একমাত্র মেয়েকে জীবিত ফেরত চান মা
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান নিখোঁজ ইয়াশা মৃধা সুকন্যার মা নাজমা ইসলাম লাকী।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া নিখোঁজ ইয়াশা মৃধা সুকন্যাকে জীবিত ফিরে পেতে চান তার মা নাজমা ইসলাম লাকী। ইশতিয়াক আহমেদ চিশতী মজুমদার নামের এক ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মামলা করেন তিনি। মামলার তদন্তের অগ্রগতি না দেখে হতাশা ব্যক্ত করেন নিখোঁজ ইয়াশার মা। বিচার না পেলেও শুধু মেয়েকে জীবিত ফেরত চান তিনি।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান নিখোঁজ ইয়াশা মৃধা সুকন্যার মা নাজমা ইসলাম লাকী। সংবাদ সম্মেলনে নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, আমি মেয়ের সন্ধান চাই। আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আমার মেয়ের নাকি মানসিক সমস্যা। আবার ফোনে ম্যাসেজ আসে আমার মেয়েকে নাকি মিরপুর ১ কখনো মিরপুর ১০ এ কখনো মিরপুর ১৪তে নাকি দেখা গেছে। আমরা সেখানে গিয়ে কোনো খোঁজ পায়নি। সংশ্লিষ্ট থানা থেকেও বলছে এই ধরনের মেয়ে এলাকায় ঘুরতে দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন আমার মেয়ের নাকি মানসিক সমস্যা। অথচ ইশতিয়াক আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে, সিসিফুটেজেও সেটা দেখেছি। সেও বলেছে আমার মেয়ের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করেছে। মেয়েকে কি করেছে কোথায় দিয়েছে সে বিষয়টি বলছে না। আমি আমার মেয়েকে জীবিত অবস্থায় শুধু ফিরে পেতে চাই। কোনো বিচার চাই না, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাই না।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, আমার স্বামী লন্ডন প্রবাসী জুনায়েদ জাহাঙ্গীর। ঢাকায় আমার স্বামীর পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছি। আমাদের একমাত্র মেয়ে ইয়াশা মৃধা সুকন্যা চলতি বছর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমার মেয়েকে আমি সব সময় কলেজে নিয়ে যেতাম এবং সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে আসতাম। খুব মেধাবী ছাত্রী আমার মেয়ে। মেডিকেল এ পড়ার ইচ্ছে ছিলো ছোট থেকেই। গত ২৩ জুন আমার মেয়েকে মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে কলেজে নিয়ে যাই। বেলা সাড়ে ১২ টায় মেয়ে কলেজে প্রবেশ করে। বরাবরের মতো আমি কলেজের বাহিরে অভিভাবকদের বসার কক্ষে অপেক্ষা করি। মেয়ের পরীক্ষা শেষ হবার কথা বেলা ৩ টায়। সব ছাত্রীরা যখন পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে আসে আমার মেয়ে বের হয়নি। মেয়ের বান্ধবীদের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে না পারায় আমি বিকেল ৪ টায় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানাই। পরে তারা আমাকে জানায় আমার মেয়ে সেদিন পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলো। পরে আমি অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও আমার মেয়েকে পাইনি। আমার মেয়ের মোবাইল আমার কাছে দিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলো।
মেয়েকে না পেয়ে আমি আমার মেয়ের ফোন চেক করতে থাকি। সেখান থেকে ইশতিয়াক নামের একটা ছেলের সঙ্গে কথোপকথন দেখতে পাই। পরে রমনা মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানাই ও একটি মামলা দায়ের করি। পুলিশ আমার মেয়ের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সেই ছেলের নাম্বার নিয়ে ছেলেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কল দিলে ছেলের বড় ভাই ধরে। পুলিশ তাকে বিষয়টা জানায় এবং বলে আপনার ভাইকে বলেন মেয়েটাকে নিয়ে যাতে রমনা মডেল থানায় আসে। পরবর্তীতে সেই নাম্বার বন্ধ করে দেয় আবার চালু করে আবার বন্ধ করে দেয়। এর কিছুক্ষণ পরে রাত ৮.৩৯মিনিটে আমার মোবাইলে থাকা আমার মেয়ের ফেসবুক আইডি থেকে মেসেজ আসে মা আমি বাসায় আসতেছি তুমি চিন্তা করো না। পরবর্তীতে জানতে পারি আমার মেয়ে নয়, ইশতিয়াক সেই মেসেজ করেছে। পুলিশ আমাকে জিডি করতে বলে আমি একটি জিডি করি।’
তিনি বলেন, আমরা বাসায় চলে আসার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পুলিশ ১০.৪০ এ কল দিয়ে বলে আপনি মগবাজার বটতলায় আসেন আপনার মেয়েকে নিয়ে ছেলে আসতেছে। কিন্তু ছেলে আসেনি। তারপর রাত ১১.৩০ মিনিটে আমার ফোনে কল আসে আমি কল রিসিভ করার পরে আমাকে বলে আন্টি ইয়াশা কি বাসায় ফিরেছে তখন আমি বলি কি করে ফিরবে আমার মেয়ে তো তোমার সঙ্গে আছে। এই কথা বলে আমি পুলিশকে ফোনটা দিয়ে দেই। পুলিশ আসামীকে বলে মেয়েকে নিয়ে আসতে, তা না হলে ভালো হবে না। ছেলে বলে আমি ২০ মিনিটের মধ্যে আসতেছি। কিন্তু পরে সেই নাম্বারটি বন্ধ করে দেয়। সেদিন সেই নাম্বার এর তথ্য বের করে দেখি সিম যার নামে নিবন্ধন করা সে থাকে ডেমরাতে। আমি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ নিয়ে ডেমরাতে চলে যাই কিন্তু গিয়ে দেখি ঠিকানা ভুল ছিলো পরে আমরা বাসায় চলে আসি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইয়াশার মা আরও বলেন, পরের দিন ২৪ জুন সকাল বেলা পুলিশ সেই ছেলেকে থানায় ডেকে আনে। তখন ওই ছেলে তার বন্ধু সালমানকে নিয়ে আসে। ইশতিয়াক সেই দিন রাতে তার বন্ধু সালমানের বাসায় ছিল। সালমানের কথা অনুযায়ী রাতে যখন ইশতিয়াক তার বাসায় যায়, তখন সে অনেক চিন্তিত ছিলো ও ঘামছিলো। সালমান চিন্তিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সেও কিছু বলেনি।
‘২৪ তারিখ বিকেলে ছেলের সেই বন্ধু সালমানকেও পুলিশ গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে জানতে পারি আমার মেয়েকে নিয়ে ছেলে গেন্ডারিয়াতে গিয়েছে সেখানে শশ্মান ঘাটে গিয়ে মুড়ি ভর্তা, বার্গার খেয়েছে। গেন্ডারিয়ার সিসি ফুটেজে দেখা যায়, ছেলে-মেয়ে এক সঙ্গে রিকশায় ছিল। রাত ৮.০৩ মিনিটের ফুটেজে দেখতে পারি আমার মেয়ে একা ছিল রিক্সায়। কিন্তু ফুটেজ এ দেখা যায় আমার মেয়ের হাতে একটা ফোন ছিল সেটা কার ফোন? কারণ মেয়ের ফোন তো আমার কাছে। ফুটেজে দেখা যায়, ইয়াশা ফোনে কথা বলছে আর রিকশা দিয়ে যাচ্ছে। রিকশা থামিয়ে পিছনের দিকে তাকাচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজের দুই রিকশা পরে ইশতিয়াককে দেখা যায়। পুলিশকে বলা হয়েছে সামনের সিসিটিভির ফুটেজগুলো বের করার জন্য কিন্তু তারা করেনি। পরবর্তীতে ২৭ জুন ওই ছেলের রিমান্ড চাওয়া হয়। কিন্তু সেটাও কার্যকর হয়নি। আমরা কোন কিছু জানতে পারিনি।
পুলিশ তদন্তে সহযোগিতা করছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, পুলিশ আমাদেরকে পাঁচ দিন ধরে শুধু থানায় বসিয়ে রেখেছে, আর বলেছে, তদন্ত করছি আপনারা বসে থাকেন। এই ভাবে পুলিশের কাছে কয়েক দিন চলে যায় কিন্তু আমরা কিছু জানতে পারিনি। ছেলে আমাকে একটা কথাই বলেছে আন্টি আপনার মেয়ে চলে আসবে কিন্তু আজও আমার মেয়ে আসেনি। ৭ জুলাই ছেলের বন্ধু সালমান জামিন পায়। আর ইশতিয়াক কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে।
পুলিশের কাছে তেমন সাহায্য না পেয়ে আমরা গত ১৯ জুলাই মামলাটি ডিবিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত দায়িত্ব পায় ডিবির রমনা বিভাগ। মামলাটি ডিবিতে যাওয়ার পরে আমাদের ডিবি অফিসে ডেকে সব তথ্য নেয়। কিন্তু এক মাস ১৬ দিনেও মেয়ের কোনো সন্ধান পাচ্ছি না। আমরা কারো কাছে কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। ডিবি এবং পুলিশ একই কথা বলছে। তারা কাজ করছে....। আমি শুধু আমার মেয়েটাকে ফিরে পেতে চাই। ডিবি বার বার বুঝাতে চাচ্ছে আমার মেয়ের মাথায় সমস্যা ...। সেটা কেন বলছে তা আমরা জানি না। আমরা কারো সাহায্য পাচ্ছি না। এক মাস ২৭ দিন ধরে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি শুধু মেয়েটাকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে চাই।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইয়াশার মামা দিদারুল ইসলাম, চাচা, শিক্ষিকা ও বান্ধবীরা।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews