ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দিতে আপত্তি জার্মানির

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : টানা প্রায় দেড় বছর ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে জার্মানি।
ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করে একসঙ্গে অনেক মানুষকে আঘাত করা যায়। কারণ বোমার ভেতর রাখা অসংখ্য স্প্লিন্টার চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়ে শত্রুকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ইউক্রেনকে এই ধরনের ক্লাস্টার বোমা দিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু জার্মানি তা মানতে রাজি নয়।
এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার যাতে না হয় তার জন্য ২০০৮ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল। জার্মানি সেই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, এই ধরনের বোমা বেসামরিক মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কারণ এই বোমা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করে না। চারদিকে ছড়িয়ে যায়। ফলে এই বোমা ব্যবহার করলে বহু মানুষ আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন এবং সেখানে বেসামরিক মানুষও আক্রান্ত হতে পারেন।
রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার পর অভিযোগ উঠেছিল, বেশ কিছু জায়গায় রাশিয়ার সেনা ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এবার সেই ক্লাস্টার বোমা ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
অবশ্য ক্লাস্টার বোমাবিরোধী চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র নেই। ফলে ইউক্রেনকে এই ধরনের বোমা দিতে উত্তর আমেরিকার এই দেশটির আইনি কোনো সমস্যাও নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আবার সামরিক জোট ন্যাটোর অংশ। ন্যাটো ইউক্রেনকে কোনো অস্ত্র দিলে সেখানে ন্যাটোর সমস্ত দেশের সবুজসংকেত প্রয়োজন। ফলে জার্মানি সমস্যায় পড়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অবশ্য বিষয়টি থেকে দূরত্ব তৈরির কৌশল নিয়েছেন। বুধবার বার্লিনে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ক্লাস্টার বোমার পক্ষে কথা বলেছে।
জার্মানি যে অবস্থান নিতে চলেছে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র একটি সার্বভৌম দেশ। ইউক্রেনকে ব্যক্তিগতভাবে তারা এই বোমা দিচ্ছে। জার্মানি এই বোমা সমর্থন করে না ঠিকই, কিন্তু তারা নিষেধ করার জায়গাতেও নেই।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনকে কী ধরনের অস্ত্র দেওয়া হবে, তা নিয়েও রীতিমতো সমস্যায় পড়েছিল জার্মানি। প্রাথমিকভাবে জার্মানির অভিমত ছিল কেবলমাত্র রক্ষণাত্মক অস্ত্রই দেওয়া হোক ইউক্রেনকে। পরে অবশ্য তারা আক্রমণাত্মক অস্ত্রও দিয়েছে। এবার ক্লাস্টার বোমা নিয়ে সেই একই সমস্যায় পড়েছে জার্মানি।
কেন ক্লাস্টার বোমা প্রয়োজন
ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের অস্ত্র এবং গোলা-বারুদ দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজন মতো অস্ত্রের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র তৈরির সবচেয়ে বড় দেশ। তারাও ইউক্রেনকে অস্ত্র জোগান দিয়ে উঠতে পারছে না।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ক্লাস্টার বোমা দিতে চাইছে ইউক্রেনকে। কারণ এই বোমা একসঙ্গে অনেককে ঘায়েল করতে পারে। এছাড়া ইউক্রেন নিজেও এই বোমা হাতে পেতে উৎসাহী।
ন্যাটোর সাম্প্রতিক সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর অস্ত্রের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে জার্মানি। কিন্তু সেই অস্ত্র কতদিনে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়াকে পরাজিত করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব তাদের আরও অস্ত্র প্রয়োজন।