নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা সভা করতে দেয়নি ঢাবি প্রশাসন

আলোচনা সভা শুরুর ত্রিশ মিনিট আগে দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটের দিকে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল বাছির ফোন দিয়ে আলোচনা সভা না করার অনুরোধ করেন।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা সভা করতে দেয়নি ঢাবি প্রশাসন

প্রথম নিউজ, অনলাইন: জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা সভা আয়োজনের জন্য অনুমতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত সেটি আয়োজন করতে দেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক নেটওয়ার্ক সংশ্লিষ্টরাও বলতে পারেননি কেন অনুষ্ঠান করতে দেয়া হয়নি। গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার অডিটোরিয়ামে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: আমরা কেন উদ্বিগ্ন?’ শীর্ষক একটি উন্মুক্ত আলোচনা সভা হওয়ার কথা ছিল। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের আওতাধীন।

আয়োজকরা জানান, আলোচনা সভা শুরুর ত্রিশ মিনিট আগে দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটের দিকে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল বাছির ফোন দিয়ে আলোচনা সভা না করার অনুরোধ করেন। এরপর আলোচনা সভার ভেন্যুটিও খোলা হয়নি। পরে সেখানেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন শিক্ষক নেটওয়ার্কের শিক্ষকরা। এরপর বেলা ৩টার দিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা। এ বিষয়ে আয়োজকদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন,  প্রোগ্রামের জন্য এই অডিটোরিয়ামটি আমাদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শুরুর আধা ঘণ্টা আগে আমাকে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির ফোন দেন। তিনি বলেছেন, এই ভেন্যুতে আমাদের দেয়া বুকিং ক্যানসেল করা হয়েছে। 

আমরা যেন প্রোগ্রামটি না করি। তানজিম উদ্দিন বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ তিনি আমাকে বলেননি। তবে বলেছেন, এক জায়গা থেকে তিনি ফোন পেয়েছেন। ‘ওই জায়গার পক্ষ থেকে নাকি বলা হয়েছে, আমাদের যেন স্পেসটি ব্যবহার করতে না দেন। এরপর তিনি আমাকে বলেছেন, যেহেতু ফোন এসেছে সেহেতু ঝামেলা হতে পারে। আপনাদের অনুরোধ করবো আপনারা যেন প্রোগ্রাম না করেন।’

ড. তানজিম আরও বলেন, বুকিং বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে রেকর্ড। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনার পরিপন্থি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩-এর লঙ্ঘন। অনুমতি দিয়েও হঠাৎ করে বুকিং বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনার কারণে ভেন্যু বাতিল করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, কর্মসূচিতে সরকারবিরোধী কার্যকলাপ ঘটবে। আমরা তাদের অনুমতি দিতে পারি না।

নতুন শিক্ষাক্রমের সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘আমরা অভিভাবক, শিক্ষক এই শিক্ষাক্রমের ভোক্তা। কারণ, বিদ্যালয়ের এই শিক্ষাক্রম পড়ে তারা (শিক্ষার্থী) আমার ছাত্র হবে। আমাদের উদ্বেগ আছে।’

অধ্যাপক মামুন আরও বলেন, ‘অসুবিধা ছিল অনেক, আপনারা তো সেদিকে নজর দেননি। এই দেশের শিক্ষায় অনেক সমস্যা। তার মধ্যে শিক্ষাক্রম হলো সর্বশেষ সমস্যা। এটির জন্য কেউ দাবি করেননি। সমস্যা হলো, আপনারা ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেননি, শিক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেননি। সমস্যা হলো, স্কুল-কলেজে দুষ্টু রাজনীতি ঢুকিয়েছেন ব্যবস্থাপনার নামে। প্রতিটি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার খপ্পরে পড়ে গেছে। ভালোমানের শিক্ষক নিয়োগ দেবেন না, আপনি ভাবছেন, খোলস বদলালে সব ঠিক হয়ে যাবে?’ প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসির আহমেদ ও সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের নেতা রাখাল রাহা।

রাখাল রাহা বলেন, কারিকুলাম নিয়ে কথা বলার জন্য, নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলার জন্য অভিভাবকদের বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে, তাদের আটক করেছে, ২৪ ঘণ্টা গুম করে রেখে তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে এরপর তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর না করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

অধ্যাপক নাসির আহমেদ প্রশ্ন রাখেন, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি ছাত্র ছিলাম। শিক্ষকতাও করেছি। এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। বুয়েটে পড়িয়েছি। এসব প্রতিষ্ঠানে বেশির ভাগই আসে বাংলা মিডিয়াম থেকে। ইংলিশ মিডিয়াম থেকে খুব কম শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে। সমস্যাটা তাহলে কোথায়- বাংলা মিডিয়ামে না ইংলিশ মিডিয়ামে?