ও মডেল নির্বাচন করতে চান তারা। রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্র জানিয়েছে, এবার ভোটার ও কেন্দ্র সংখ্যা বেড়েছে। স্থায়ী ভোট কক্ষ করা হয়েছে এক হাজার ৩৪৯টি এবং অস্থায়ী ১৯৩টি। মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন, মহিলা দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন এবং হিজরা একজন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর আরো জানিয়েছে, ভোট অনুষ্ঠানের জন্য একজন রিটার্নিং কর্মকর্তার পাশাপাশি ১১ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, ২২৯ জন প্রিজাইটিং অফিসার, এক হাজার ৩৪৯ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, দুই হাজার ৬৯৮ জন পোলিং অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ প্রায় পাঁচ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, গোলাপ ফুল প্রতীকের খোরশেদ আলম খোকন, দেয়াল ঘড়ি প্রতীকের খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের শফিয়ার রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লতিফুর রহমান মিলন ও মেহেদী হাসান বণি মেয়র পদে এবং ১৭৮ জন সাধারণ এবং ৬৭ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৮৬টি কেন্দ্র। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আবদুল বাতেন বলেন, আমরা রংপুর সিটি করপোরেশেনে মডেল নির্বাচন করতে চাই। এজন্য নির্বাচনের সময় গোপন কক্ষে একজনের বেশি প্রবেশ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। ভোটগ্রহণের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে অতীতের চেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নিবে না। আর কেউ আইনশৃঙখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চাইলে তা জিরো টলারেন্সে দমন করা হবে। একটি অবাধ সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, আইনানুগ ও উৎসবমুখল ভোট হবে এটি। অন্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই নির্বাচনটি হবে একটি মডেল নির্বাচন।
ব্রিফিংয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নূরে আলম মিনা জানান, ভোটগ্রহণে পেশাদার আচরণ করতে হবে। অনেকে লোভ দেখাতে পারে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবধান থাকতে হবে। তিনিও ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নিবে না উল্লেখ করে বলেন, আমিসহ সকলের কার্যক্রম ভিডিও ধারণ করা হবে। কাজ শেষ হওয়ার পরও এর রেশ থেকে যাবে। চোখ-কান খুলে কাজ করতে হবে পেশাদারির সাথে। কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হলো কমান্ডার। তার সকল বৈধ ও আইনানুগ আদেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রথম সিটি করপোরেশনের ভোট উল্লেখ করে নুরে আলম মিনা বলেন, একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটারদের ভোটদান নিশ্চিত এবং নিরপেক্ষভাবে ফলাফল প্রদানের মাধ্যমে মডেল নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা প্রস্তুত। এজন্য যা যা প্রয়োজন, সেটি করা হবে।
সংযোগ সড়কে তল্লাশি চৌকি, বাইক চালানো নিষিদ্ধ :
সোমবার বিকেলের পর থেকে রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বর, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, লায়ন্স মোড়, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, মেডিকেল মোড়, টার্মিনাল, দর্শনা, মডার্ণ মোড়, সাতমাথাসহ নগরীর প্রতিটি সীমান্তের সংযোগ সড়কে তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহিদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। সন্দেহভাজন যানবাহনগুলোতে তল্লাশি চালানো হয়। বহিরাগত ঠেকাতে এই উদ্যোগের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়াও ভোটের দিন নগরীতে মোটরসাইকেল চালানোর ওপর নিষেধ্যাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ভুয়া প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আটক :
রংপুর মহানগরীর জোড় ইন্দ্রা মহিন্দা এলাকা থেকে লালটু ইসলাম রানা (৪১) নামে এক ভুয়া প্রিজাইডিং অফিসারকে আটক করেছে এলাকাবাসী। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আটক লালটু ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ধুপাউলা গ্রামের এন্তাজ জোদ্দারের ছেলে।
মাহিগঞ্জ মেট্রোপলিটন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মন্দিরপাড়া এলাকায় প্রিজাইডিং অফিসার পরিচয় দিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী সুলতান আহম্মেদের বাসায় যান লালটু ইসলাম। সেখানে গিয়ে তাকে দু`হাজার ভোটে নির্বাচিত করিয়ে দেয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। এ সময় তার কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হলে কাউন্সিলর প্রার্থী মাহিগঞ্জ থানায় খবর দেন। পরে তাকে আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে ভুয়া পরিচয়পত্র, নির্বাচন কমিশনের সিল এবং কিছু কাগজপত্র জব্দ করা হয়। এ বিষয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান ওসি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews